মো. জাকির হোসেন :–
ঘারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ময়নামতি বৈশাখী মেলা। প্রতিবছর ময়নামতি রানী কুটিরের চারপাশ জুড়ে চলমান ঐতিহ্যবাহী এই বৈশাখী মেলাটি অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। প্রত্নতত্ব বিভাগের আপত্তির কারনে হচ্ছেনা বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। আর এখবর শুনে স্থানীয়দের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। জেলা প্রশাসন, প্রত্নতত্ব বিভাগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ময়নামতি বৈশাখী মেলাটি এখানকার ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক। জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের ঐতিহাসিক রানী ময়নামতি কুটিরের চারপাশ জুড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলা নববর্ষের বৈশাখের ৭ তারিখ এ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। মেলাটি ১ দিনের হলেও কাঠের তৈরী বিভিন্ন মালামাল ১ মাস ব্যাপী থাকতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক বিক্রেতা তাদের বিভিন্ন পসরা নিয়ে হাজির হতো এই মেলায়। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, এই মেলাকে কেন্দ্র করে ময়নামতি ও এর আশপাশের জনপদগুলোতে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। মেলাকে উপলক্ষ করে এই এলাকায় যাদের ঘরবাড়ি তাদের আত্বীয়-স্বজনরাও ছুটে আসতো। এযেন ছিল এখানকার আত্বীয়-স্বজনদের মিলন মেলা। জনশ্রুতি আছে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত একটি মানুষের যাবতীয় পণ্য এই মেলায় পাওয়া যেত। বিগত সময়ে মেলাটির অনুষ্ঠানস্থলে প্রত্নতাত্বিক বিভাগের অধীন জায়গাটি পরিত্যক্তাবস্থায় থাকায় মেলা অনুষ্ঠান নিয়ে কখনোই কোন প্রশ্নের মুখে পড়েনি স্থানীয় প্রশাসন। সুত্র জানায়, বিগত ১৯৮৮ সালে প্রত্নতত্ব বিভাগ ময়নামতি রানী কুটিরের চার পাশে খনন কাজ শুরু করার পর থেকে এর নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টতার কারনে জায়গাটির গুরুত্ব বাড়তে থাকে। কিন্ত্র দীর্ঘ এই সময়েও রানী কুটির এলাকা নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আনা হয়নি। এতে প্রতি বছর বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠানের সময় হাজার হাজার মেলায় আগত দর্শনার্থীরা রানী ময়নামতি কুটিরের আবিস্কৃত খনন কার্যেও উপর অবাধে চলাফেরা করায় হুমকীর মুখে পড়ে খনন কাজে আবিস্কৃত হওয়া কাঠামো। তবুও থেমে ছিলনা মেলা অনুষ্ঠান। এসময় প্রত্নতত্ব বিভাগ রানী ময়নামতি কুটিরের দেখভালো করার কাজে ২ জন লোক নিয়োগ করলেও নিরাপত্তায় তা যথেস্ট ছিল না। তাছাড়া অরক্ষিত থাকায় রাতের অন্ধকাওে খনন কাজের ফলে উদ্ধার হওয়া ধ্বংসাবশের উপর মলমুত্র ত্যাগ সহ ময়লা আবর্জনা ফেলায় দিন দিন এর নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত ২০২১ বাংলা সালে সেখানে মেলাটি চলাকালে প্রত্নতত্ববিভাগের অনুমতি ছাড়া স্থানীয় একটি চক্র রানী কুটির এলাকায় মাটি খনন করে। বিষয়টি অবহিত হলে প্রত্নতত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে মামলা রুজু হয়। তার পরও কিছু দিন মেলাটি চালিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সুত্র আরো জানায়, বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মেলার স্থানটি ইজারা দেওয়া হতো সরকারী নিয়মে। এবছর সেটা না হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার মানুষজনে ও আলোচনায় ছিল এবছর মেলাটি হবে কিনা? এদিকে শত বছরের পুরনো মেলাটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় সাধারন মানুষের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। বিষয়টি জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম নাজিম উদ্দিন জানান, এ বছর মেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভভনা অনেকটাই কম। প্রত্নতত্ব বিভাগের আপত্তির কারনে সেটা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর সুত্র জানায়, ময়নামতি পুরাকীর্তি রক্ষার দায়িত্ব সবার। সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরীর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।