এবিএম আতিকুর রহমান বাশার :–
কুমিল্লার মুরাদনগরে সুখী আক্তার(১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রী বাড়ি ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় তুলে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারাত্মক রক্তাক্ত আহত ওই কলেজ ছাত্রী বর্তমানে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) রাতে।
দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত ওই কলেজ ছাত্রী জানান, সে মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর গ্রামের মৃত: সাহেব আলীর মেয়ে এবং জাহাপুর কে, কে একাডেমী’র মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মঙ্গলবার বিকেলে বাখরাবাদ সাজ্জাদ কম্পিউটার সেন্টারে কম্পিউটার প্রশিক্ষন শেষে পৌনে ৫টায় বাড়ি ফেরার পথে এক অজ্ঞাত মহিলা তার সাথে আলাপের ছলে চেতনা নাশক শুকিয়ে কৌশলে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় তুলে ফেলেন। রাত সাড়ে ৭টায় দেবীদ্বার পৌর এলাকার বানিয়া পাড়ায় সিএনজি চালিত অটো রিক্সাটি থামিয়ে সুখী আক্তারকে নামানোর সময় তার চেতনা ফিরে আসলে দেখেন তার ভাইয়ের চাচা শ্বশুরের ছেলে জুলহাস (২৭), এক মহিলা,ও আরো ৪ যুবক তাকে টানা হেচড়া করে কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে , সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে এসময় অপহরণকারীরা ছোড়া দিয়ে এলোপাথারী হাতে-পিঠে পোচিয়ে মারাত্মক জখম করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। সুখী দৌড়ে এসে দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের নিকটবর্তী মোবাইল ফোন দোকান থেকে বুড়িচং উপজেলার পারুয়ারা গ্রামের তার ভগ্নী পতি সামসু মিয়া(৪৫)র সাথে কথা বলেন এবং তার আসার অপেক্ষায় যাত্রী ছাউনিতে বসে থাকেন। পরে এক অজ্ঞাত যুবক তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাত সোয়া ৯ টায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তী করিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন বলে জানান। সুখী আরো জানায়, তার ভাবীর পিতার বাড়ির সাফর আলী ও দু’ভাই আবুধাবী প্রবাসী মাওলা ও কাউছার মোবাইল ফোনে তাকে হত্যার হুমকী দিয়ে আসছিল। ঘটনার দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালে তার ভাবী পিতার বাড়িতে যাওয়ার পর তাকেও আটকে রাখে।
আহত ছাত্রীর মা’ রফিয়া খাতুন জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে পুত্র বধূ’র চাচাতো ভাই জুলহাস মিয়া (২৭)’র নেতৃত্বে ৪/৫জন সন্ত্রাসী তার মেয়েকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা করেছিল। প্রায় ১০ মাস পূর্বে তার ছোট ছেলে রফিকুল ইসলাম টিটু’র সাথে পার্শ্ববর্তী ছালিয়াকান্দি (গজারিয়া) গ্রামের সাফর আলীর মেয়ে মাহিমা আক্তার ঝিনুকের প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে হয়। পুত্র বধূ ঝিনুকের সাথে তার মেয়ে (আহত) সুখী আক্তার জাহাপুর কে, কে, একাডেমী কলেজে একই শ্রেণীতে পড়ত। আর্থিক ভাবে মেয়ের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় ওরা এ বিয়েটি মেনে নেয়নি। বিয়ের পর গত বছরের নভেম্বর মাসে পুত্র রফিকুল ইসলাম টিটুর শ্বশুর সাফর আলী বাদী হয়ে তার ঝিনুককে অপহরণ করার অভিযোগে আহত সুখী আক্তার(১৮) ও তার দু’ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম টিটু(২৫), মোঃ জসীম উদ্দিন(২৮) কে অভিযুক্ত করে মুরাদনগর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তার মেয়ে সুখী ও পুত্র ঝিনুককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করে। জেলে থাকায় তার মেয়ে সুখী আক্তার নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে পারেনি। ২৩ দিন পর সুখী জামিনে আসে এবং পুত্র বধূ ঝিনুক ৫ মাস পর নিরাপত্তা হেফজত থেকে মুক্ত হন। সামাজিক সালিস ও ব্যাক্তিগত আলোচনায় ঝিনুকের পিতা গতকাল মঙ্গলবার চলমান অপহরণ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা থাকলেও মামলা প্রত্যাহার না করে আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে হত্যার চেস্টা করেছিল।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) আসাদুল হক জানান, সংবাদ পেয়ে হাসপাতাল যেয়ে আহত সুখী আক্তারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত শোনি, ঘটনার সাথে জড়িত একজনকে চিনতে পেরেছে। তাকে চেতনা নাশক দিয়ে অজ্ঞান করে অপহরণ করেছিল। যেহেতু ঘটনাস্থল এবং ভিক্টিম ও অপহরণকারীদের বাড়ি মুরাদনগর থানায় সেহেতু ঘটনার বিবরনসহ দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ মিজানুর রহমানের মাধ্যমে মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)কে অবহীত করিয়েছি।