আকবর হোসেন, মনোহরগঞ্জ প্রতিনিধি:–
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের ভরনীখন্ড গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত সর্দার আবদুল কাদের বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ায় মনোহরগঞ্জবাসীর মনে স্বস্থি ও শান্তি ফিরে এসেছে। কাদের বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল পুরো মনোহরগঞ্জবাসী। কাদের বাহিনীর ভয়ে মনোহরগঞ্জের জনগণ সব সময় আতঙ্কে থাকত। ডাকাত কাদেরের নিহত হওয়ার খবর শুনে মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর হাওলা ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো জায়গায় আনন্দ মিছিল করেছে মনোহরগঞ্জবাসী। মনোহরগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করত কাদের বাহিনী। কিন্তু গত শনিবার ভোর রাতে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার ঢাকা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহা সড়কের পেরুল ইউনিয়নের ফয়েজগঞ্জ এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির চেষ্টা কালে গোয়েন্দা পুলিশের সাথে ডাকাত দলের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আন্তঃ জেলার ডাকাত দলের সর্দার আবদুল কাদের নিহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ ৮ ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে। নিহত আবদুল কাদের মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের ভরনীখন্ড গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়, গত শনিবার ভোর ৪ টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তবর্তী লাকসাম শহরের ঐ সড়কে ১০/১২ জনের একদল ডাকাত যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে ঐ সড়কে টহলরত জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ ও এসআই শহিদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছলে ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকাত আবদুল কাদের (৩৫) মারাত্মক আহত হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এসময় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ, এসআই মাহফুজুর রহমান, কনস্টেবল স্বপন কুমার দেব সহ তিন পুলিশ আহত হন এবং ডাকাতদের মধ্যে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন নেয়ামত উল্লাহ, সৌরভ ও জাহাঙ্গীর। আহতরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি সহ আন্তঃ জেলা ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য মনোহরগঞ্জ উপজেলার গোয়ালিয়ারা গ্রামের মৃত বজলুর রহমানের পুত্র নেয়ামত উল্লাহ (৩৪), দিশাবন্দ গ্রামের সৈয়দ আহম্মেদের পুত্র শহিদুল ইসলাম (৩৫), নজির আহম্মেদের পুত্র জামাল উদ্দিন (২৫), আরব আলীর পুত্র সৌরভ চৌধুরী (১৮), তাহেরপুর গ্রামের শামছুল হক মোল্লার পুত্র জুয়েল (২০), আবদুল মতিনের পুত্র বাবলু (৩০), চাঁদপুর জেলা সদরের ষোলঘর গ্রামের বিল্লাল গাজীর পুত্র জাহাঙ্গীর গাজী (৩০) ও কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার খৈচাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র নোমান মিয়া (২৯) কে আটক করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১টি মাইক্রোবাস, ৩টি এলজি, ১টি শর্টগান, ৩টি ছুরি, ৫ রাউন্ড গুলি ও মুখোশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ জানান, এ ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ মহাসড়ক সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল, তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম বেশ কিছুদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। নিহত ডাকাত আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৫টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, ডাকাত কাদের দীর্ঘদিন এলাকার বাহিরে ছিল। বিগত ১ বছর থেকে সে এলাকায় ফিরে এসে একদল ডাকাত নিয়ে দিন দুপুরে রাস্তায় টহল দিত। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরী হতো। গ্রামে ডাকাত আবদুল কাদেরের ৩টি স্ত্রী রয়েছে। এছাড়াও তার মা বাব ও দুই ভাই রয়েছে। সে বাড়িতে বিল্ডিং করেছে। ঘটনার পর পুলিশ তার বাড়িতে গেলে বিভিন্ন স্থানে লাঠি-ছোটা পড়ে থাকতে দেখতে পায়। পুলিশ তার বাড়িতে তেমন কিছু উদ্ধার করতে পারেনি বলে জানান। মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ ইতোমধ্যে তাকে আটক করতে একাধিক বার তার ভরনীখন্ডের বাড়িতে হানা দেয়। অবশেষে সে গোয়েন্দা পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ায় এলাকায় স্বস্থি ফিরে এসেছে। এই কুখ্যাত ডাকাতের মৃত্যুতে মনোহরগঞ্জবাসী খুবই আনন্দিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ডাকাতের উৎপাত হলে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
