তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা :–
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণ আইন কার্যকরীকরণকল্পে নিরীহ জনগণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ নিরসনে ভূমি অফিসে অব্যাহত ঘুষ-বাণিজ্য ও দুর্নীতি বন্ধ করার দাবীতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল এর মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টাণ ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি চন্দন কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস বকসী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টাণ ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হারাধন শীল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কমল চন্দ খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল দে, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাংবাদিক তাপস চন্দ্র সরকার, নির্বাহী সদস্য সুকেন চন্দ্র সরকার, বাংলাদেশ ছাত্র-যুব-ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মধুসূদন বিশ্বাস, সহ-সভাপতি লরেন্স তীমু বৈরাগী, সাধারণ সম্পাদক সুমন রায় সহ জেলা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়- আমলাতান্ত্রিক মহলবিশেষের সু-গভীর চক্রান্তে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন ঘুষ- বাণিজ্যে, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণ ট্রাইব্যুনালে আবেদন নিষ্পত্তিতে ধীরগতিতে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী অদ্যাবধি অবর্ণনীয় হয়রাণীর সম্মুখীন। শুধু তাই নয়, ট্রাইব্যুনাল, আপীল ট্রাইব্যুনালে আবেদন নিষ্পত্তির পরেও ভূমির মালিকদের কাছে ভূমি প্রত্যর্পণে আইনবিগর্হিতভাবে অহেতুক বিলম্ব ঘটানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ হাবিবুল কবির চৌধুরী কর্তৃক ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কাছে চলতি বছর ১ মার্চ প্রদত্ত পত্রের বিষয় উল্লেখ ত্রƒুতে চাই, যেখানে বলা আছে ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়, ডিক্রীতে কোন রকম অসংগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা এবং সরকারী স্বার্থের কোন ক্ষতি সাধিত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্যে তাঁকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। এহেন নির্দেশ দান শুধুমাত্র দেওয়ানী আদালতের প্রতিবৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন-ই নয়, ভূক্তভোগী ভূমির মালিকের কাছে যত দ্রুত সম্ভব অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণে জননেত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছাকে নস্যাতের অপপ্রয়াসেইরই নামান্তর। এসব হয়রাণীকর চক্রান্তমূলক কর্মকান্ডের অবসান চান এ দেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী।
নয় দফা দাবী সমূহ হচ্ছে- (১) অনতিবিলম্বে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে পরিত্রাণ দেয়া, (২) এ আইন বাস্তবায়নের পথে যাবতীয় চক্রান্ত নস্যাত করে উদ্ভুত সমস্যাবলীর দ্রুত নিরসন করা, (৩) “ক” তফশীলভুক্ত জমি প্রত্যর্পণের নিমিত্তে আবেদন দায়েরের সময়সীমা আরো ৩ বছর বৃদ্ধি করা, (৪) বাতিলকৃত “খ” তফশীলভুক্ত সম্পত্তির ভোগদখলকারীদের তাদের মালিকানার বৈধ প্রমাণপত্র বা দলিলাদি উপস্থাপনের নিমিত্তে ২০১৪ সনের ১৪ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত পরিপত্রে উল্লেখিত ১ বছরের স্থলে ৫ বছর বৃদ্ধি করা, (৫) “খ” তফশীলভুক্ত সম্পত্তিতে জমির খাজনা আদায় ও নামজারীর ক্ষেত্রে প্রশাসনের হয়রাণী ও টালবাহানা বন্ধ করা, (৬) ভূমি অফিসসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট নানান স্তরে অব্যাহত ঘুষ-বাণিজ্য ও দুর্নীতি বন্ধ সহ এর সাথে জড়িতদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, (৭) অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আবেদন নিষ্পত্তির জন্যে যে সব ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে তাকে আরো সক্রিয় ও সচল করা সহ আইনে নির্ধারিত মেয়াদ মধ্যে তা নিষ্পত্তিতে বাধ্য করা, (৮) অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী কথিতমতে প্রাপ্ত সরকারী সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত বিধিমালা ২০১৫ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম বাতিল করা এবং (৯) ট্রাইব্যুনালের রায় ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে ঢালাও আপীল বন্ধ করাসহ ট্রাইব্যুনাল ও আপীল ট্রাইব্যুনালের রায় ও ডিক্রী বাস্তবায়ন।
