আকবর হোসেন, মনোহরগঞ্জ প্রতিনিধি: —
“ প্রচুর ধন-সম্পত্তির ভিতরে সুখ নেই, মনের সুখ হলো প্রকৃত সুখ” এই হাদিসটির সাথে আমরা অনেকে ব্যাপক পরিচিত। তেমনি রুহুল আমিন নামে এক বৃদ্ধ ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানাযায় তার মনেও সুখ নেই, নেই তার কোন অর্থ সম্পদ। বৃদ্ধ বয়সে চা দোকানে কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে।তার সর্ম্পকে জানতে চাইলে কান্না জড়িত কন্ঠে তার জীবন কাহিনী তিনি বলতে থাকেন, সেই কথাগুলো তুলে ধরা হলো। এই রুহুল আমিন (৭৪) মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা বাজার চা দোকানে কাজ করেন। লাকসাম উপজেলার ৫নং উত্তরদা ইউনিয়ন এর নাড়ীদিয়া হাজী বাড়ীর মরহুম দুধা মিয়া দরবেশ এর বড় ছেলে মোঃ রুহুল আমিন এর কোন ধন-সম্পদ নেই এবং নেই তার মনে সুখ। রুহুল আমিন ১৯৪১ সালে এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৩ ভাই ৪ বোনের মধ্যে তিনি হচ্ছেন সবার বড়। তার পিতা ছিলো একজন দিন মজুর। অভাব অনটন এর মধ্য দিয়ে একটু পড়াশুনা তার কপালে জুটলো না। তিনি ১৩ বছর বয়স থেকে চা দোকানে দিন মজুর হিসাবে কাজ করতেন তার উপার্জনকৃত টাকা দিয়ে কোন মতে জীবন যাপন করতেন। তার এই কষ্টের মধ্য দিয়ে মা-বাবা ভাই বোন কে নিয়ে পরিবার চলাতেন। এরপর ২৭ বছর বয়সে একই ইউনিয়নের পৌলোইয়া গ্রামের সৈয়দ আলীর ছোট মেয়ে মাসুদা বেগম কে বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। সংসার জীবনে তিনি ২ কন্যা সন্তানের জনক হন। তার ২ কন্যা সন্তান কে বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ছোট মেয়ে কে স্বামী নির্যাতন করার কারণে তাকে স্বামীর সংসার ত্যাগ করতে হয়েছে। এমন অবস্থায় তার সংসার পরিচালনা করার জন্য উপযুক্ত উপার্জনকৃত লোকজন নেই। তিনি ১টি ছোট্ট ভাংঙ্গাঘরে কোন মতে মাতা গুজিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তার ১টি ঘরভিটা ছাড়া কোন কিছু নেই। একদিন কাজ না করলে চুলায় আগুন জ্বলেনা, সারাদিন গাঁধার মতে খেটে ১৫০ টাকা করে রোজগার করেনপান চা দোকানের চাকুরী থেকে। তাকে এলাকার কিছু লোকজন মজা করে মানকি ভাই বলে ডাকে কারণ তার মুখে কোন দাঁড়ি না থাকার কারনে সবাই তাকে এই নামে ডাকে। তারপরও সে কারো সাথে ঝগড়া বিবাধ করে না। এই রুহুল আমিন এলাকার লোকজন এর কাছে জনপ্রিয় লোক হিসাবে পরিচিত ও নামাজী মানুষ। সে এই বয়সে কোন মতে উপার্জন করে সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু সরকারী একটি বয়স্ক ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারী সুবিধা পান না বলে এই প্রতিবেদকে জানান। তিনি একেবারে নিঃস্ব একজন মানুষ, সর্বদায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কিভাবে তার সংসার চলবে, তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে দোকানে চিৎকার দিয়ে বলেন আল্লাহ…….আমার মৃত্যু হলে আমার লাশ কে কাঁদে নিবে ? কে আমার পরিবারের ২ মেয়ে ও স্ত্রীর দায়িত্ব নিবেন এমন চিন্তায় হতাশ, কারণ আমার কোন ছেলে নেই? এমন কষ্ট নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে যাবো তারপরও আমার দুঃখ থেকে যাবে। এই রুহুল আমিন এর মত করুন দুঃখের জীবন আমাদের কারো যেন না আসে। রুহুল আমিনের একটাই চাওয়া বিভিন্ন সরকারী সংস্থা ও বেসরকারী সংস্থার পরিচালক সহ সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের নিকট তাকে একটু মাথা ঘোচার মত একটি ঘর ব্যবস্থাসহ কর্মের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি তাদের একান্ত সু-দৃষ্টি কামনা করছেন ।
