বারী উদ্দিন আহমেদ বাবর :–
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিল ও সম্মেলনকে ঘিরে দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। সভাপতি-সম্পাদক পদের প্রার্থীতা বাতিলকে কন্দ্রে করে এ বিভক্তি সৃষ্টি হয়। প্রার্থীতা বাতিলের প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ভাংচুর করেন তারা। সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত কাউন্সিলর তালিকা তৈরী, প্রার্থীতা বাতিল ও বহাল রাখতে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম করার অভিযোগ করে ‘সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন কমিশনের’ বিরুদ্ধে বুধবার রাত ৯টায় স্থানীয় সাংসদ ও সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামালের বরাবরে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক শাহ খোরশেদ আলম মজুমদারের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এতে নেতাকর্মীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন নাঙ্গলকোট পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন সোহাগ।
জানাগেছে, ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই সর্বশেষ নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ৮ বছর পর বহু প্রতিক্ষিত এ সম্মেলন ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এ উপলক্ষে উজ্জিবিত ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মী। স্বতঃস্পূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করার প্রত্যাশা কর্মীদের। তবে অনেক নেতাকর্মীর মাঝে এ প্রত্যাশায় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে বয়স, স্বজনপ্রীতি ও নির্বাচন কমিশনের অনিয়ম। যার প্রতিবাদ স্বারকলিপির মাধ্যমে জানিয়েছে নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, বিএনপি থেকে আসা আ’লীগ নেতা নুরুল্লাহ মজুমদারের প্ররোচনায় বয়সের অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন মোশারফ হোসেন মানিক ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন-আহবায়ক আ.জ.ম রাসেলের সভাপতি পদের প্রার্থীতা বাতিল করেছেন। এ পদে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয় ৬ জন। এরমাঝে ৪ জনের প্রার্থীতা বহাল রাখা হয়। ওই ৪ জনের একজন ২ সন্তানের জনক ইকবাল হোসেন মজুমদার। আর সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন জমা করেন ১৭ জন। এরমধ্যে ২ জনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। এরা হলেন বোরহান উদ্দিন ভুঁইয়া ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন-আহবায়ক মো. শাহাজাহান সাজু। এ পদে বৈধ প্রার্থীদের মাঝে আবু বকর ছিদ্দিক, ইব্রাহীম আল হাচান, মাঈন উদ্দিন ভুঁইয়া ‘বিবাহিত’ মহিন উদ্দিন সরকারী চাকুরীজীবি ও সৈকত হোসেন শিমুল অছাত্র বলে জানা গেছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনাকে অমান্য করে অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিল। এ কাউন্সিল প্রত্যাখান করে বুধবার বিকেলে নাঙ্গলকোট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বাদপড়া নেতাদের অনুসারীরা। ওই মিছিল থেকে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ভাংচুর করেছেন বিক্ষুদ্ধরা।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ২৯ বছর। এবং ছাত্রলীগের কমিটিগুলো ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যন্ত বৈধ ছাত্রলীগ নেতাদের দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা অনুসরন করা হয়নি। নিয়ম থাকা সত্বেও আ’লীগ নেতাদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে ছাত্রলীগ কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়াও কাউন্সিলরদের তালিকা তৈরী করবে সংশ্লিষ্ট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক। এবং তা অনুমোদন করবে উপজেলা ছাত্রলীগ। এখানে এ নিয়ম মানা হয়নি। এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভাসহ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন ও অনুমোদন করেছে স্থানীয় আ’লীগ নেতারা। যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। নেতাকর্মীদের দাবি, এসব অনিয়ম বন্ধ করে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণঃগঠন, কাউন্সিলরদের তালিকা পুনঃতৈরী করে কাউন্সিল ও সম্মেলন দেয়া হোক।
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক শাহ খোরশেদ আলম মজুমদার বলেন, ইউনিয়ন কমিটিগুলো অনুমোদন করেছে আ’লীগ নেতারা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। এছাড়া কাউন্সিল বা সম্মেলনের সমন্বয়কারী হিসেবে গঠিত নির্বাচন কমিশন আমার সাথে কোন ধরনের সমন্বয় করেনি। বিভিন্ন ইউনিয়ন কাউন্সিলরদের তালিকায় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অছাত্র ও বিবাহিতদের নাম রয়েছে। তিনি আরো বলেন, গঠিত নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি বলে আমি মনে করি।