মোঃ আক্তার হোসেন :–
দেবিদ্বারে মঙ্গলবার সকালে অভিনব কৌশলে চালকুমড়া ও শশার ভেতরে করে গাঁজা পাচারকালে দু’পাচারকারীকে আটক করেছে থানা পুলিশ।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মোঃ আবু ইউছুফ’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজারের ‘কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক’র পার্শ্বের ফুলমিয়ার মাংসের দোকানের কাছ থেকে ওই দু’পাচারকারী- গাজীপুরের গারাইল্যা গ্রামের হরিদাস’র পুত্র নবু দাস(৪০) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার নয়নপুর গ্রামের তোতা মিয়ার পুত্র খুরশিদ(৫০)কে আটক করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে দেবিদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) রাজিব আহমেদ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের ১৯৯০সনের মাদক আইনের ১৯(১)’র ৭(ক) ধারায় দেবিদ্বার থানায় মামলা দায়ের পূর্বক আটকদের কোর্ট হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
মাদক পাচারকারী নবু দাস জানান, ভারত সীমান্ত এলাকার শশীদল থেকে কিছু সব্জী তার এক আত্মীয় জাফরগঞ্জ এলাকায় পৌছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে সে ওই সব্জীর ব্যাগ নিয়ে আসে। অপর দিকে খুরশীদ জানায় একই এলাকা থেকে সঙ্গী হিসেবে নবু দাসের সাথে সে জাফরগঞ্জ আসে, নবু দাসের সাথে খুরশীদের পূর্বপরিচয় ছিলনা বলেও জানান, খুরশীদ এ এলাকায় মাছ ব্যবসা করেন, তবে মাদক ব্যবসা করেন না।
সব্জীর ভেতরে করে মাদক পাচার করার বিষয়টি পুরাতন হলেও চাল কুমড়া ও শশার ভেতরের অংশ নিখুঁতভাবে ফেলে দিয়ে তার ভেতর গাঁজা ভরে পাচারের বিয়টি হতবাক করে দেয় পুলিশ প্রশাসনকে। এর আগে ডাব, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়ার ভেতরে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল পাচারের ঘটনা ঘটলেও, স্বল্পমূল্যের গাঁজা চাল কুমড়া ও শশার ভেতরে করে পাচারের বিষয়টি পাচারকারীদের কৌশলে নতুনত্ব এনেছে।
মাদক চোরাচালানী রোধে অভিযান পরিচালনাকালে, চোরাচালানী চক্রের কাছ থেকে আইনশৃংলা রক্ষায় নিয়জিত বাহিনী কিংবা আবগারী সুল্ক বিভাগ নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। যা তাদের পাঠ্য পূস্তক কিংবা প্রশিক্ষণ সূচীতে কখনো পাননি। পাচারকারীদের কাছ থেকে এসব নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
এবিষয়ে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি সার্বিক) মোঃ মিজানুর রহমান, কুমিল্লা ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ(ডিবি)’র উপ-পরিদর্শক মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ ও মোঃ সহিদুল ইসলাম মাদক পাচারের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে জানান, এক সময় গাঁজা, ফেন্সিডিল, ভারতীয় মদ, ইয়াবা টেবলেটসহ নানা জাতীয় মাদক বাজারের ব্যাগ, সপিং ব্যাগ, বিভিন্ন খাচিতে, মাছের ড্রামে, বস্তায়, সরকারী-বেসরকারী গম, চাউল, তুষ, কুড়া, বস্ত্র, পাথর, গুদামজাত সামগ্রীর আড়ালে, ঔষধের কার্টুনে, জন্ম দিনের কেকে, বাসে, ট্রাকে, প্রাইভেট কার, এ্যাম্বুলেন্স, বিচারক, সাংবাদিক ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের গাড়িতে, গাড়ির সিলিন্ডার, টায়ারের ভেতরে, চালকের সিটের নিচে, বক্সের ভেতরে, এস,এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসসহ গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ভেতরে, কভার্ডভ্যান, পিকাপভ্যান, ট্রলির বডির নিচে, ডাব-মিষ্টি কুমড়া, তরমুজের ভেতরে, পাচারকারীদের বডি ফিটিং ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কসটেপে মুড়িয়ে, পায়ুপথে, নারীদের ভেনিটি ব্যাগে, হিজাবের আড়ালে, বক্ষবন্ধনে, গোপনাঙ্গনের ভেতরে, পেটের ভেতরে, রোগী সেজে ক্রেচের পাইপের ভেতরে, মাথার টুপির ভেতরে, জুতার সোল’র ভেতরে ও মৌজায়সহ নানা অভিনব পদ্ধতিতে শিশু-নারীদের মাধ্যমে মাদক পাচার হয়ে আসছিল। কখনো সড়ক পরিবর্তন করে, রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয়ে, পুলিশ-বিজিপি-অন্যান্য প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও মস্তান-সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করে। মাদক পাচার করে আসছে। এত কিছুর পরও দেবীদ্বার থানা পুলিশ মঙ্গলবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এক অভিনব পদ্ধতিতে গাঁজা পাচারকালে দু’পাচারকারীকে আটক করে কোর্ট হাজতে চালান করেছে।