মো.জাকির হোসেন :–
সরকার সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ ঘোষনার ফলে যানবাহনের অভাবে স্কুল-কলেজ গামী শিক্ষার্থী,অফিস গামী মানুষ,হাসপাতালে সেবা নিতে আসা ,ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে যানবাহনের অভাবে দীর্ঘ সময় সড়কের পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ছোট-বড় পিকআপ,ট্রাকে উঠে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করলেও নারী-শিশু সহ বয়স্কদেও এক্ষেত্রে দিতে হচ্ছে চরম মূল্য। এদিকে মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বল্প গন্তব্যে পৌছতে মানুষ অতিরিক্ত ভাড়ায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ৩/৪ কিলোমিটার পথ হেটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সরেজমিন কুমিল্লা অংশের বিভিন্ন স্থান ঘুওে সড়কের পাশে অপেক্ষমান যাত্রীদেও সাথে কথা বলে জানা যায়,প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ আশপামের জেলা থেকে অসংখ্য লোক স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী,চাকুরী জীবি,হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ছাড়াও নানা শ্রেনী পেশার লোকজন সিএনজি অটোরিক্সা যোগে সেবা নিতে নগরী সহ জেলার আশপাশে আসতে দীর্ঘদিন ধরে। মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা বিগত সময়ে কখনোই বৈধ না থাকলেও গত ২৩ জুলাই ঢাকায় যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ঘোষনায় মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা সহ থ্রিহুইলার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা আটকের ঘটনা। মালিকপক্ষ তখন পুলিশী হয়রানীর আশংকায় চালকদের সিএনজি অটোরিক্সা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। শুরু হয় জনগনের ভোগান্তি । এদিকে হঠাৎ কোন বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা না করে সিএনজি অটোরিক্সা চলাচর বন্ধ ঘোষনায় ভোগান্তি শুরু হয় সাধারন মানুষের । দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র জানায়, কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্নস্থান থেকে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীকে আসতে হচ্ছে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ,কাবিলা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,কোটবাড়ি এলাকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্রালয়,পদুয়ারবাজার মোস্তফাপুরে সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিএনজি যোগে। একইভাবে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট,বাজারে ব্যবসা করা ব্যবসায়ীদের আসতে হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে,পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ আশপাশের জেলাসমূহ থেকে প্রতিদিন আসতো শত শত রোগী। হঠাৎ সিএনজি অটোরিক্সা বন্ধ ঘোষনায় বর্তমানে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী,ব্যবসায়ী,রোগী,চাকুরীজীবিদের ত্রাহী অবস্থা। অনেকেই এসময় ছোট ছোট পিক-আপে করে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিলেও জীবনের ঝুকি নিয়ে ছোট ছোট স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিবারের লোকজন এসব পিক-আপে চড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনা-নেওয়ার কাজ করছে। এক্ষেত্রেও পিক-আপ সরবরাহ কম থাকায় শত শত লোকজনদের কখনো রোগী,শিশু সহ বয়োবৃদ্ধদের মাইলের পর মাইল হেটে গন্তব্যে পৌছঁতে বাধ্য হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে মুমূর্ষূ রোগী কখনো কখনো হাসপাতালে আসতে বাধ্য হলেও পুলিশ এক্ষেত্রে নূন্যতম মানবিকতাও দেখাচ্ছে না। অনেকেই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সিএনজি অটোরিক্সা ব্যবহার করলেও বর্তমানে তারাও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সেটা ব্যবহার করতে পারছেনা। দিনের বেলায় কিছু কিছু পিক-আপ,বাস পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে এগুলোও পাওয়া যাচ্ছে না। এসময় ঘরমুখো মানুষদের দুর্ভোগ চরমে উঠে। মাইলের পর মাইল হেটে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে এসময় মানুষের। নগরীর রেসকোর্স এলাকার বাসিন্দা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান,ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় ইস্পাহানী স্কুল এন্ড কলেজে পড়া তার শিশুকে মাঝে মাঝে স্কুলগামী বাসে তুলতে না পেরে বিগত অল্প ক’দিনে তিনি একাধিকবার পিক-আপ যোগে তার শিশুকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বাধ্য হয়েছেন। প্রতিদিন নিমসার থেকে কুমিল্লায় এসে ব্যবসা করা হাসান খসরু জানান, সকাল ৮ টায় বাড়ি থেকে এসে নগরীর বাদুরতলায় দোকান খুলে ফিরতে ফিরতে রাত ৯/১০টা। নিজস্ব কোন যানবাহন না থাকায় সিএনজি যোগেই এতদিন তাকে আসা-যাওয়া করতে হতো। এখন সিএনজি না থাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার সাথে সাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়। সাথে এসময় ব্যবসার টাকা থাকে বলে অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে। একইভাবে নগরীতে ব্যবসা করা সদর দক্ষিনের চৌয়ারা,লালমাই,বাগমারা এলাকার একাধিক ব্যবসায় জানান, তারা প্রতিদিন বাড়ি থেকে এসে ব্যবসা করে আবার রাতে বাড়ি ফিরে যেত। এখন তারা অজানা আশংকায় সন্ধ্যার পর থেকে থাকতে হচ্ছে বাড়ি ফেরা নিয়ে । ফলে চরম দুর্ভোগ আর নিরাপত্তাহীনতায় এখন প্রতিটি দিন বাড়ি ফেরা নিয়ে। এই যখন সাধারন মানুষের অবস্থা তখন বিকল্প কোন যানবাহনের ব্যবস্থাও না থাকায় দিন দিন মানুষের দুর্ভোগ চরমে। যানবাহনের অভাবে এক্ষেত্রে অনেকেই নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌছঁতে না পেরে বকুনীও খেতে হচ্ছে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের । এক্ষেত্রে সাধারন মানুষের দাবী দ্রুত বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা করে জনগনকে দুর্ভোগ থেকে রেহাই দেয়া এবং কোমলমতি শিক্ষার্থী সহ রোগীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল থেকে মুক্ত করা।
