–জসিম মেহেদী:
রাজনীতিতে কি হচ্ছে? কি হবে? কোন পথে এগুচ্ছে দেশ? দেশের উন্নয়নের ধারা কোন দিকে? কোনদিকে রাজনীতির ভবিষ্যৎ? নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কি? বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত হবে কি? এই প্রশ্ন এখন সবার। দেশের জনগণের ভাগ্যের আকাশে কালোমেঘের ঘণঘটা। যে কোন সময় বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা। এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায় জনগণ। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? যে সময় ক্ষমতাসীনরা বলছেন দেশে যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক ঘটনা। অন্য দিকে বিএনপি বলছে এ দায় সরকারের। ঠিক সেই সময় দেশের মানুষ অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেড় হচ্ছে না। প্রয়োজনের জন্য যারা বেড় হচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকে গাড়িতে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হচ্ছেন। অনেকে পুড়ে কয়লা হচ্ছেন । অনেকে হাসপাতালে যন্ত্রনায় কাতরিয়ে কাতরিয়ে মারা যাচ্ছেন। অপরদিকে নাশকতাকারীদের সর্ম্পকে তথ্য ও গ্রেফতারে সহায়তা করলে পুরস্কার ঘোষণা। এছাড়া নির্বিচারে মানুষ হত্যা , নিরাপত্তাহীনতায় জনজীবন অতিষ্ঠ। দেশের এই যদি হয় স্বাভাবিক অবস্থা। তা হলে অস্বাভাবিক কাকে বলে? আমাদের শিশুরা বা নতুন প্রজন্মরা এই প্রশ্নটা যদি করে তাহলে আমরা কি উত্তর দিব? এরকম প্রশ্ন করা যদি অন্যায় হয়। অস্বাভাবিক কে স্বাভাবিক বলা যদি অপরাধ না হয়। তাহলে স্পট করে বলতে চাই, আপনাদের এই স্বাভাবিক জীবন আমরা চাই না।
দেশে ও জনগণের কথা চিন্তা করা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে কখনো বঞ্চিত করে কেই কখনো ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হতে পারেনি।কখনো হওয়া সম্ভবও নয়। এ কারনেই জাতীয় সার্থে আলাপ আলোচনা করা বুদ্ধিমানের পরিচয়। এই আলাপ আলোচনার দরজা যখন বন্দ হয়ে যায় তখনই বৃদ্ধি পায় সহিংসতাসহ নানা ঘটনা। এই ঘটনার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই ক্ষমতাসীনদের ওপর বর্তায় সিংহভাগ। কেউ শিকার করুক আর নাই করুক। তবে সহিংসতা বৃদ্ধি’র উস্কানিদাতারা হচ্ছেন জনগণ ও গণতন্ত্রের সত্রু।
বর্তমান সমস্যা ও রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারনের জন্য আলোচনা ছাড়া কোন বিকল্প নেই, রাজনীতি বিশ্লেষকরা তাই মনে করেন। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা আলোচনা করতে নারাজ। তারা আলোচনা ছাড়া দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি অচিরেই স্বাভাবিক করবেন বলে মুখে ফেনা তুলছেন। তাদের এ আচারণ শিশুর মতো বলেই মনে হয়।
যারা বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার আদায়ের সপ্ন দেখিয়ে নিজেদের সপ্ন বাস্তবায়নের লালসা মনে ধারণ করেছেন, জনগণ যদি এসব ভেবে রাজপথে নেমে আসে তখন কি করবেন? ভেবে দেখেছেন? জনগণের এরকম ভাবাটা স্বাভাবিক।
আমি বলতে চাই,নতুন প্রজন্মকে সাদাকে সাদা-কালোকে কালো বলার সুযোগ দিন। যারা পূর্বে এই সুযোগ থেকে জনগণকে বঞ্চিত করেছেন তারা ইতিহাসের কালো অধ্যায় রচিত হয়েছেন। এসব থেকেও যদি শিক্ষা নিতে না পারেন। তা হলে আপনাদের ঠিকানা কোথায় হবে জনগণই সময় মতো বলে দিবে।
জনগণের রাজনীতি করবেন, আর সেখানে জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হবে না। খামখেয়ালি করে একতরফা জনগণের ওপর এক-একটা সমস্যা চাঁপিয়ে দিয়ে নদীর জল ঘোলা করে মুখে ফেনা তুলবেন আমরা জনগণের রাজনীতি করি। এরকম রাজনীতি যদি করতে চান তাহলে অচিরেই বিলুপ্ত হবেন অপনারা। এর কোন সন্দেহ নেই। ইতিহাস তাই বলে। জনগণের জানমালের রক্ষা করেত না পারলে সরে দাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ।তানাহলে আপনাদের অবস্থা বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মতোই হবে।
বর্তমানের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কোন দিকে এ নিয়ে যখন সবাই চিন্তিত। ঠিক তখনই যদি দায়িত্বশিলদের আচার – আচারণ প্রশ্নবিধ্য হয়। তখন জনগণের দায়িত্ব জনগণ নিয়ে নেয়াটাই স্বাভাবিক। তখন জনগণের দায়িত্ব কারো ওপর বর্তায় না।তখন জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার আধায়ে ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলনসহ যেকোন কর্মসূচি দিতেই পাড়ে। এই আন্দোলন যদি কেউ অজুহাত দিয়ে ভুলবোঝাতে সাহায্য করে। সেটা হয়তো সাময়িক রক্ষা, কিন্তু পরের ধাক্কাটা সামলানো অসাধ্যকর। তখনই জনগণের বিজয় অনিবার্জ।
তাই বলতে চাই গণতন্ত্র রক্ষায় ভোটের অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত না করে সংঘাত বন্ধ করতে সংলাপ প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে সংঘাত সৃষ্টিকারী ও সংঘাতকারী জনগণের বন্ধু নয়। এরা ক্ষমতালোভী। এই লোভীরা গণমুখী ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতামুখী দৃষ্টিভঙ্গী ও পেশীশক্তি এবং অর্থের তান্ডবে জনগণের অধিকার ভুলে যায় এবং ক্ষমতার লোভে মাতাল থাকে। তাদের জনগণ একদিন ছুড়ে ফেলে দিবে। ইতিহাস তাই বলে। আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না এটাই আমাদের বড় অপরাধ। এই অপরাধীদের হাতে দেশ কখনও নিরাপদ নয়। সচেতনদের উচিত এদেরকে চিহ্নিত করা। চিহ্নিত করতে না পাড়লে বর্তমান পরিস্থিতির মতো দুর্যোগ কালবৈশাখি আসবে প্রতিনিয়ত। আর মানুষের প্রাণ ঝড়ে যাবে। কষ্ট আমাদের বইতে হবে। আমরা কেন এখনো বুঝি না । যে যায় সেতো চলেই যায়, আর যারা রয়ে যায় তারাই বয়ে বেড়ায় সব যন্ত্রনা। এ যন্ত্রনা গুলোর দায়িত্ব কে নিবে? এর বোঝা কাকে বহন করতে হবে? এ গুলোর পরিস্কার করার সময় এসেছে। জনগণকে ক্ষমতায়ন করে স্বাধীনতার অস্ত্রটি দিতে হবে জনগণকে। এ প্রতিজ্ঞা করার সময় এখন।
ইতোমধ্যে অনেক রাজনীতিবীদ বলেই ফেলেছেন রাজনীতিবীদরা অসুস্থ্য, চিকিৎসা প্রয়োজন। এই যদি হয় বর্তমান পরিস্থিতি তাহলে কিভাবে বলবো সবকিছু চলছে স্বাভাবিক।মিথ্যা কথা বলে দায়িত্বশীলদের সান্তনার বাণী শুনতে চাইনা আর কোনদিন। সময় এসেছে প্রতিজ্ঞা করি, কারা হবে জনপ্রতিনিধি। এই যদি হয় জনগণের মূল দাবি। মিথ্যাচার, সৈরাচার পালানোর মাত্র সময়ের বাকি।
======================
[লেখক : কবি ও সাংবাদিক]
ই-মেইলঃmehedi222@gmail.com