পাখির কলকাকলিতে মুখরিত নাসিরনগর থানা প্রাঙ্গণ

আকতার হোসেন ভুইয়া,নাসিরনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) :—
অবাধে বনউজাড় আর শিকারীদের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে নানা জাতের পাখি। মানুষ চিরকালই সৌন্দের্যের পূজারী। অজানাকে জানা মানুষের চিরন্তর স্বভাব। সুন্দরকে ভালবাসা নতুনকে আবিস্কার করতে আবহমানকাল থেকেই মানুষ ছুটে চলেছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সৌন্দর্য-পিপাসু মানুষের এ অদম্য উৎসাহ এখন হাওর বেষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানা কম্পাউন্ডারের গাছপালা। গত এক দশক যাবত নাসিরনগর থানা চত্বরের গাছে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিন পাখিদের ডাকে মুখরিত হয়ে উঠে আশেপাশের এলাকা। পুলিশি প্রহরা আর শিকারী মুক্ত নিরাপদ পরিবেশ পেয়ে থানার ভেতরের গাছগাছালিতে পাখির অভয়াশ্রম রয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশও তাদের সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। দিনের শেষে মানুষেরা যেমনটি হয় ঘরমুখী তেমনি আপন নীড়ে ফিরতে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে পাখিগুলো। ওদেরকে স্বাগত জানাতে ব্যস্থ হয় গাছগুলোও। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা যেমনি জমে উঠে ঠিক তেমনি মানুষের সাথে পাখির যে ভালবাসা এমনি একটি চিত্র ফুটে উঠেছে নাসিরনগর থানা চত্বরে। এ উপজেলায় শাপলা ও মেদির হাওর ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য বিল ও নদী। বর্ষা মৌসুমে এসব জলাশয়ে মাছ,ব্যাঙ ও শামুকসহ প্রাকৃতির খাবারের উৎস থাকায় পাখিদের অবাধ বিচরণ রয়েছে পুরো এলাকা জুড়ে। ঘুঘু,সাদা বক,পানকৌড়ি,বালিহাঁস,ডাকহু,মাছরাঙা,শামুকখোলসহ নাম না জানা অনেক পাখি হাওরে চষে বেড়াচ্ছে। এদের একটি অংশ পানকৌড়ি ও বক জাতীয় কয়েক প্রকারের পাখি নিরাপদ আবাস্থল হিসেবে নাসিরনগর থানা কম্পাউন্ডারের গাছপালাকে বেছে নিয়েছে। মূল গেট থেকে শুরু করে পূর্ব পাশের ওসির বাসভবনের পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে অনেক গাছ। আর এই গাছগুলোই হয়ে উঠেছে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়। আর থানা অভ্যন্তরের ওসিসহ পুলিশ সদস্যরাও পাখিদেরকে অতিথির মর্যাদায় আপন করে রেখেছেন। ভোর হওয়ার সাথে সাথে খাবারের সন্ধানে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে গেলেও বেলা শেষে আবারও তারা রাতের আধাাঁরে আকাশ জুড়ে আশ্রমে ফিরে আসে। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবদুল কাদের জানান, পাখি আমাদের থানা কম্পাউন্ডকে সুন্দর করে তুলেছে। পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে তাদের। কেউ যাতে পাখিদের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের পাখি সুরক্ষা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া পাখিদের আশ্রয়স্থলটি নিরাপদ করতে ও তাদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য থানা এলাকায় পাখি থাকাকালে কঠোর নজরদারি থাকে পুলিশের। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, হাওর ও জলাশয়ে প্রাকৃতিক খাবারের ভাল উৎস থাকায় এ উপজেলায় পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে। নাসিরনগর থানায় গিয়ে দেখা যায় পাখিদের ছুটাছুটি আর কলকাকলি। একটি দু’টি নয় হাজারো পাখির মিলনমেলা। তবে পানকৌড়ির সংখ্যাই বেশী। যেন অন্য রকম এক দৃশ্য। এ পাখির রাজ্যে গেলে যে কারও মন পুলকিত হবে। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদ বলেন,একসময়ে বিভিন্ন খাল-বিল ও মাঠেঘাটে প্রচুর পরিমানে পানকৌড়ি,ডাকহু ও বকসহ নানা জাতের দেশীয় পাখির অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় পাখির কয়েকটি জাত প্রায় বিলুপ্তির পথে। ঝাকেঁ ঝাকেঁ বক আর পানকৌড়ির বসবাস এখন আর দেখা যায় না। থানা কম্পাউন্ডারের গাছপালা আশ্রয় নেয়া পাখি রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসির সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

Check Also

আশুগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামির মরদেহ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :– ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মো. হারুন মিয়া (৪৫) নামে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির ...