মো. আলাউদ্দিন :–
গত ৯ দিনের টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। নাঙ্গলকোট পৌরসভাসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে উপজেলার ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে মাঠের ধান, আমন বীজতলা ও শাক-সবজি ক্ষেত। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও মৎস্য প্রজেক্টের লাখ লাখ টাকার মাছ। ক্রমান্বয়ে পানি বাড়তে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর পানি ৪ দিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল বর্ষণে এলজিইডির নির্মিত উপজেলার দৌলখাঁড়-সাতবাড়িয়া গুণবতি সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। বক্সগঞ্জ-হাসানপুর সড়কের মলংচর নামক স্থানসহ অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উপজেলাবাসীকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে পানি ঢুকে পড়েছে। তবে এসব এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণসামগ্রী না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। এ অবস্থায় পানিবন্দি পরিবারগুলোকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নাঙ্গলকোট পৌরসভার ভূমি অফিস ও পুরাতন হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, দাউদপুর, সাতবাড়িয়া ইউপির অষ্টগ্রাম, আলিয়ারা, তপোবন, সাধনপুর, খাড়োরা, পাইয়ারা, আদ্রা ইউপির আদ্রা, শাকতলী, আদ্রা, তুগুরিয়া, পুজকরা, জোড্ডা ইউপির বাহুড়া, বাইয়ারা, ভবানীপুর, দৌলখাঁড় ইউপির দৌলখাঁড়, চাঁন্দগড়া, মৌকারা ইউপির করাকোট, পৌচির, মোগরা গ্রামসহ উপজেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ওই ইউনিয়নের অন্তত তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়, ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যান কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
উপজেলার তপোবন গ্রামের বৃদ্ধ রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। সাত-আট দিন ধরে আমরা কষ্টে থাকলেও সরকারের কোনো লোক এসে আমাদের খবর পর্যন্ত নেয়নি।’
উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন দুলাল বলেন, তাঁর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে খাদ্যসামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।