—কাজী কোহিনূর বেগম তিথি
আমাদের দেশ সমস্যা বহুল দেশ । অনেক সমস্যার মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব বেশ পরিলক্ষীত হয় । যা আমাদের জীবনে দৈনন্দিন সমস্যা । বর্তমানে বিশেষ করে ঢাকা শহরে যানজট নিয়ে যদি কথা বলি -বলতে হবে কর্মস্থলে যেতে বাসের জন্য অপেক্ষা, নির্ধারিত সময় কর্মস্থলে পৌছানোর জন্য অন্তরায় । আবার অফিস ছুটির পরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা মানুষের জনজীবনকে অসুস্থ করছে। কর্মব্যস্ত মানুষের তুলনায় বাসের সংখ্যা যথেষ্ট নয় তাছাড়া প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে দোষ দেয়া যায় না। সরকার আইন প্রনয়ন করতে পারেন সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করার জন্য কিন্তু তা বাস্তবায়ন দেশের জনগনকেই করতে হবে। নির্ধারিত সময় বাস নির্ধারিত স্থানে না পৌছানোর জন্য যাত্রীরা ভোগান্তীর স্বীকার হচ্ছে।
নির্ধারিত সীটের অতিরিক্ত যাত্রী বাসে নেওয়া বর্জন করা, বাসের সীটগুলো একসারি মহিলাদের আর একসারি পুরুষদের হওয়া বাঞ্ছনীয় কারন দেশে কর্মব্যস্ত মহিলাদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। কোন কোন বাসে দেখা যায় মহিলা সীটে পুরুষ বসে আছে, মহিলা যাত্রী আসলেও সীট ছেড়ে দিচ্ছে না, তখন হেলপারকে রাখালের ভুমিকা পালন করতে হয়। আবার মহিলা সীটের পার্শে মহিলা সীট কথাটা লেখা থাকেনা , সুশৃংখল পরিচালনার অভাবে বাসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কিছু কিছু বাস চালক, হেলপার এবং যাত্রীদের রুঢ় আচরন সুস্থ সাধারন মানুষদের অসুস্থ করে তোলে । এই রুঢ়ভাব দূর করার জন্য প্রতিটা বাসে স্টপেজ গুলোতে / ট্রাফিক সিগনালের সময় -কখনো ধর্মীয় বানী , কখনো জাতীয় সংগীত বাজানোর প্রচলন থাকলে / বাসের সামনে বাংলাদেশের পতাকার একটা সিম্বল – মানুষের মনে নমনীয়তা ফিরে আসার জন্য সহায়ক হতে পারে। আবার বাস , লঞ্চ , ট্রেনের ভিতর কোরআনের কিছু বানী যেমন-
”আল্লাহ্ অবশ্যই ন্যায়পরায়নতা, সদাচারন ও আত্বীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎ কার্য ও সীমালংঘন নিষেধ করেন। ” -১৬ সূরা নাহল : ৯০
লিপিবদ্ধ থাকলে / সেটা যে কোন ধর্মের বানীও হতে পারে। যাত্রাপথে সৃষ্টিকর্তার নামটা যাত্রীদের সবার মনকে কোমল রাখবে এবং সবাই অন্যায় আচরন থেকে বিরত থাকবে। আমাদের দেশের পরিবেশ আমাদেরকেই ভাল রাখতে হবে। আমরা যত সুশৃংঙ্খলভাবে পথ চলব দেশটা তত সুন্দরভাবে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে।
আবার প্রতিটা ঈদ -পূঁজায় দেখা যায় দূরপাল্লার গাড়ীগুলো বেপরোয়া চালাচ্ছে–/ লঞ্চগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রানহানি ঘটাচ্ছে। প্রতিটা লঞ্চ কর্তৃপক্ষ এবং যাত্রীদের সচেতন থাকা উচিত, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদ / পূঁজার আনন্দ উপভোগ করা জরুরী নয়। জীবনহানী ঘটলে এই আনন্দ সারাজীবনের মত নিরানন্দ হয়ে যাবে।
দেশের রেল ব্যবস্থার দিকে যদি তাকাই একই অবস্থা পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। ট্রেন গুলোতে মহিলা ও পুরুষ সীটের সুষ্ঠু বন্টনের অভাব দেখা যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা যায়। তাছাড়া আমাদের দেশে রেলব্যবস্থার আরো উন্নত হওয়া দরকার । যে যে রুটে রেল ব্যবস্থা চালু করা যায় তা অতিসত্তর বাস্তবায়ন করলে সারা দেশ যানজটের কবল থেকে মুক্ত হতে পারবে বলে আশা করা যায়। সেই সাথে রেল চালক, বাস চালক এবং লঞ্চ চালক এবং তাদের সহযোগীদের ট্রাফিক আইনের / সিগন্যালের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং যাত্রীদের প্রতি সেবা মুলক আচরনের উপর কাউন্সিলিং এর মাধ্যেমে দক্ষতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহনের প্রয়োজন। এতে মালিক কতৃপক্ষদের সুনাম দিনে দিনে বৃদ্ধি পাবে।
পরিশেষে বলব, প্রতিটা বাস কাউন্টার সিস্টেম করা এবং দুটো সারি মহিলা পুরুষদের জন্য সমবন্টন যানজট দূরীকরনে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেজন্য সরকার এবং বাস কর্তৃপক্ষের জোরালো দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
================
লেখিকা এবং সমাজকর্মী
kazitithi@gmail.com