মাসুমুর রহমান মাসুদ,চান্দিনা(কুমিল্লা):–
কুমিল্লার চান্দিনা পৌর মেয়র এর কার্যালয়ের মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে বিআরডিবি ট্রেনিং সেন্টার সংলগ্ন মায়াকানন আবাসিক এলাকায় পৌরসভার আবাসিক আইন ও আর.ই.বি কর্তৃক জারীকৃত বিদ্যুৎ আইন উপেক্ষা করে ৩৩ হাজার কেভি পাওয়ার গ্রীডের তার ঘেঁষে গড়ে উঠা বহুতল ভবনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন। প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জনমনে ক্ষোভ ও নানা প্রশ্ন উঠেছে।
মায়াকানন আবাসিক এলাকায় সৌদী প্রবাসী ছফিউল্লাহ্ পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেন। ভবনটির তৃতীয় তলার বারান্দার ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে ৩৩ হাজার কেভির তার। ঝঁকিপূর্ণ এই ভবন নিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ছালেহ্ আহাম্মদ ৪ ফেব্র“য়ারি একটি চিঠির মাধ্যমে পরদিন জরুরি সভা আহবান করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৫ ফেব্র“য়ারি পৌর মেয়র, থানা ও উপজেলা প্রশাসনকে পাল্টা চিঠি পাঠায়। চান্দিনা পৌর মেয়র নিজ খরচে ভবন সরিয়ে নিতে ৬ ফেব্র“য়ারি মালিককে একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু ওই চিঠিতেও কোন লাভ হয় নি। সর্বশেষ চান্দিনা থানায় ১২ ফেব্র“য়ারি একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। চিঠি চালাচালি ও সাধারণ ডায়েরি করার পরও ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এমনকি ওই ভবনের উপর রহস্যজনকভাবে একটি মোবাইল কোম্পানীর টাওয়ার নির্মিত হয়েছে।
পৌর আইনানুযায়ী গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে যে কোন বৈদ্যুতিক তার থেকে ৪ ফুট ও চলাচলের পথ থেকে ৬ ফুট দূরত্বে নির্মাণ কাজ করতে হবে। আর.ই.বি কর্তৃক জারীকৃত আইনানুযায়ী হাই ভোল্টেজ লাইন এবং ৩৩ হাজার কেভির পাওয়ার গ্রীডের লাইন থেকে কমপক্ষে- উপরে ১২ ফুট এবং প্রস্থে ৮ ফুট দূরত্ব রেখে নির্মাণ কাজ করতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আইনগুলোর কোনটিই মানা হয়নি। এমনকি ভবন মালিক সৌদী প্রবাসী ছফিউল্লাহ পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ভবনটি নির্মাণ করেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের উল্টা প্রশ্ন করেন- ‘ছফিউল্লাহ’র খুটির জোড় কোথায় ? সে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কিভাবে ?’
চান্দিনা পৌর প্রকৌশলী ও কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজসে কোন নীয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে অর্থের প্রভাবে গড়ে তুলছে বিলাস বহুল বহুতল ভবনটি।
এলাকাবাসী জানান, ওই ভবনের দ্বিতল ছাদ ঢালাই করার সময় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এক নির্মাণ শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়েছে। ভবিষ্যতেও ওই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অপরদিকে ২০১১ সালে পাশের একটি ভবনে ওই তারে জড়িয়ে হুমায়ূন কবির নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত হয়।
এ ব্যাপারে চান্দিনা পৌরসভার মেয়র শাহ্ মো. আলমগীর খান জানান, আমরা একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু ভবন মালিক কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মোবাইল কোম্পানীর টাওয়ার এর বিষয়ে আমার জানা নেই। প্রকৌশলীর পরামর্শ ক্রমে শীঘ্রই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।