মোঃ আক্তার হোসেনঃ
করোনাযুদ্ধে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য জেনেশুনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে করোনায় জীবন উৎসর্গকারী প্রথম সাংবাদিক ও পুলিশ কুমিল্লার সন্তান। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) রাত পোনে ১০টায় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন এবং রাত ১০টায় পুলিশের কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৩৯) করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সমাজের সকল পেশার মানুষই করোনা মোকাবিলায় কাজ করছে যাচ্ছে। কিন্তু এদের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সাংবাদিকেরা অপরিসীম দায়িত্ব পালন করেন। করোনা থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে সাংবাদিকেরা নানাভাবে জনসাধারণকে সচেতন করে যাচ্ছেন এবং নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষকে তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
তাদের মধ্যে দৈনিক সময়ের আলোর সিটি এডিটর ও চিফ রিপোর্টার এবং ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন (৫০) করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাত পোনে ১০টায় রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মারা যাওয়ার পর তার রিপোর্ট আসলে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রাজাচাপিতলা গ্রামের কৃতিসন্তান এবং দেবিদ্বার সুজাত আলী সরকারী কলেজের ছাত্র ছিলেন।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে মরদেহ মুরাদনগরের রাজাচাপিতলা গ্রামে স্বল্প সংখ্যক লোকের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও বিনয়ী হিসেবে সুপরিচিত খোকন।
অপরদিকে করোনায় মারা যাওয়া ব্যাক্তিদের জানাজা, দাফন ও পলাতক রোগীদের ধরে আনাসহ করোনার এই ক্রান্তিকালে বিভিন্ন জনবান্ধব কাজে জড়িয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। করোনা বিস্তাররোধে প্রতিটি কাজেই মানুষের খুব কাছে যেতে হচ্ছে পুলিশকে। এসব কাজের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
করোনাযুদ্ধে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য জেনেশুনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে আসা পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে প্রথম জীবন দিলেন কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৩৯)।
ওয়ারী ফাঁড়িতে দায়িত্বরত থাকার সময় করোনায় সংক্রমিত হন কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। গত ২৪ এপ্রিল তার শরীরে প্রথম করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় তিনি মারা যান।
বুধবার পরীক্ষার রিপোর্ট আসে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহমেদ। কনস্টেবল জসিম উদ্দিন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামের সন্তান। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
বুধবার বাদ আছর জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রাামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে ঢাকা থেকে পুলিশের একটি বিশেষায়িত এ্যাম্বুলেন্স যোগে জসিমের মরদেহ গ্রামে আনার পর কঠোর স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্য দিয়ে কয়েকজন নিকটাত্বীয়সহ ১৩ জনের অংশ গ্রহণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জসিম ওই গ্রামের মৃত খালেক মিয়ার পুত্র।