মো. আবু মনসুর, ফটিকছড়ি:–
ফটিকছড়িতে সোনালি ফসল ধান কাটার উৎসব চলছে। গ্রামীণ জনপদে এখন দু’চোখ যেদিকে যায় সেইদিকে সবুজ দেখা না গেলেও সোনালী রঙ চোখে পড়ছে। সবুজ-শ্যামল এ বাংলাদেশ যেন কিছুদিনের জন্য রূপ বদলে সোনালী রঙ গায়ে মেখেছে। এ রঙে যেন বার্তা দিচ্ছে- বাংলাদেশ আসলেই সোনার দেশ। এ সোনা ফলান কৃষকরা। ব্যতিক্রম নয় চট্টগ্রামের ফটিকছড়িও। ফটিকছড়ি পাহাড়-নদ-নদী নিয়ে অবস্থিত। ফেনী, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার চেয়েও আয়তনে এবং জনসংখ্যায় বড় এ উপজেলার মানুষ কৃষিনির্ভরশীল। এ অঞ্চলের মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষাবাদ করে থাকেন। এবারও বোরো মৌসুমে সেচ সংকট, সারের দাম ও দিন মজুরদের মজুরী বেশি সহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে ধান ফলাতে মাঠে নামেন কৃষকরা। প্রাকৃতিক ও আর্থিক বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে কৃষকেরা বোরো ধান চাষাবাদে পিছু না হেটে যতটুকু সম্ভব সামনে এগিয়েছেন। এতে করে এবার বাম্পার ফলন ঘটেছে বোরো ধানের। এটি স্বস্তিকর হলেও আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে কৃষকদের। এত শ্রম ও সাধনার পরও ধানের সঠিক ও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সংশয়। তবে, কৃষকেরা আপাতত ধানের দাম নিয়ে ভাবছেন না, আগে ধান ঘরে তুলতে চায় তাঁরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখন কৃষকরা ব্যস্ত ধান কাটা নিয়ে। অভাব-অনটনের জন্য বছরজুড়ে কালবৈশাখীর চাঁেদর মত কালো করে রাখা কৃষানীর মুখে এখন স্বস্তির হাসি ফুটেছে। কৃষক স্বামী রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছাঁয়াহীন জমিতে ধান কাটছেন আর কৃষানী স্ত্রী ছাতা মাথায় মুছকি হেসে স্বামীর জন্য ডাল-ভাত নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষক স্বামীকে হাতপাখার বাতাস করছেন আর স্বামী বোধহয় গাইছেন- তোমার হাতপাখার বাতাসে, প্রাণ জুড়িয়ে আসে/কিছু সময় আরো তুমি থেকো আমার পাশে’। এটি গল্প, সিনোমা-কবিতার ভাষায় মনে হলেও গ্রামীণ জনপদের বর্তমান বাস্তব চিত্রই এটি।
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এবার বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না ফেলেও কৃষকরা তাঁদের মেধা-শ্রম আর ঘামের বিনিময়ে বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের রেকর্ড করেছেন।
বোরো ধানের বাম্পার ফলন প্রসঙ্গে আজিমনগরের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে এবার বোরো মৌসুমে। ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আমরা এরপরও দারুণ আশাবাদী। প্রাকৃতিক দূর্যোগের আগে ধান বিক্রি করতে পারলে মোটামোটি ভালো দাম পাবো বলে আশা করা যায়।
হেয়াকো বাজারের ধান ব্যবসায়ী সানু মাঝি বলেন, এই ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধান চাষ করা হয়েছে। ফসলও বেশ ভালো হয়েছে। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফলন ফলান তার নাম ‘সোনা’। এ সোনা ফলাতে গিয়ে কৃষকরা যে পরিমাণ পরিশ্রম করেন, সে পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়া যায় না। এবার ভালো ফলন হওয়ায় কৃষক-কৃষণীর মুখে যে হাসি দেখা যাচ্ছে তা যেন সব সময় বজায় থাকে সেই প্রত্যাশায় করি।
কৃষি বাদশা বলেন, বোরো ধান ফলাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পড়তে হয় আমাদের। পানি সংকট, সারের বেশি দাম, মজুরের মজুরী বৃদ্ধি, পোকা-মাকড়’র আক্রমন সহ শত প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে বোরো চাষাবাদ করতে হয়। এরপরও যদি কৃষকরা ন্যায্য দাম না পান, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক।