শামসুজ্জামান ডলার,মতলব উত্তর(চাঁদপুর):–
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর (বেলতলী) গ্রামে ঐতিহ্যবাহী শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটার মাজারকে কেন্দ্র করে ৭দিন ব্যাপী লেংটার মেলা শুরু হয়েছে। এই ওরশ মূলত সাধারন মানুষের কাছে সোলেমান লেংটার মেলা নামেই পরিচিত। বিগত বছরের আলোকে এ বছর ৭দিনের এই লেংটার মেলার প্রথম দিনেই কয়েক লক্ষাধিক লোকের সমাগম ছিল উল্লেখ যোগ্য। বিস্তীর্ন অঞ্চলজুরে এই মেলায় হরেক রকম সামগ্রির দোকানের পাশিপাশি প্রকাশ্যে বিক্রি ও সেবনের ৫শতাধিক গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকের দোকান বা মজমা লক্ষ্য করা গেছে। তবে, ১৭চৈত্র শাহ সোলেমান লেংটার মৃত্যূর তারিখ থেকে পরবর্তী ৭দিন লেংটার মেলা চলার কথা থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে ১৭চৈত্রের দু’দিন আগ থেকেই মেলা শুরু হয়ে যাচ্ছে এবছরও দু’দিন আগথেকেই মেলা শুরু হয়ে যায়।
শাহ্ সোলেমান লেংটা উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আউলিয়া হিসাবে পরিচিত। শাহ্সূফী সোলেমান লেংটা কুমিলল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার আলীপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন মতলবের বিভিন্ন অঞ্চলে। সোলেমান লেংটা কখনো পর্যাপ্ত পোশাক পরিধান করতেন না। তাই তার মাজারটি লেংটার মাজার হিসাবেই পরিচিত। ১৩২৫ বাংলা সনের ১৭ চৈত্র শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটা তার বোনের বাড়ি বদরপুর গ্রামে মৃত্যুবরণ করলে সেখানে কবর দিয়ে পরবর্তীতে তা মাজারে পরিনত হয়। প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১৭ তারিখে তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৭দিন ব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ওরশ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে ও পর পর্যন্ত মেলা স্থায়ী হয়। এছাড়া প্রতি বছর ভাদ্র মাসে ও সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মাজারে ভক্তদের আগমণ ঘটে।
চৈত্র মাসের ১৭ তারিখের মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রতিদিন কয়েক লক্ষাধিক ভক্ত, আশেকান ও সাধারণ জনগণ আসা যাওয়া করেন। ওরশকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মেলায় বসেছে রকমারি দোকান। মেলায় বিভিন্ন প্রকার পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়। কেউ কেউ মাদক ও অশ্লীলতার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে।
প্রতি বছর ন্যায়ে এখানে শুরু হয়ে গেছে মাদক বিক্রি, সেবন ও অশ¬ীলতা। সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার শুরুতেই নেশাখোররা মাজারের পশ্চিম অঞ্চলের পুকুরের পাড় ও পুকুর সংলগ্ন কাঠের বাগান এলাকাসহ আশেপাশে প্রায় ৫ শতাধিক মাদক বিক্রি ও সেবনের আস্তানা গেরে বসেছে। জানা যায়, সকল প্রকার মাদক দ্রব্যই পাওয়া যায় এ মেলায়। আর প্রতিদিন বিকেল থেকেই জমতে থাকে এইসব মাদকের দোকান বা মজমাগুলো চলে সারা রাতব্যাপী। নেশাখোরদের দেখলেই মনে হয় মেলা প্রাঙ্গন যেন নেশার স্বর্গরাজ্য ও নিরাপদ স্থান। দলে দলে আস্তানা বেধে সেবন করছে মাদক দ্রব্য। মেলা প্রাঙ্গনের বাতাসে বইছে গাঁজার গন্ধ। প্রতি বছর এ মাজার থেকে বড় অংকের টাকা আয় হয়। এ টাকা ভাগাভাগি ও মাজার দখল নিয়ে বিগত দিনে সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মেলায় সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।