সৌরভ মাহমুদ হারুন :–
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ৩ দিনের এক নবজাতক সারারাত্র মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় মারা যায়। নবজাতকের পিতা-মাতার অভিযোগ কর্তব্যরত নার্স হোসনে আরা-২কে বারবার তাকে অবহিত করার সত্ত্বেও তিনি একবারও এসে ওই নবজাতকে দেখেনি বরংচ সারা ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মৃত সামসুল হকের ছেলে মোঃ আবু রাসেল (২৭) গত বৃহস্পতিবার তার গর্ভবতী স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তার (২২) কে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সকাল ১১টায় হাসপাতালে গাইনী ডাক্তার রায়হানা সুলতানা সিজারকরান। সিজারে জ্যোৎস্না আক্তারের পুত্র সন্তান প্রসব করেন। গত ২ দিন এ নবজাতক বেশ ভালো ছিল।
এদিকে নবজাতকের পিতা আবু রাসেল জানায়, গত শুক্রবার রাত ১০ টায় তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করে শহরের আত্মীয়ের বাসায় রাত্রি যাপনের জন্য যান। রাত ১১ টা থেকে তার নবজাতক পুত্র সন্তান কান্নাকাটি শুরু করে। আবু রাসেলের স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তার অভিযোগ করে বলেন যে, তার নবজাতক পুত্র সন্তানের কান্নাকাটি প্রচন্ড ধরনের শুরু করলে তিনি বারবার কর্তব্যরত নার্স হোসেনয়ারা-২ কে বিষয়টি জানান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। নার্স তাদের অভিযোগ শুনে বলেন বাচ্চা দুধ পায় না তাই কান্নাকাটি করে আমার করার কিছু নাই বলে শিশুটিকে দেখতে আসে নি। এরপর জ্যোৎস্না সঙ্গে থাকা তার মা নবজাতকের কান্নাকাটিতে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ও বারবার ওই নার্সকে বিষয়টি জানালে তিনি একবারও আসেননি এমনকি তিনি তাদেরকে বলেন শিশু কান্নাকাটি করলে আমি কি করব। আমরা করার কিছু নাই। অপরদিকে নবজাতক শিশুর মা জ্যোৎস্না আক্তার ও শিশুর এ অবস্থার সাথে সাথে তিনি ও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার স্বামীকে এই বিষয়গুলো জানান। হাসপাতালের অন্যান্য রোগীরা অভিযোগ করে বলেন শিশুটির কান্নাকাটিতে কারও ঘুম হয়নি সকলই অস্বস্তিতে ছিলেন কিন্তু কর্তব্যরত নার্স তিনি আরামে ঘুমিয়ে ছিলেন এক মিনিটের জন্য শিশুটিকে দেখতে আসেনি। তিনি হয়তো আসলে ডিউটি ডাক্তারকে ডেকে এনে শিশুটিকে দেখিয়ে এ অঘটনের হাত থেকে শিশুটিকে বাঁচাতে পারতেন। নার্সের অবহেলা ও অসহযোগীতার কারনে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। আবু রাসেল অভিযোগ করে বলেন, খবর পেয়ে তিনি ভোর সাড়ে ৫ টায় হাসপাতালে স্ত্রী ও সন্তানের পাশে যান এবং তিনি নবজাতক সন্তানের এ অবস্থা দেখে নার্স হোসনেয়ারাকে অনুরোধ করেন শিশুটির শারীরিক অবস্থা দেখার জন্য। কিন্তু ওই নার্স রাতে যে ধরনের ব্যবহার করেছেন তার স্ত্রী ও শাশুড়ির সাথে ঠিক সেই ব্যবহারই তার সাথে করেছেন। এদিকে রাসেল আরো জানায়, নবজাতকটি নিয়ে ওই নার্সের কাছে গেলেও তিনি বাঁচাটির দিকে কোন নজর দেননি বরঞ্চ তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান। এছাড়া তার স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তার ও প্রচন্ড ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকাল ৮টা পর্যন্ত হোসনেআরা নার্স শিশুটিকে না দেখে তিনি চলে যান। পরে শিফ্ট চেইঞ্জ হলে সকালে শিফ্টে নার্স আভা রানী মজুমদার জানান, তিনি সকল রোগীদেরকে দেখতে যান। এ সময় তিনি নবজাতকটিকে মূমুর্ষ অবস্থায় দেখে দ্রুত সব ধরনের চেষ্টা করে তাকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন।
এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায় নবজাতককের মৃত্যুর পিছনে নার্সের অবহেলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যদি রাতে শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এদিকে অভিযুক্ত হোসনে আরা-২ জানায় নবজাতক শিশুটি তেমন গুরুতর অসুস্থ ছিল না। এছাড়া আমাকে কেউ রাতে নবজাতক শিশুটির অসুস্থতার খবর জানায়নি। আমার সাথে ডিউটিতে থাকা আয়া নাসরিন ছিলেন তিনি ও আমাকে এ ধরনের খবর জানায়নি। রোগীর পক্ষের সমস্ত অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেনারেল হস্পিটালের মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডাঃ মোঃ সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন যে, নার্স হোসনেআরার ব্যাপারে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয় তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।