স্টাফ রিপোর্টার :–
কুমিল্লা বিসিক শিল্প নগরীর ফরিদ ফাইবার ফ্যাক্টরিতে বার্ষিক ভোজের খাবার খেয়ে একজনের মৃত্যু ও অন্তত্য চার শতাধিক অসুস্থ্য হবার বুধবার কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড ১নং আমলী আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, কুমিল্লা বিসিক শিল্প নগরীর ফরিদ ফাইবার ফ্যাক্টরির মালিক মোঃ মানিক মিয়া ও ম্যানেজারের সাথে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মনমালিন্ন চলে আসছিল। তার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে বার্ষিক ভোজের নামে শহরের একটি নামকরা খাবার সর্বরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে খবার নিয়ে তা শ্রমিকদের মাঝে পরিবেশন করা হয়। ওই খাবার খেয়ে আদর্শ সদর উপজেলার সাতরা গ্রামের হালিম মিয়ার স্ত্রী মালেকা আক্তার মারা যায় এবং চার শতাধিক শ্রমিক ও শ্রমিকদের পরিবারের বৃদ্ধা ও শিশু অসুস্থ্য হয়ে পরে। অসুস্থ্যদের মধ্যে শতাধিক কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, একশত সাতত্তিশজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চাদপুরের করেলা হাসপাতালে দুই শতাধিক ও অন্যান্য হাসপাতালে অর্ধশতাধিক রোগিকে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনায় কুমিল্লা আইনজীবি সহকারী সমিতির সদস্য মোঃ সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ফরিদ ফাইবার ফ্যাক্টরির মালিক মোঃ মানিক মিয়া ও ম্যানেজার সহ অজ্ঞাতনামা আরো চার-পাঁচ জনকে আসমি করে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড ১নং আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ সফিকুর রহমান এর আদালতে, বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ২৭৩/৩০২/৩০৪/১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করেন। আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে কুমিল্লা ডিবি পুলিশকে ঘটনার তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। বাদী পক্ষে মামলার পরিচালনা করেন এড. নাদির উদ্দিন আহম্মেদ শাকিল।
মামলার দাবী মোঃ সেলিম মিয়া জানান, ফরিদ ফাইবার ফ্যাক্টরিতে বার্ষিক ভোজের খাবার খেয়ে মৃত্যুবরনকারী মালেকা আক্তার ও চার শতাধিক শিশু, বৃদ্ধা ও শ্রমিক অসুস্থ্য হবার ঘটনায় বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন, স্থানয়ী ও জাতীয় পত্রিপত্রিকা দেখে আমি মানশিকভাবে মর্মাহত হই এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করি।
মামলা পরিচালকাকারী আইনজীবি নাদির উদ্দিন শাকিল জানান, মামলার বিবাদীরা পরিকল্পীতভাবে শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করার জন্য এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমার বিশ্বাস ডিবি পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িত সকল বিবাদীরে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিজ্ঞ আদালতের নিকট আমরা ন্যায় বিচার পত্যাসা করছি।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জনান, বৃহস্পতিবার কুমিল্লা বিসিক শিল্প নগরীর ফরিদ ফাইবার ফ্যাক্টরিতে বার্ষিক মিলাদ ও ভোজ অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের বিরানি খাওয়ানো হয়। বিরানি খেয়ে শ্রমিকরা শুক্রবার থেকে অসুস্থ হতে থাকেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গুরুতর অসুস্থরাদের শনিবার দুপুর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকেন। যারা বাড়িতে খাবার নিয়ে গেছেন, তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও আক্রান্ত হয়েছেন। রবিবার রাতে অসুস্থ্যদের একজন মারা যায়। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন হলেও তাদের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় সিভিল সার্জন দেখেন। আমি বর্তমানে কুমিল্লার বাহিরে থাকায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারচ্ছি না। মঙ্গলবার কুমিল্লায় সিটি কর্পোরেশনের গিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আলহাজ্ব ডা. মুজিবুর রহমান জানান, অসুস্থ্যদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান একজনের মৃত্যু হয়। অন্যন্য রোগীরা বর্তমানে আশংকামুক্ত। হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছু ঔষধ হাসপাতালের বাহির থেকেও সংগ্রহ করতে হয়েছে।
কুমিল্লা সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম শাহজাহান জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় শ্রমিকরা অসুস্থ হয়েছেন। ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ৯০ শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রোগীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।