বিশেষ প্রতিনিধি :–
কুমিল্লার দু:খ গোমতী নদীর মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া লাশটি হোমনা উপজেলার মাধবপুর গ্রামের ছায়েদ আলীর ছেলে মাদকাসক্ত রবিউল আউয়ালের (২৪)। মাদকাসক্ত ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সহোদর ৩ ভাই মিলে মাদকাসক্ত ছোট ভাই রবিউল আউয়ালকে মারধর শেষে হত্যা করে লাশ গোমতী নদীতে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় স্বাক্ষী হিসেবে নিহতের বোন নুরুন্নাহার বেগম (৪৫) ও ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেন (৪৯) বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিয়া সুলতানার আদালতে এবং বড় ভাই ঘাতক মহসীন মিয়া (৩৫) শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সফিকুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। গত রোববার দুপুরে মুরাদনগর উপজেলার দড়িকান্দি এলাকা থেকে পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি উদ্ধার করে। পরদিন সোমবার সকালে তার মা পরিস্কারের নেছা থানায় এসে লাশটি রবিউল আউয়ালের বলে সনাক্ত করেন।
কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে নিহতের বোন নুরুন্নাহার, ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেন ও বড় ভাই ঘাতক মহসীন মিয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানান, রবিউল আউয়াল ছিল মাদকাসক্ত, নেশার টাকার জন্য প্রায়ই মা-বাবা, ভাই ও বোনদের মারধর করতো। তার অত্যাচারে পরিবারের লোকজন ছিল অতিষ্ঠ। গত রমজান মাস শুরুর ৪ দিন আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে তাকে কাতার পাঠানো হলেও এক মাস পর সে দেশে ফিরে আসে। এর পূর্বে মুরাদনগর উপজেলার রানীমুহুরী গ্রামে বিয়ে করলেও তার অত্যাচারে বছর খানেক পূর্বে তার স্ত্রীও আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় তার পরিবার দেড় লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে বিষয়টি রফা-দফা করেন। ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মেঝ ভাই আল আমিন (২৭) ও ছোট ভাই জসিম উদ্দিনের (১৯) সাথে মাদকাসক্ত মেঝ ভাই রবিউল আউয়াল মুরাদনগর উপজেলার রানীমুহুরী গ্রামে বোন নুরুন্নাহার বেগমের বাড়িতে বেড়াতে আসে। রাতে সে মদ খেয়ে মাতলামি করে এবং ভাই আল আমিনের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। তখন ওই বাড়ির বিদ্যুতের তার ছিড়ে ফেলে এবং বাড়ির লোকজনের উপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে রাতেই বোনের বাড়িতে ছুটে যায় অপর বড় ভাই সিএনজি চালক মহসিন মিয়া ও নিকটাত্মীয় আলমগীর হোসেন (৩১)। এসেই বোন নুরুন্নাহার, ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেন ও ভাগিনা মামুন মিয়াকে ঘর থেকে বের করে দেয়। ঘরের ভিতর দিয়ে দরজা বন্ধ করে রবিউল আউয়ালকে গরুর রশি দিয়ে হাত-পা বেধেঁ প্রচন্ড মারধর করে। এ সময় সে চিৎকার করলে গামছা দিয়ে মুখ বেধেঁ বাড়িতে নেয়ার কথা বলে সিএনজি যোগে তারা বাখরাবাদ এলাকার অদূরে নিয়ে হত্যা করে লাশ গোমতীর ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মাহবুবুর রহমান পিপিএম জানান, বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যা নিশ্চিত হয়ে বুধবার বিকেলে রানীমুহুরী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে নিহতের বোন নুরুন্নাহার বেগম ও ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেনকে আটক করি। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এএসআই আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিহতের বড় ভাই ঘাতক মহসিন মিয়াকে নহল চৌমুহনী এলাকা থেকে আটক করা হয়। তখন সে ঘটনা অস্বীকার করলেও সন্ধ্যায় বোন নুরুন্নাহার বেগম ও ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেনের মুখোঁমুখি করলে ঘটনা অপটকে স্বীকার করে ঘাতক মহসিন মিয়া।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পেশাদার ছাড়া অপরাধ করে কেউ বাঁচতে পারে না। সে মাদকাসক্ত হলেও তার চিকিৎসার জন্য নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। তাকে হত্যা করার ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।