আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ, অনেক ত্যাগ, তৃতীক্ষা, রক্ত আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীন বাংলাদেশ, আজ ইতিহাসের এক সর্বকালের কঠিন সময় পার করছে। প্রতিদিনই গুম-অপহরণ-হত্যা-ধর্ষন–রাহাজানিসহ নানা ভয়ানক বাজে অপকর্মের মধ্যে দিয়ে প্রতিটি সময় অতিবাহিত করছে ।আজ সাধারণ মানুষসহ দেশের সকল সর্বসাধারণ যেন হারিয়ে ফেলেছে তাদের স্বাভাবিক জীবনের অনেকটা নিশ্চয়তা। প্রায় প্রতিদিনই পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে নির্বাক এবং শোকে পাথর হয়ে পড়ছে সেই সুখী পরিবারটি। গুম এবং হত্যা নামক সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতায় হারিয়ে যাচ্ছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি না ফেরার দেশে, আর সেই পরিবারের সদস্যরা শুধু বুক ফাটা কান্না আর আহাজারিতে প্রতিটি সময় পার করছে।
এছারা সাধারণ মানুষ যেন প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস অথবা কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার পর আবার পুনরায় বাসায় ফিরবে কি-না, না-কি গুম অথবা হত্যায় তার জীবনটি হারিয়ে যাবে, এরকম নানা শংকায় প্রতিটি মুহুর্ত অতিক্রম করছে।আজ বাংলায় প্রত্যেক মানুষ যেন তাদের প্রতিটি ক্ষণ পার করছে এক বিশাল শংকা, অনিশ্চয়তা আর গুম-হত্যার শংকায়। কিন্তু এখন সবার মনে প্রশ্ন আর সরকারে কাছে জানার ইচ্ছা এই গুম–অপহরণ আর হত্যা থেকে কোন প্রতিকার বা বাঁচার কোন উপায় আছে কি? না-কি এই সকল গুম-অপহরণ-হত্যা আর ধর্ষন দিন দিন আরো বাড়তেই থাকবে? বাংলার আপামর জনতার মনে একটাই ছোট্ট চাওয়া সেটি হলো তাঁরা চায় গুম-অপহরণ আর হত্যা থেকে বাঁচতে আর চায় স্বাভাবিক ভাবে মরতে।
এমতাবস্থায় দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ যখন গুম-হত্যা-অপহরণ থেকে বাঁচতে আর স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুর গ্যারান্টি চায় তখন আমাদের দেশের মহান দুই নেতা এই জঘন্য অপরাধের হাত থেকে প্রতিকারের তেমন কোন ভাষা নয় বরং তারা নিজেদের আক্রোশ মেটাতে বিপক্ষ দলের প্রতি নিজেদের বিখ্যাত বিখ্যাত উক্তি এ সমালোচনার বাণী সুন্দরভাবে আওরায়ে যাচ্ছেন আর বাংলার নীরিহ সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে নিকৃষ্টতম খেলায় মেতে উঠেছেন।
গত কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের কথা না বললেই না, দেশের অন্যতম এই ভায়ানক শহরটিতে সাত সাতজন মানুষকে অপহরণ করার পর কি নির্মমভাবে হত্যা করা হল, যেটা স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে অন্যতম জঘন্যতম এক কালের স্বাক্ষী হয়েই সবার মনে থাকবে।অথচ এর একদিন পরই আমাদের দেশের মহান দুই নেত্রী আওয়ামীলীগের সভানেত্রীদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির সভানেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে রাজনৈতিক ভাষাতেই গুম-অপহরণ থেকে তেমন কোন প্রতিকারের ভাষা নয় বরং বিপক্ষ দলের প্রতি নিজেদের আক্রোশের বাণী শোনালেন।
আওয়ামীলীগ সভানেত্রী এবং দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন রকম তদন্ত না করেই এক বাক্যে গুম-অপহরণের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে বললেন, সারাদেশে গুম-অপহরণের জন্য বিএনপিই দায়ী। তিনি বললেন, বিএনপি চোরাগুপ্তা রাজনীতি করে সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে। তাদের চোরাগুপ্তা রাজনীতির কারনে দেশের গুম-অপহরণ-হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাই বিএনপির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ঠিত তেমনি কম যাননি বিএনপি সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তিনিও তেমনি গুম-অপহরণ থেকে তেমন কোন প্রতিকারের কথা না বলে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বললেন, সরকারের লোকেরাই এসব গুম-অপহরণ করছে এটা পরিস্কার। তাই তারা এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারে নাই। তিনি বলেন, তাদের কাছে বিচার প্রতিকার চেয়ে কোন লাভ নেই, এ জন্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা না চেয়ে বরং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান বেগম জিয়া।
এই হলো আমাদের দেশের মহান দুই নেত্রীর ভাষনের সংক্ষিপ্ত বর্নণা যেখানে দেখা যায় তারা এই গুম-অপহরণ এবং হত্যার নিকৃষ্ট পন্থা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর তেমন কোন উপায় অথবা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিবর্তে তারা নিজেদের রাজনৈতিক আক্রোশ মেটাতে প্র্রতিপক্ষ দলকে যেকোন ইস্যুতে রাজনৈতিক ভাষায় আক্রমন করে যাচ্ছে আর বিপক্ষ দলের সমালোচনায়ই সবসময় ব্যস্ত রয়েছেন কিন্তু বাংলার সাধারণ মানুষকে নিয়ে তাদের ভাবার অথবা সাধারণ মানুষের দু:খ-দুর্দশা নিয়ে কথা বলার মত তেমন সময় তাদের হাতে নেই বললেই নির্দ্বিধায় বলা যায়।
আমরা যদি আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি এ দুটি দলের ক্ষমতাকালীন সময়ের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যায় গুম-অপহরণ-হত্যা-ক্রসফায়ারসহ আরো অন্যান্য অপরাধে কোন সরকারই কারো চেয়ে কম যায়নি, প্রত্যক সরকারের সময়ই ব্যাপক অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। বিগত দুই সরকারের শাসনামল লক্ষ করলে দেখা যায় ১৯৯১ সালের জুন থেকে ১৯৯৬ সালের মে পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে গুম-হত্যা আর ক্রসফায়ারে মারা যায় ১৭৪ জন, ১৯৯৬ সালের জুন থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আওয়ামীলীগ শাসনামলে মৃত্যু হয় ৮৯৮ জন মানুষের। তেমনি আবার ২০০১ সালের অক্টবর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শামসনামলে মারা যায় ৮৭২ জনের। এবং গত সরকার অর্থ্যাৎ ২০০৯ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে মোট ৫৭৫ জন মানুষ। এছাড়া বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের শুধূ জানুয়ারী মাসেই হত্যা ও গুম হয়েছে বিরোধীজোটের প্রায় ৩০০ জন নেতাকর্মী এবং ফেব্রুয়ারী, মার্চ ও এপ্রিল মাসে আরো হারিয়ে গেছে একং হত্যা-গুম হয়েছে প্রায় ৫০০ জনের মতো মানুষ।তবে এ কথা বলাই যায় বিগত সকল সরকারের শাসনামলের চেয়ে বর্তমান চলতি সরকারে আমলে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যা-গুম এবং অপহরণে আক্রান্ত হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।
পরিশেষে বাংলার সাধারণ মানুষের মনে একটাই চাওয়া তারা এই গুম-অপহরণ এবং হত্যা নামক জঘন্য নৃসংসতা থেকে বাঁচতে চায়।তাদের একটাই প্রত্যাশা চায় স্বাবাবিক ভাবে বাঁচতে এবং স্বাভাবিক ভাবে মরতে। এবং আমাদের দেশের মহান দুই নেত্রীর কাছে সাধারন মানুষের একান্ত অনুরোধ আপনারা সকল বিষয়কে শুধু রাজনৈতিক ভাবে অপব্যাখ্যা না করে দেশের মানুষকে কিভোবে এই গুম অপহরণ, হত্যা থেকে রক্ষা করা যায় এবং সর্বপরি একটু ভালোভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করা যায় সেদিকে নজর দেয়ার জন্য সকলেই প্রত্যাশায় তাঁকিয়ে আছে।
=======================
লেখক: এস.এম সাজু আহমেদ
(সাংবাদিক)
Mail-smshaju7@gmail.com
প্রয়োজনে:০১৯১৭-৫২০৮৯৭