এস.বি সাইফুল :–
রোজা ২৯টি হলে মঙ্গলবারই ঈদ। আর রোজা ৩০টি হলে বুধবার ঈদ। সেই হিসেবে পরশু দিনই মুসলিম সাম্রাজে একটি বছর পর একটি মাস সিয়াম সাধনার পরই আসছে সেই প্রতীক্ষার দিনটি।পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে ঈদের আনন্দ বইতে শুরু করেছে। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর এ অঞ্চলে ধনী-গরীব সকলে মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নতুন নতুন জামা কাপড় সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার মানুষের মাঝে ঈদের আমেজ অনেক বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়ায় ঈদকে সামনে রেখে মানুষের মাঝে ঈদের আমেজ দেখা দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী মহল ধারণা করছেন। তাই রমজানের শুরু থেকেই লাকসাম-মনোহরগঞ্জের ঈদ বাজারে অনেকটা বেচাকেনার উত্তাপ বেড়ে যায়। এতে বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় রোজার প্রথম থেকে ওই দুই উপজেলায় বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো বেশ জমে উঠেছে। ক্রেতা সমাগম থাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেক মার্কেট খোলা থাকছে। শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনও সকাল থেকেই বিভিন্ন মার্কেটমুখী হয়ে পড়েন জনসাধারণ। তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় সকাল থেকে বিভিন্ন মার্কেটের বিপণিবিতানগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। বিপুলসংখ্যক ক্রেতা সমাগমে সকাল থেকেই মার্কেটগুলোতে বেচাকেনার ধুম পড়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চা ও তরুণ-তরুণীদের তৈরি পোশাকের দোকানে বেশ বেচাকেনা লক্ষ্য করা গেছে। তবে এরই মধ্যে দেশীয় বাজার দখল করে ফেলেছে বিদেশি সব পণ্য। বোঝেনা সে বোঝেনা ভারতীয় সিরিয়ালের নায়িকাদের পোশাক ‘পাখি’ তরুণীদের বেশ মন কেড়েছে। তাই ঈদে তরুণীদের প্রথম পছন্দ ‘পাখি’ আর ছেলেদের ‘অরণ্য’। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লাকসামের আলহাজ্ব চাঁন মিয়া টাওয়ার, হাজী মোকছোদ আলী টাওয়ার, বাচ্চু ম্যানশন, মজুমদার মার্কেট, বি.এস টাওয়ার, জহুর মার্কেট, মালেক ম্যানশন, লাকসাম প¬াজা, এ.বি প¬াজা, সুফিয়া ম্যানশন, খায়ের ম্যানশন, খন্দকার মার্কেটসহ আরো অসংখ্য ছোট-বড় মার্কেটে পুরোদমে চলছে ঈদের কেনাকাটা। এদিকে মনোহরগঞ্জের লক্ষণপুর, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসার ও মনোহরগঞ্জ সদরের ছোট বড় বিপনী বিতানে প্রতিদিন ক্রেতাদের উপছে পড়া ভিড় দেখা যায়। তবে নামকরা এ মার্কেটগুলোতে দেখা যায় বেশিরভাগ দোকানে ঝুলছে ভারতীয়, পাকিস্তানি সালোয়ার-কামিজ। ভারতীয় সিরিয়ালের চরিত্রের নামে এগুলোর দেয়া হয়েছে বাহারি নাম। তবে মার্কেটগুলোতে শাড়ির বেশির ভাগই ইন্ডিয়ান কাতান নয়তো পাকিস্তানি সিল্ক। আছে লেহেঙ্গা ও টপসসহ পাখি, লাসা, ছাম্মাকছালে¬া, ঝিলিক, রায় কিশোরী মিলে অন্যান্য পোশাকও। শুধু নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রেই নয়, পুরুষদের পোশাকেও প্রাধান্য পাচ্ছে থাইল্যান্ড, জাপান ও চীন থেকে আসা সব পণ্য। তবে পুরুষদের পাঞ্জাবিতেও প্রতিবেশী দেশের প্রভাব চোখে পড়ার মতো। গত বৃহস্পতিবার মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে মার্কেটে শপিং করতে আসেন গৃহিনী আসমা বেগম। তিনি বললেন, ‘আমার বাচ্চাদের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে এসেছি। লাকসাম শহরে এলে সবার জন্য সবকিছু কেনাকাটা একসঙ্গে করা যায়। এই শহরে নতুন নতুন কয়েকটি বড় মার্কেট হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। আগে কুমিল¬া কিংবা ঢাকায় যেতে হতো। তবে আগের তুলনায় বিক্রেতারা ঈদ পোশাকের দাম একটু বেশি হাঁকলেও দরদাম করে কিনতে পারলে ক্রয়মূল্য সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে।’ হাজী মোকছোদ আলী টাওয়ার ও চাঁন মিয়া টাওয়ারে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়েস্টার্ন কালচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তরুণ-তরুণীদের পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দেশের মডেলের পোশাক। নামি-দামি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে তোলা হয়েছে আধুনিক ও সর্বশেষ মডেলের পোশাক। অভিজাত শ্রেণীর ক্রেতা থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ম-মধ্যবিত্ত পরিবারের পোশাকও রয়েছে এই মার্কেটে। এদিকে কিছু ফ্যাশন হাউস সাজানো হয়েছে শিশুদের রংবেরঙের পোশাক দিয়ে। ঈদ সামনে রেখে কন্যাশিশুদের জন্য তোলা হয়েছে ফ্রিল দেয়া পার্টি ফ্রক, হাতের জমকালো কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, ঘাঘরাচোলি। সালোয়ার ও প্যান্টের কাজে নকশায় রয়েছে বৈচিত্র। ওই মার্কেটগুলোর ফ্যাশন হাউসগুলোতে পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি, পাজামা, শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, লুঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন মার্কেটে আড়ং, দেশাল, বাংলার মেলা, কে ক্রাফট, অঞ্জন’স, নন্দন ও নিপুণসহ বিভিন্ন দেশি ফ্যাশন হাউসের শোরুমগুলোতে ঈদ ফ্যাশন নিয়ে নতুন নতুন ডিজাইন আর বাহারি নামের বড়দের পাশাপাশি ছোটদের পোশাকের বেচাকেনাও বেশ জমজমাট। পাশাপাশি নিম্মবিত্ত মানুষগুলোও ঈদের আনন্দ নিতে ভিড় করছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। যার যার চাহিদা মতো করছেন ঈদের কেনাকাটা। লাকসাম বাজারের বেশ কয়েকজন কাপড় ব্যবসায়িদের আলাপকালে জানা যায়, এবার তারা প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার উপরে বেচাকেনা করছেন। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই বেচাকেনা বেড়েই চলেছে। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে শুধু লাকসাম বাজারেই কয়েক কোটি টাকার পোশাক ও কাপড় চোপড় বেচাবিক্রি হবে।