নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস :–
কুমিল্লার তিতাসে বরযাত্রী ও আত্মীস্বজনদের আপ্যায়ন করা হলেও বিয়ে হলো না সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তানিয়ার আক্তার (১৫) এর। তানিয়া আক্তার উপজেলার বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলী আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী (রোল-১৬) এবং বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মোঃ মঙ্গল মিয়ার মেয়ে। অনেক নাটকীয় ঘটনার পর উক্ত বাল্য বিবাহ বন্ধ হওয়ায় সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কালাইগোবিন্দপুর গ্রামের মোঃ মঙ্গল মিয়ার স্কুল পড়–য়া মেয়ে তানিয়ার আক্তারের বিয়ে ঠিক হয় গত শুক্রবার চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলা সদরের আবদুর রহমানের কুয়েত প্রবাসী ছেলে মোঃ রাসেল মিয়া (৩০) এর সাথে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে, বাল্য বিবাহের অভিযোগ এনে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট একটি লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন মঙ্গল মিয়াকে উক্ত বিবাহ বন্ধের নির্দেশ দেন। এসময় তানিয়ার বাবা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের স্বাক্ষরিত জন্মনিবন্ধন নিয়ে হাজির হন। উক্ত জন্মনিবন্ধনে মেয়ের বয়স ১৮ বছর ১ মাস পাওয়া যায়। জন্মনিবন্ধনের উপর ভিত্তি করে মেয়ের বিয়ের অনুমতি নিয়ে যান। কিন্তু বিয়েতে বাদ সাধে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিহা ফেরদৌসীকে জানায়। তখন ইউএনও ছাত্রীর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার (পিএসসি) সনদ দেখতে চান। উক্ত সনদে তানিয়ার জন্ম তারিখ পাওয়া যায় ১৯৯৯ সালের ২৯ মার্চ।
সেই সনদ দেখার পর ইউপি চেয়ারম্যানের জন্মসনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়। বৃহস্পতিবার রাতে উক্ত পিএসপি সনদের ভিত্তিতে ইউএনও তিতাস থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোঃ আঃ হান্নানকে বিয়ে বন্ধ করতে নিদের্শ দেন। এবং ঐদিন রাতেই তানিয়ার বাড়ীতে পুলিশ গিয়ে বিয়ে বন্ধ রাখার জন্য অবগত করেন।
এদিকে শুক্রবার কালাইগোবিন্দপুর তানিয়ার বিয়ে বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, বরযাত্রীর জন্য গেইট সাজানো হয়েছে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে আরাম্ভ করে জনপ্রতিনিধিরাও দাওয়াত খেতে এসেছেন এবং অনেকে খেয়ে চলে গেছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য দেখা গেল তিতাস থানার এসআই শহিদুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সহকারী মুক্তিমান মারমাকে। তাঁদের সাথে আলাপ করে জানা গেল, তানিয়ার যেন বিয়ে না হয় সেই জন্য এখানে অবস্থান। এক পর্যায়ে বরযাত্রী আসে, তাদের আপ্যায়নও করা হয়। যথারীতি কনে ছাড়া বর যাত্রীকে বিদায়ও দেয়া হয়। কিন্তু সংশয় থেকে গেল, এতো টাকা খরচের পর বরযাত্রীকে আপ্যায়নের পরও কি তানিয়ার বাল্য বিবাহ বন্ধ হলো নাকি গোপনে তানিয়ার বিয়ে হলেই গেল।