মোঃ আক্তার হোসেন :–
আদালতের নির্দেশে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার পীর ফতেহাবাদ ইসলামিয়া মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াছমিন আক্তার(১৪)’র মরদেহ দাফনের ১১ দিন পর ডি,এন,এ পরীক্ষার জন্য পুণ:রায় কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও দেবিদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দাউদ হোসেন চৌধূরীর নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুরে নিহত ইয়াছমিন আক্তারের পারিবারিক গোরস্তান থেকে তার লাশ উত্তোলন করে ডি,এন,এ পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৯ আগষ্ট পুলিশের নিকট প্রেরিত নিহত ইয়াছমিন আক্তার’র পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে ৭ মাসের অন্ত:স্বত্বা এবং পেটের বাচ্চার আকৃতির বর্ণনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডি.এন.এ পরীক্ষার জন্য শিশুটি লাশ ফ্রিজাপ না করে পুন:রায় লাশের পেটে ঢুকিয়ে সেলাই করে পাঠিয়ে দেন। পুলিশ ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন এবং খোঁজ নিয়ে দেখেন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বাচ্চাটি ফ্রিজাপ করা হয়নি। মামলার কনক্লোসিভ এ্যাভিডেন্স হিসেবে ডিএনএ পরীক্ষায় শিশুটির প্রকৃত পিতার পরিচয় নির্ধারনে আলামত হিসেবে শিশুটির প্রয়োজন হওয়ায়, মামলা তদন্ত কর্মকর্তা দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মোরশেদুল আলম ভূঞা লাশ উত্তোলন পূর্বক লাশের পেটের ভেতরে রক্ষিত শিশুটি উদ্ধার পূর্বক ফ্রিজাপ করার জন্য কুমিল্লা ৪ নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শুভ্রা চক্রবর্তীর আদালতে আবেদন করেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শুভ্রা চক্রবর্তী আবেদনটি আমলে নিয়ে ব্যাবস্থা গ্রহনে অনুমতি দানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরন করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মুহম্মদ গোলামুর রহমান’র আদেশ ক্রমে মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও দেবিদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দাউদ হোসেন চৌধূরীর নেতৃত্বে ওই লাশ উত্তোলন করা হয়। লাশ উত্তোলনের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোরশেদুল আলম ভূঞা এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার, সাংবাদিক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরীতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের উপর প্রভাব তৈরী করা হয়। অথবা সুবিধা প্রদানে রিপোর্ট পাল্টে দেয়া হয়। অনেক সময় চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেন ডোম বা লাশ কাটা ব্যাক্তি। লাশ কাটা ডোমের তথ্য মতেই চিকিৎসক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরী করেন। ইয়াছমিন আক্তার’র ময়নাতদন্তের ঘটনার ব্যাখ্যা হিসেবে সংশ্লিষ্ট ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক প্রথমে ডোমকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করায় সে জানায়, বাচ্চাটি পেটে পুরিয়ে সেলাই করে দিয়েছেন। চিকিৎসক পুন:রায় বলেন, মামলার আই.ও তার প্রতিবেদনে ডিএন’র বিষয়ে আলামত সংরক্ষন করার জন্য মত দেননি, তাই শিশুটির লাশ ফ্রিজাপ করা হয়নি। অপর দিকে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, লাশটি পানি থেকে তুলে আনা হয়েছে, তখনো কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। পানি খেয়ে নাকি অন্য কোন কারনে তার পেট উচুঁ ছিল তা জানার কোন সুযোগ ছিলনা। তখন মৃত্যুর সঠিক কারন জানার জন্যই ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। পুলিশ যদি জানত তার পেটে বাচ্চা আছে তাহলে ডাক্তারের মাধ্যমে ময়না তদন্তের কি প্রয়োজন ?
উল্লেখ্য গত ৩১ জুলাই রাতে খুন হওয়া কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের পীর ফতেহাবাদ ইসলামিয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ও ফতেহাবাদ গ্রামের মৃত: আব্দুল আলীম’র কণ্যা ইয়াছমিন আক্তার(১৪)। ওই দিন আনুমানিক রাত্র নয়টা/সাড়ে নয়টার দিকে রাতের খাওয়া দাওয়া করে মা মিলন বেগমের সাথে বিছানায় ঘুমাতে যায়। রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আর ঘরে ফিরেনি সে। ঘরে না ফেরায় রাতে ভিকটিমের মা ও ভাই আল আমিন বাড়ীর বিভিন্ন স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন অর্থাৎ ১ আগষ্ট সকাল ১১ টায় বাড়ীর পুকুর পাড়ের দক্ষিন-পূর্ব কোনের নিঁচু জলাভূমিতে তার লাশ পাওয়া যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ওই দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল ও প্রাথমিক তদন্ত শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এদিকে ভিকটিমের ভাই আল আমিন(২৫) বাদী হয়ে আলী হামজা(২৬)কে প্রধান সন্দিগ্ধ আসামী করে ১ আগষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন/০৩) এর ৯(২) তৎসহ পেনাল কোডের ২০১ ধারায় এজাহার দায়ের করলে পুলিশ দেবিদ্বার থানার মামলা নং-১(৮)১৫ দায়ের করেন।
হত্যাকান্ডের পর লাশ উদ্ধারের সাত দিন পর হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় দেবিদ্বার থানা পুলিশ। টানা সাত দিনের বিরামহীন চেষ্টার পর মূল ঘাতক ফতেহাবাদ গ্রামের আব্দুস সাত্তারের পুত্র মোঃ আলী হামজা(২৬) এবং অপর সহযোগী ভিক্টিমের আপন ভাবী জামিনা বেগম(৩০)কে গ্রেফতার পূর্বক শনিবার দুপুরে কুমিল্লা ৪ নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শুভ্রা চক্রবর্তীর আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দি প্রদান করে ঘাতকরা। জবান বন্দিতে ঘাতকরা ইয়াছমিন হত্যার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করার পাশাপাশি হত্যাকান্ডের লোম হর্ষক বিবরন তুলে ধরেন। বিচারক শুভ্রা চক্রবতী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
