এম.এ হোসাইন :–
কুমিল্লার দেবিদ্বারে তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী ফারজানা আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দুই আসামিকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া উভয় আসামিকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বেগম জেসমিন আরা বেগম গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় দেন। দ-প্রাপ্তরা হচ্ছে- দেবিদ্বার উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের পুত্র আবদুর রশিদ ও একই গ্রামের আ: হাকিমের পুত্র বশির আহমেদ।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের আবু বকর ছিদ্দিকীর মেয়ে ও স্থানীয় নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ফারজানা আক্তার (৯) গত ২০১০ সালের ১৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে স্কুল ছুটি হলেও বাড়ি না ফেরায় ফারজানার পিতা-মাতা তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে তার লাশ ওইদিন আসামি আবদুর রশিদের বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ে উলঙ্গ ও মুখে টাওয়াল বাধা অবস্থায় পায়। এসময় আসামি ও তাদের স্বজনরা ফারজানাকে জ্বীনে মেরেছে মর্মে অপপ্রচার চালিয়ে তাদের নিজ উদ্যোগে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফনের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে দেবিদ্বার থানার এসআই শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারজানার লাশ উদ্ধার করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পেয়ে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আবু বকর ছিদ্দিকী তার পার্শ্ববর্তী বাড়ির মৃত আবদুল হাকিমের পুত্র আবদুর রশিদ (২৭) ও আ: হাকিমের পুত্র বশির আহমেদকে (২৬) আসামি করে দেবিদ্বার থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। উক্ত আসামিরা শিশু ছাত্রী ফারজানাকে স্কুলে যাওয়ার পথে জোরপূর্বক বাঁশঝাড়ে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই শাহ কামাল আকন্দ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট উক্ত ২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ১৪ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানীত হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার আসামিদের বিরুদ্ধে উক্ত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত দ-প্রাপ্তদের মৃত্যু না ঘটে ততক্ষণ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে।’ এসময় ২ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। এ রায়ে মামলার বাদী ও তার পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করে অবিলম্বে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানান। সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাড. নিশাত সালাহ্উদ্দিন ও আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাড. সৈয়দ আবদুল্লাহ পিন্টু।