আকবর হোসেন, মনোহরগঞ্জ প্রতিনিধি:–
গত কয়েকদিন বৃষ্টি না হলেও মাছ শিকারের জন্য ডাকাতিয়া নদী ও খাল বিলে অবৈধ বাঁধ দেওয়ার ফলে ধীরগতিতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় অপরিবর্তিত রয়েছে বন্যা কবলিত মনোহরগঞ্জের প্রায় অর্ধ-শতাধিক গ্রাম। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জন জীবন। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চতুর্দিকে পানি উঠে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে অধ্যাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে এলাকার খেটে খাওয়া অসহায়-দরিদ্র জনগোষ্ঠি। তবে সরকারি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উদ্যোগে কয়েকবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ও দুস্থ-অসহায়দের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কিন্তু জলাঞ্চল নামে খ্যাত মনোহরগঞ্জ উপজেলা বন্যায় কবলিত মানুষের ভোগান্তির কোন শেষ নেই। পানি নিষ্কাসনে কোন পরিবর্তন না হওয়ায় মানুষ অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। অন্যদিকে ডাকাতিয়া নদীসহ বিভিন্ন খাল বিলে বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় সঠিকভাবে পানি নিষ্কাসন না হওয়ায় অপরিবর্তিত রয়েছে পানির স্তর। অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েকশ হেক্টর জমির বীজতলা, শাক সবজির ক্ষেত, ভেসে গেছে পুকুর জলাশয়ের চাষকৃত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক ও মৎস্য চাষী। প্রবল বর্ষণ ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ সংযোগ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলা হাসনাবাদ ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়কগুলোর বিভিন্ন অংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অধিকাংশ গ্রামীন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়িতে পানি থৈ থৈ করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল ও মাদ্রাসা মাঠে পানি উঠে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। তার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে হাজারো কোমলমতি শিক্ষার্থী। এছাড়াও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । উপজেলা ১৬৫টি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ পানিবন্ধি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কর্মজীবি ও মধ্য বিত্ত শ্রেণির মানুষেরা পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছে মহাবিপদে। মৎস্য চাষী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যার কারণে মাছ চাষকৃত পুকুরগুলোর মাছ চলে গেছে। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকাই প্লাবিত। উপজেলা মৎস অফিসের সুত্র মতে, বন্যায় উপজেলার ১০৮টি পুকুর ও জলাশয়ের ৮৫০ হেক্টর মৎস ঘেরের প্রায় ২০০ শতাধিক চাষীরা দিশেহারা। সরকারী হিসাব মতে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। যার বেসরকারী হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে কোটি টাকা ছাড়িয়ে। মৎস্য ঘেরগুলো ভেসে যাওয়ায় অনেক মৎস চাষীকে ঘেরের পাড়ে বিলাফ করে কাদতে দেখা গেছে। তাছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পট্টি খামার বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিক্রির উপযোগী শেডের মুরগীগুলো মরে যাচ্ছে। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলার সাথে যোগাযোগের অন্যতম রাস্তাগুলোর মধ্যে লাকসাম-মনোহরগঞ্জ সড়ক, হাসনাবাদ-মনোহরগঞ্জ সড়ক, শান্তির বাজার-পোমগাঁও-মনোহরগঞ্জ সড়ক, বাইশগাঁও-মান্দারগাঁও-মনোহরগঞ্জ সড়ক, সাইকচাইল-ক্ষণপুর সড়ক, খিলা-মনোহরগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন রাস্তাগুলোতে পানি ওঠে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও দূষিত পানিতে হাটা চলা ধুয়া মুছা করার কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলার শিক্ষা খাতে ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও উপজেলা প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, উপজেলার ১০২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুূরানী মাদ্রাসার প্রায় সবগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ২৬টি স্কুল, ১টি স্কুল এন্ড কলেজ, ১টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৪টি মাদ্রাসা, ৩টি কলেজের প্রায় সবগুলোই বন্যা কবলিত। এ গুলোর মাঝে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উত্তর হাওলা ইউনিয়নস্থ কৈয়ারপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনতা বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মান্দারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, দাদঘর-কেয়ারী দাখিল মাদ্রাসা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটায় সরকারীভাবে ছুটির কোন দিক-নির্দেশনা না থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক মৌখিক ছুটি ঘোষণা করে তবে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়।
