কুমিল্লা প্রতিনিধি :–
কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঁদা আদায়ে ব্যার্থ হয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে হাত বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বাড়ীঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০/৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিন গিয়ে এবং থানায় লিখিত অভিযোগে জানা যায়, মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: গিয়াস উদ্দিন এর কাছে দীর্ঘদিন যাবত এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে আসছিল ইরফান, ফারুক গংরা। দাবীকৃত টাকা না পেয়ে শনিবার দুপুরে ২টা দিকে ৩০/৩৫ জনের সন্ত্রাসী গ্রুপ গিয়াস উদ্দিনের বাড়ীতে হাত বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। সন্ত্রাসীরা গিয়াস উদ্দিনের বাড়ীর বাউন্ডারি এবং ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে, পিস্তল, চাইনিজ কুড়াল, ডেগার, রামদা ও হাত বোমা, ককটেল ইত্যাদি দিয়ে অতর্কিত হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাট চালায়। সন্ত্রাসীরা লুটপাট চালিয়ে ২৫ ভড়ি স্বর্ণালংকার, নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানার এস.আই হাসান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় মো: গিয়াস উদ্দিন মেম্বার বাদী হয়ে সোমবার রাতে মুরাদনগর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের হারুনুর রশিদ এর পুত্র ইরফান (২৮), তালেব আলীর পুত্র ফারুক (৩০), কুদ্দুছ মিয়ার পুত্র মো: কাউছার (২৪), মনিরুল ইসলাম এর পুত্র বাদশা মিয়া (৩২), শাহজাহান এর পুত্র বাবু (২৩), ফরিদ মিয়ার পুত্র ডালিম (৩৩), ধনু মিয়ার পুত্র জসিম, মোস্তফা মিয়ার পুত্র মাসুদ (২৫), নোয়াব মিয়ার পুত্র আবু ইউসুফ (২৭), ফেদু কাজীর পুত্র আতিকুল (২০), জগদিশ এর পুত্র নয়ন, রমজান আলীর পুত্র জামিল, আলম এর পুত্র হাসান (১৯), একই উপজেলার হিরারকান্দা গ্রামের আ: রহমান এর পুত্র জাভেদ, সোনাপুর গ্রামের তালেব হোসেন এর পুত্র মাহাবুব সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে জানাতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার বি-সার্কেল (মুরাদনগর) মো: নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাকে ফোনে গিয়াস উদ্দিন মেম্বার বিষয়টি জানিয়েছিল। এর পর কি হয়েছে আমি আর জানিনা। পুলিশের একজন উদ্বোধত কর্মকর্তা হয়ে এ ঘটনা পরিদর্শন না করার সম্পর্কে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শ্রী বিপুল চন্দ্রভট্ট জানান, খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দুবৃত্তরা দিন দুপুরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বিষয়টি পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে প্রমান পাওয়া গেছে। সোমবার রাতে মো: গিয়াস উদ্দিন মেম্বার বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, যা তদন্তাধিন রয়েছে। মামলার রেকর্ড হবে তার পর তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মো: গিয়াস উদ্দিন মেম্বার জানান, আমি আওয়ামীলীগ এর রাজনীতি করি। মুরাদনগরের সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন আমার নেতা। ঘটনার পর পর আমি ওনাকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি আমাকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছেন। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি আশা করি আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে আমি ন্যার্য বিচার পাব।
এ বিষয়ের সোনারপুর গ্রামের বৃদ্ধ খলিলুর রহমান জানান, আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখেছি। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও এ ধরনের হামলা হয়নি। সন্ত্রাসীরা অতর্কিত চালিয়ে দিনে দুপুরে যেভাবে সিনামা স্টাইলে লুটপাট চালিয়েছে, তা দেখে আমরা রিতিমত হতবাগ। দেশে কি আইন-কানুন নাই। আজ ঘটনা ঘটার চার দিন পার হল, থানা পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে কোন ভূমিই দেখাল না।