ইসলামি শরীয়তে নারীর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ শরীয়ত নারীর ইজ্জত-আবরু হেফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত ও সুউচ্চ করেছে। নারীর পোষাক এবং সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যই, সৌন্দর্যের প্রকাশের মাধ্যমে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তার সকল পথ বন্ধ করার জন্য। এটা নারীর স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করা নয়; বরং তাকে লোলুপ দৃষ্টির ছোবল থেকে রক্ষা করা এবং তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত করা।
ইসলামে পর্দার মর্যাদা
হিজাব (পর্দা) আল্লাহ্ এবং তার রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) এর আনুগত্য। পর্দা আল্লাহ্ এবং তার রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) এর আনুগত্য। কেননা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয।
আল্লাহ্ বলেন, ‘আল্লাহ্ এবং তার রাসুল কোনো আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোনো অধিকার নেই। যে আল্লাহ্ ও তার রাসুলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৩৬)
আল্লাহ্ তাআলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেন, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত, প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা নূর, আয়াত : ৩১)
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৩৩)
আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমরা তার পত্নীগণের নিকট থেকে কোনো কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৩)
আল্লাহ্ আরও বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯)
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘নারী গোপন বস্তু।’ (তিরমিযী) অর্থাৎ তাকে ঢেকে রাখতে হবে।
হিজাব নারীর পবিত্রতা
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, ‘হে নবী, আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯)
নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পূত-পবিত্রা সংরক্ষিতা থাকবে, আর তবেই তাকে কষ্ট দেওয়া হবে না, ফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না।
এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্ট, ফিৎনা ও অকল্যাণের সম্মুখীন হতে হয়।
হিজাব নির্মলতা
আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমরা তার পত্নীগণের নিকট থেকে কোনো কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৩)
এ আয়াতে পর্দাকে মুমিন নারী-পুরুষের হৃদয়ের পবিত্রতার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কেননা চক্ষু যখন অবলকণ করে; হৃদয় তখন কামনা করে। আর এজন্যই দৃষ্টিপাত না করাটা হৃদয়ের পরিশুদ্ধতার কারণ এবং ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার সুস্পষ্ট মাধ্যম। কেননা পর্দার মাধ্যমে দুর্বল অন্তরের মানুষদের কুপ্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়।
আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৩২)
হিজাব নারীর আবরণ
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ লজ্জাশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পসন্দ করেন।’
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে নারীই নিজ গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে গিয়ে স্বীয় পোষক খুলবে; আল্লাহ্ তার থেকে পর্দা ছিঁড়ে ফেলবেন।’
পর্দা হল ঈমান
আল্লাহ্ তাআলা ঈমানদার নারী ব্যতীত কাউকে পর্দার নির্দেশ দেননি। এজন্যই তিনি বলেছেন, ‘‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত, প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা নূর, আয়াত : ৩১)
একদা বনী তামীম গোত্রের কিছু নারী উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা.) এর নিকট আগমণ করে, তাদের পরিধানে ছিল পাতলা পোষাক। তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক, তবে এটা ঈমানদার নারীর পোষাক নয়। আর যদি ঈমানদার না হয়ে থাক, তবে এপোষক দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।’
পর্দা আত্মসম্ভ্রম
হযরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমি শুনলাম তোমাদের নারীরা অনারব কাফের পুরুষদের সঙ্গে বাজারে গিয়ে ভিড় জমায়? তোমাদের মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই? যার মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।’
পর্দাহীনতার বিপদ
১. পর্দাহীনতা আল্লাহ্-রাসুলের নাফারমানি
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তার রাসুলের বিরোধিতা করবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহ্র কোনই ক্ষতি হবে না।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে অস্বীকার করে। তারা প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে আমার নাফারমানি করবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে।’ (বুখারী)
২. পর্দাহীনতা অভিশাপ
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘শেষ যুগে অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু নারী হবে, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। তাদের মাথা হবে উটের চুঁড়ার ন্যায়। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর। কেননা তারা অভিশপ্ত।’
৩. বেপর্দা হওয়া জাহান্নামীদের কাজ
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামবাসী দু’টি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনও দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোষাক পরেও উলঙ্গ থাকে।’ (মুসলিম)
৪. বেপর্দা ইবলীসের সুন্নাত
আদমের সঙ্গে ইবলীসের ঘটনাই আমাদের সামনে ইবলিসের ষড়যন্ত্র উম্মোচন করে দেয়; সে কিরূপ আগ্রহী ছিল লজ্জাসস্থান প্রকাশ হওয়া ও পর্দা উম্মোচন করার জন্য। বেপর্দা হচ্ছে শয়তানের মূল লক্ষ্য।
আল্লাহ্ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি, যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।’ (সূরা আরাফ- ২৭)
সুতরাং ইবলিসই হল, বেপর্দা ও লজ্জাহীনতার আহ্বানকারী।
৫. বেপর্দা ইহুদী নীতি
মুসলিম জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের ব্যাপারে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র কারো কাছে গোপন নয়। বিশেষ করে নারীর ফিৎনার মাধ্যমে। কেননা নারীর সঙ্গে পুরুষের অবাধ মেলামেশা জাতির নৈতিকতা ধ্বংসের প্রধান অস্ত্র।
নবী (সা.)বলেন, ‘তোমরা দুনিয়া এবং নারী থেকে বেঁচে থাক। কেননা বণী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফিৎনা ঘটেছিল নারী দ্বারা।’ (মুসলিম)
৬. বেপর্দা ঘৃণিত জাহেলী রীতি
আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবসস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৩৩)
এ আয়াতে বেপর্দাকে অন্ধকার যুগের বর্বরদের রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর নবী (সা.) জাহেলী যুগের সবধরণের রীতি-নীতিকে পদদলিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মূর্খ যুগের সব বিষয় আমার দু’পায়ের নীচে।’ (বুখারী)
বেপর্দা চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম। কেননা এর মাধ্যমে নারী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ। কেননা বেপর্দা তাদের ন্ত অন্তরে কুচিন্তার উদ্রেক করে; ফলে তারা ধাবিত হয় অশ্লীলতার দিকে।
বেপর্দার কারণেই বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরণের দূরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন্ত এইডস্…।
নবী (সা.) বলেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে যখনই অশ্লীলতার প্রকাশ ঘটবে, তখনই তাদের মধ্যে মহামারী, দুর্ভিক্ষ.. প্রভৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে; যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনু মাজাহ)
৭. বেপর্দা চোখের ব্যভিচারের পথকে সুগম করে
রাসুল (সা.) বলেন, ‘চোখের ব্যভিচার হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা।’
দৃষ্টি অবনত রাখার আনুগত্যকে লংঘণ করার কারণেই পৃথিবীতে ফিৎনা-ফাসাদের সূত্রপাত হয়েছে; যা আনুবিক বোমা ও ভূমিকম্পের চাইতে বেশি ক্ষতি করে থাকে মানুষের চরিত্রকে।
আল্লাহ্ বলেন, ‘যখন আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থা সম্পন্ন লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করি, অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। ফলে তাদের উপর দণ্ড ন্যায়ত, অবধারিত হয়ে পড়ে এবং তখন আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে থাকি।’ (সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ১৬)
শরীয়ত সম্মত পর্দার জন্য আবশ্যিক কিছু শর্ত
১. নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে।
২. পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্য না হয়।
৩. পর্দার কাপড় মোটা হবে পাতলা নয়।
৪. প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে; সংকীর্ণ হবে না।
৫. আতর সুবাশ মিশ্রিত হবে না।
৬. কাফের নারীদের পোষাকের সঙ্গে সদৃশপূর্ণ হবে না।
৭. পুরুষের পোষাকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না।
৮. ওই পোষাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়।