নাঙ্গলকোটে নীতিমালা উপেক্ষা করে ইউনিয়ন বিক্তক্তির পায়তারা

 

মো. আলাউদ্দিন, নাঙ্গলকোট :–
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সরকারি নিয়মনীতি না মেনেই উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ বিভক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ বিভক্ত করণের নীতিমালা মানছেন না খোদ স্থানীয় প্রশাসন। ৪টি ইউনিয়ন ভেঙ্গে ৮টি ইউনিয়নে রূপান্তর করনের ফাইল স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন হতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন পেলে যেকোন মূহুর্তে ওই ৪টি ইউনিয়ন ভেঙ্গে ফেলা হবে। ইউনিয়ন গুলো হলো- উপজেলার ৩নং রায়কোট, ৬ নং আদ্রা, ৭নং জোড্ডা ইউনিয়ন ও ৯ নং দৌলখাঁড় ইউনিয়ন পরিষদ।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দিকে ইউনিয়ন পরিষদ ভাগের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু কোন কারণে কেন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা জানাতে পারেননি উপজেলা প্রশাসনের আধিকারীকরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র ও স্থানীয় ক্ষমতাশীন দল সমর্থিত কয়েকজন নেতা জানান, সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ আ.হ.ম মুস্তফা কামালের নির্দেশনায় ইউনিয়নগুলো বিভক্তি করা হচ্ছে। জনবিদ্বেষী এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে তারা তোয়াক্কা করছে না স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন। প্রশাসনের হটকারী এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ঝরছে স্থ্ানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। তাদের (জনগণ) দাবি, কৃষি প্রধান এসব ইউনিয়ন বিভক্তি হলে, দরিদ্র কৃষকের কাধেঁই অধিকতর করের বোঝা চাপানোসহ নানা ঝামেলায় পড়বে সাধারণ জনতা। কমবে নাগরিক সুবিধা। ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হতে হবে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের। তাদের মতের মূল্য না দিয়ে এমন ইউনিয়ন বিভক্তি মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দারা। বিধি মতে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ২০০২ সালের ২৫ আগষ্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পূর্বেকার নীতিমালা বাতিল করে ইউপি বিভক্ত করণের নতুন নীতিমালার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১১(৪) এর ক্ষমতাবলে সরকার ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে সু-স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনা মতে, কোন নতুন বা পুরোনো ইউনিয়ন পূনঃগঠন করতে হলে ওই ইউনিয়নে কমপক্ষে ২০ হাজার জনসংখ্যা হতে হবে এবং আয়তন হবে ২০ বর্গ কিলোমিটার। এবং ইউনিয়নের বাৎসরিক নিজস্ব আয়ের পরিমাণ হতে হবে নূন্যতম ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা। সংশি¬ষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদন করলে তিনি জনসংখ্যা, আয়তন, বাৎসরিক আয়ের উৎস ইত্যাদি সম্পর্কিত শর্ত পূরণ হওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম প্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট প্রস্তাব পাঠাবেন। জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসার থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাব সম্পর্কে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১১ অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এছাড়া যে ইউনিয়ন বিভক্তি করা হবে সে ইউনিয়নের জনগোষ্ঠীকে অবহিত করে তাদের মতামত জানতে হবে। যদি কোন আপত্তি থাকে তাহলে এ বিষয়ে শুনানী গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। এবং শুনানীর কার্যক্রম রেকর্ড সংরক্ষণ করে সিদ্ধান্তের অনুকূলে যৌক্তিকতা সু-স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
আরো জানা গেছে, নাঙ্গলকোট উপজেলার যেসব ইউনিয়ন বিভক্তি করণের জন্য মন্ত্রনালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে, সেসব ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদ। বর্তমানে মাত্র ১১.৮৮৪ বঃকিঃ আয়তন নিয়ে আদ্রা উত্তর ও ১৩.৪৫২ আয়তন নিয়ে আদ্রা দক্ষিণ বিভক্তকরণের চেষ্টা চলছে। এছাড়া প্রস্তাবনায় আদ্রা উত্তর ইউনিয়নের জনসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৪’শ ২২ জন এবং আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের জনসংখ্যা উলে¬খ করা হয়েছে ১৯ হাজার ১’শ ৪৮ জন। যা সকল ক্ষেত্রেই সরকারি নিয়মনীতি ভঙ্গ করে মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। এতে ক্ষোভের অন্ত নেই ওই এলাকাবাসীর। ইউনিয়নটির নিজস্ব আয় আড়াই লক্ষ টাকার মতো। বিভক্তি করা হলে নিজস্ব আয় দাঁড়াবে সোয়া লাখ টাকা। একইভাবে জোড্ডা, দৌলখাঁড়, রায়কোট ইউনিয়নের জনসংখ্যা, আয়তন ও নিজস্ব আয়ের চিত্রও প্রায় একই রকম। যা ওই বিভক্তি আইনের শর্ত পূরণ করেনা। সে অনুযায়ী ইউনিয়নগুলো বিভক্তি করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনী বা নীতিমালার পরিপন্থী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান খাঁন দোলন বলেন, আমিও শুনেছি ইউনিয়নটি ভাঙ্গা হচ্ছে। ইউনিয়নের আয়তন কম কথাটি সত্য। তবে আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন- আয়তনে ইউনিয়নগুলো ছোট। আমরা বাস্তবে যা আছে তাই লিখে মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। দেখা যাক কি হয়।

Check Also

দাউদকান্দিতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

হোসাইন মোহাম্মদ দিদার :কুমিল্লার দাউদকান্দিতে শান্তা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ...