আকতার হোসেন ভুইয়া,নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) :–
অজানাকে জানা সৌন্দয্য আর ভ্রমন পিয়াসু মানুষের এক নেশা আর ভ্রমন পিয়াসু মানুষ অবসরে নির্মল আনন্দ খুজে বেড়ায় । ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড প্রতিবছর বীমা কর্মীদের জন্য আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করে থাকে। যারা কোম্পানীর দেয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে শুধুমাত্র তারাই এ সুযোগ পেয়ে থাকে। আমিও এ কোম্পানীতে কাজ করি। সেই সুবাদে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কাটতে কাটতে সুযোগ এলো কক্সবাজারের যাওয়ার আনন্দ উপভোগ করার সর্ব্বোপরি প্রকৃতির সাথে কথা বলার। অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি এলো। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার (৫ জুন-২০১৪)। সকলেই সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৈরতলা বাস ষ্ট্যান্ডে এসে উপস্থিত হলো। যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সকলেই নিজেদের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো একদিন আগেই। তবুও কেউ ছবি তুলছে, কেউ ব্যাগ দেখছে সব কিছু নিয়েছে কি-না। ঘড়িতে তখন রাত ৭.২০ মিনিট। উত্তেজনায় সকাল থেকে কারও ঘুম হয়নি। গাড়ি মাত্র রওনা হলো কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। কক্সবাজারের যারা যায়নি তারা বন্ধুদের কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী সমুদ্র সৈকতের কথা শুনে তাদের অনেকেরই আগ্রহটা ছিল বেশী। অবশ্য এনিয়ে আমার যাওয়া কক্সবাজারে ৩য় বার । গাড়িতে চলছিল গান আর আড্ডা। পাহাড়ের আকাঁ-বাকাঁ পথ অতিক্রম করে আমরা সকাল ৭.৩০ মিনিটে পৌছে যায় কক্সবাজারের । এখানে গিয়ে আমরা নীডস নামের একটি হোটেলে উঠি। তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সকলে (আমি আর আমার এক বন্ধু ছাড়া) চলে যায় সমুদ্র সৈকতের নীল পানিতে গোসলের জন্য। আমি আর আমার বন্ধু আশার ফিল্ড অডিটর ওমর আলী হোটেলেই গোসল সেরে চলে যাই দাওয়াত খেতে কক্সবাজারের আশার ডিস্ট্রিক ম্যানেজার অজিত কুমার সাহার বাসায়। ওনার বাসায় বৌদির হাতে হরেক রকমের রান্না সামুদ্রিক মাছ আর মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম না নিয়ে উপায় নেই। তখন বিকাল ৪ টা। ডিএম অজিত দা ,বিএম কাঞ্চন পাল,মোঃ সাহাবুদ্দিন, এসিসট্যান্ট সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহীনুর ইসলামসহ আমি ও ফিল্ড অডিটর ওমর ভাই তিনটি মোটরসাইকেল যোগে হিমছড়ি ও ইনানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা। হিমছড়ি আর ইনানী ঘোরা শেষে আবার মোটরসাইকেল যোগে কক্সবাজারের সী বীচে,তখন রাত ৯ টা। পথে একদিকে সমুদ্র আর একদিকে পাহাড় যা দেখে সত্যিই মুগ্ধ। আর ইনানী বীচে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই আলাদা। আর হিমছড়ির উ”ুঁ পাহাড়ের বসে অনেক কিছুই উপলব্ধি করা যায়। ইনানী বীচে আর হিমছড়িতে হাসি আর গল্পে মুখরিত হয় সেখানকার পুরো জায়গা। বিশাল ঢেউ দেখে আমরা রোমাঞ্চিত। আর ঝাউ বাগান গুলোও মন কেড়ে নিয়েছে ।
প্রায় রাত ১১ টায় হোটেলে ফিরি । খাবার খেয়ে সবাই যে যার মত নিদ্রা দেবীর কোলে শুয়ে পড়েছে। আমি এবং ওমর ভাই একেই সীটে শুয়ে পড়ি। ঠিক তখনই আসে একটি দুঃসংবাদ। আমার বন্ধুবর ওমর ভাইয়ের স্ত্রী খুবউ অসুস্থ। হয়তো রাতেই ——? ঘুম আর চোখে নেই যেন আসমান ভেঙ্গে মাথায় পড়েছে। ওমর ভাই বাড়িতে চলে আসবেন রাতেই। নাচুর বান্দা , যে কথা সে কাজ । রাত তখন সাড়ে বারটা। ওনাকে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম রিজিওয়ানাল ইনচার্জ মোঃ জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আমরা ৪ জন। এত রাতে কক্সবাজার থেকে যাওয়ার কোন উপায় নেই । কাউন্টার গুলো বন্ধ। তাও যাদেরকে পাওয়া গেছে তারা বললেন ভোর ৪ টার আগে বাস ছাড়বে না। কি করব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হোটেলে ফিরে আসি। বেচারা বউ পাগল মানুষ বুঝার বাকি নেই। সারা রাত দু’চোখ বন্ধ করেনি। ভোর ৪ টার আগেই আমাকে ডেকে বসলেন। তখন আর দেরী না করে আমি আর আমার আরেক বন্ধু আবদুল হাই শাহকে নিয়ে ওমর ভাইকে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ফিরে আসি। তারপর ঘুম হয়নি। পরের দিন সকাল ১০ টায় ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের কর্মী সম্মেলন হোটেল লং বীচে। নাস্তা খেয়েই হোটেল লং বীচে। চলল একটানা বিকাল ৩ টা পর্যন্ত। কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীর মাননীয় চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম এমপি,ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকবৃন্দসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবারের আয়োজন ছিল অন্য রকম। সম্মেলন শেষে সকলে মিলে সাগরে ঝাপাঝাপি করে আবার হোটেলে ফিরে বিকালে আবার ডিএম অজিত দার নেতৃত্বে মোটরসাইকেল নিয়ে বিএম কাঞ্চন পাল বিএম মোঃ সাহাবুদ্দিন ভাই আমার হোটেলের পাশের রাস্তায় অপেক্ষামান। উদ্দেশ্যে হল শুটকি কিনতে যাব নাজিরার টেক শুটকি পল্লীতে। যেতে যেতে যেন মহেশখালীর পাশেই চলে এসেছি। গিয়ে দেখলাম বিশাল শুটকির আরত। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুটকি যায়। যে রকম শুটকি দরকার তাই এখানে পাওয়া যায়। সংবাদ পেয়ে শুটকি পল্লীর ধারক বাহকরা ক’য়জন ছুটে এসে আশার লোকজনকে খুবউ উজ্জত-সম্মান করল সাথে আমাকেও। ভাল লাগল তাদের এ আদর আপ্যায়নে। শুটকিও দিল লবণ ছাড়া পাইকারী দামে। সেখান থেকে কক্সবাজারের বার্মিজ মাকের্টে। কিনাকাটা শেষ করে সী বীজে বসে সবাই মিলে গল্প-গুজব করে আশার ভালবাসায় বন্দি অজিত দা এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে ফিরি। সত্যিই আশার লোকজনের দেয়া ভালবাসা বিশেষ করে ডি এম অজিত দার কথা না বললেই নয়। আমি আশার কেউ না হলেও আমাকে যে আদর আপ্যায়ন করেছেন তা ভুলার মত নয়। তবে সকালে সূর্যাদয় আর বিকালে সূর্যাস্ত যদি সাগর পাড়ে গিয়ে দেখা না যায় তাহলে পুরো ভ্রমনটাই বৃথা। তিন দিন পেরিয়ে গেছে। রবিবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটে ভগ্ন মনোরথ নিয়ে সকলে আবার বাসে করে ফিরে আসা। এই আনন্দ ভ্রমনের নেতৃতে ছিলেন নাসিরনগর বিকেন্দ্রীকরণ জেলার জনবীমার রিজিওয়ানাল ইনচার্জ মোঃ জামাল উদ্দিন ও নবীনগর বিকেন্দ্রীকরণ জেলার জনবীমার রিজিওয়ানাল ইনচার্জ অজিত কুমার । পথে মধ্যে চট্রগ্রামের ফ’য়েজ লেকসহ চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা হল। তারপর গন্তব্যস্থলে। ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের এই ধরনের আনন্দ ভ্রমণে সবার সাথে একত্রিত হওয়ার সুযোগ হয়। এ সফর আমাদের নিজেদের সেতুবন্ধন আরও একতাবদ্ধ করেছে। বীমা কাজে আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে। জীবনে অনেক সফর করেছি। কিন্তু সকল বীমা প্রতিনিধিবন্ধুদের সাথে উন্নয়ন সভা ও ব্যবসা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে সফর আমরা করলাম তা কোনদিন ভুলার নয়। এমনি নানান আনন্দ উৎসাহ ,উদ্দীপনায় কাটে দিন গুলো। যা বর্তমান জীবনে বড় ভূমিকা রেখে ভবিষৎ চলার পথে উদ্দীপনা যোগাবে।