মোঃ আক্তার হোসেন :–
জনদূর্ভোগখ্যাত ‘কুমিল্লা- সিলেট (আঞ্চলিক) মহাসড়কটি আগামী ৭দিনের মধ্যে সংস্কার না করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিবেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার সকালে ‘বাংলাদেশ রিক্সা- ভ্যান শ্রমিক ফেডারেশন’ আহুত ‘কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়ক’ অরোধ কালে তাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি দেবিদ্বার উপজেলা শাখা’র পক্ষ থেকে ওই ঘোষনা দেয়া হয়।
শনিবার সকাল থেকে ‘বাংলাদেশ রিক্সা- ভ্যান শ্রমিক ফেডারেশন’ কর্তৃক ‘কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়ক’ অবরোধকালে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ চলাকালে উভয় পার্শ্বে কয়েকশত যানবাহন আটকা পড়ে। দেবিদ্বার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) দাউদ হোসেন চৌধূরী ও দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস আই) মোঃ আবু ইউছুফ’র আশ্বাসে দু’ঘন্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
মরণফাঁদ খ্যাত ‘কুমিল্লা- সিলেট (আঞ্চলিক) মহাসড়ক’র বেহাল অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে পরিত্রাণ দিতে ‘বাংলাদেশ রিক্সা- ভ্যান চালক- শ্রমিক ফেডারেশন’ একটি বিক্ষোভ মিছিল সহকারে দেবদ্বিার নিউমার্কেট ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্তর’র সামনে সমবেত হয় এবং ‘কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়ক’ অবরোধ করে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
অবরোধ কালে শ্রমিক নেতা আব্দুল লতিফ’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ‘বাংলাদেশ রিক্সা- ভ্যান চালক- শ্রমিক ফেডারেশন’র সভাপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন মজুমদার, শ্রমিক নেতা আব্দুল কাদের মূন্সী, আব্দুল হালিম, মোঃ ফারুক হাসান, মোঃ শাহ আলম প্রমূখ। এসময় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটি দেবিদ্বার উপজেলা সাধারন সম্পাদক সৈয়দ খলিলুর রহমান বাবুল একদল সমর্থক নিয়ে ওই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেন। এসময় সুশিল সমাজের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের জনসাধারনও এআন্দোলনকে সমর্থন করেন।
‘বাংলাদেশ রিক্সা- ভ্যান শ্রমিক ফেডারেশন’র ডাকা ‘কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়ক’ অরোধ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার মরণফাঁদ খ্যাত ‘কুমিল্লা- সিলেট (আঞ্চলিক) মহাসড়ক’র বেহাল অবস্থা তুলে ধরে আগামী ৭দিনের মধ্যে এসড়কের দেবিদ্বার নিউমার্কেট এলাকা থেকে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার পর্যন্ত সংস্কার করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সড়ক ও জণপদ বিভাগ’র কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে বলেন, গত ১৭অক্টোবর মন্ত্রী সরজমিনে সড়ক পরিদর্শনে এসে সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে সওজ’র প্রকৌশল বিভাগকে ৫দিনের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে সড়কটি সংস্কারের নির্দেশ দিয়ে যান। নির্দেশের প্রায় দু’মাসেও সওজ’র কর্মকর্তারা মন্ত্রীর নির্দেশ পালন করেননি অপর দিকে মন্ত্রী তার নির্দেশ বাস্তবায়নের তদারকীও আর করেননি।
বক্তারা বলেন, সড়ক ও জণপদ বিভাগ’র গাফলতির কারনে কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়ক’র দেবিদ্বার উপজেলার নিউমার্কেট থেকে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০কিলোমিটার সড়কের বানিয়াপাড়া, বারেরা, বেগমাবাদ, কালিকাপুর, জাফরগঞ্জ, কংশনগরসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গত বর্ষায় তৈরী হওয়া বড় বড় গর্তগুলো সংস্কার করা হয়নি। গর্তগুলোতে ট্রলি, ছোট- বড় ট্রাক, বাস, সিএনজি চালিত ও ব্যাটারী চালিত অটোরিকসাসহ অন্যান্য যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পরে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন ও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। ফলে নারী- শিশু- রোগী, বৃদ্ধদের যাতায়াতে এক সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও জীবনের প্রয়োজনে ‘কুমিল্লা সিলেট মহাসড়’কে ওই সব ঝুঁকিপূর্ণ গর্ত ও খানাখন্দের মধ্য দিয়েই প্রতিদিন শত শত যানবাহনে যাত্রী ও ট্রাকে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। প্রতিদিনই মাল পরিবহন ও যাত্রীবাহী বাসের এক্সেল ভেঙ্গে বা বিভিন্ন যান্ত্রীক ত্রুটিতে যাজট সৃষ্টি এমনকি প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে। যানজটের দূর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারন মানুষ। মহাসড়কে এ অবস্থার জন্য পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক বিভাগের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন।
সড়কের বেহাল অবস্থা কবে নাগাদ নিরসন হবে এ ব্যাপারে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, দেড়মাস আগেই তিনি বদলী হয়ে ঢাকা চলে গেছেন তাই এবিষয়ে কিছু বলতে পাবেননা। তার স্থলাভিসিক্ত কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফ উদ্দিন’র টিএনটি ফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন এবং দেবিদ্বার থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) জানান, জনদূর্ভোগ নিরসনে সড়ক সংস্কারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত সড়কের গর্তে জান ও মাল পরিহন’র এক্সেল ভেঙ্গে এবং নানা কারনে জান ও মালামালের ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি যানজট নিরসনে আমাদেরও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত জায়গুলোতে ছিনতাইকারী ও রোড ডাকাতদের প্রভাবও লক্ষ্যনীয়।
