ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:–
ফরিদগঞ্জ উপজেলার চট্টগ্রাম-খুলনা বিকল্প আঞ্চলিক মহাসড়ক ও চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ডাকাতিয়া নদীর ওপর অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটির ৬ মিটার দক্ষিণে প্রায় ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৪ মিটার প্রস্থের তিনটি স্প্যানের ওপর পাকা ব্রিজ, মহামায়া বাজারের ঝমঝমিয়া ব্রিজ এবং হাজীগঞ্জের চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের ওপর হাজীগঞ্জ বাজার ব্রিজের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই তিনটি ব্রিজসহ কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ হয়ে বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোর কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের প্রায় কোটি মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা ও প্রশস্ত করা হলে দূরত্ব হরাস পেলে ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখি যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে।
ফরিদগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজের ৬৫ ভাগ, মহামায়া বাজারের ঝমঝমিয়া ব্রিজটির ৭৫ ভাগ এবং হাজীগঞ্জ বাজার ব্রিজটির ৩৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ব্রিজগুলোর নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিকো ডাইনকোর সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ফরিদগঞ্জের ব্রিজটি এবং মহামায়ার ঝমঝমিয়া ব্রিজটির কাজ সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যাবে। হাজীগঞ্জ ব্রিজটির ব্যাপারে তিনি জানান, তিন সেকশনের মধ্যে ব্রিজটির এক সেকশনের কাজ শেষে দ্বিতীয় সেকশনের কাজ শুরু হয়েছে। এটি শেষ করতে আরো এক বছর সময় লাগতে পারে।
জানা গেছে, জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে ২০১২ সালের মধ্য জানুয়ারিতে ঢাকায় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মার্চ মাস থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিকো ডাইনকো ১শ’ ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই তিনটি ব্রিজসহ নোয়াখালী বসুরহাট এলাকায় ১টি, কুমিল্লা সদরে ১টি এবং ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ৩টিসহ মোট ৮টি ব্রিজের নির্মাণ কাজ করছে। ব্রিজগুলো নির্মাণে অরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট কোং লিঃ জাপান, কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ ইন্ডিয়া এবং ড্যাব কনসালটেন্স লিঃ বাংলাদেশ নামে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান সুপারভিশন করছে।
উল্লেখ্য, ষাটের দশক থেকে ফরিদগঞ্জ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ব্যক্তিরা ডাকাতিয়া নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলেছেন। নির্বাচন এলেই আশার বাণী শুনিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও নির্বাচনের পর তা ভুলে যান। এই ব্রিজটি নির্মাণ নিয়ে প্রয়াত কসমিক সফিউল্লাহসহ এই অঞ্চলের সচেতন মহল নানা কর্মসূচি পালন করে। অবশেষে ১৯৮৮ সালে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুরসহ এই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে ফরিদগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর ওপর বেইলি ব্রিজটি নির্মিত হয়।
কিন্তু কালের প্রবাহে ৩শ’ ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ ব্রিজটি দিয়ে যান চলাচলে ব্যত্যয় ঘটেছে প্রতিনিয়ত। ২০ বছর পূর্বে ব্রিজটি নির্মাণের সময়ে প্রস্থ কম থাকা বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করলেও কালের বিবর্তনে ২০ বছর পর বর্তমানে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে এ সড়কটি চিহ্নিত হওয়ায় এবং সময়ের পরিক্রমায় ঢাকা-চট্টগ্রামের বিকল্প সড়ক এবং চট্টগ্রাম-খুলনা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে এ সড়কটি পরিণত হওয়ায় দিনদিনই সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যান ও মালবাহী গাড়ি চলার হার বাড়ছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি ব্রিজটির উপর দিয়ে যাতায়াত করে। ব্রিজটির পাতগুলো যানবাহনের ভারে ভেঙ্গে পড়ায় প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটতো। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকরা একের পর এক রিপোর্ট প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেন। বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের প্রার্থীই বিজয়ী হলে বেইলি ব্রিজের স্থলে পাকা ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। বিএনপির টিকেটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য লায়ন মোঃ হারুনুর রশিদ পাকা ব্রিজটির ব্যাপারে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেন বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে বিজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে চাঁদপুরে এক টেলিকনফারেন্সে কথা বলার সময় এই বেইলি ব্রিজটির স্থলে পাকা ব্রিজ নির্মাণের দাবি করেন। সেই সময় শেখ হাসিনা ব্রিজটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনের পরে সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান পরাজিত হয়েও এই ব্রিজটির ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা করে যান। ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন সভায় ব্রিজটির ব্যাপারে তিনি চেষ্টা করছেন বলে জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ফরিদগঞ্জের কালিরবাজারে এক সরকারি সফরে এলে একটি সমাবেশে তাঁর কাছেও এই ব্রিজটি পাকা করার দাবি তুলেন সাংবাদিক শফিকুর রহমান। তিনিও এ বিষয়ে দেখার আশ্বাস দেন। অবশেষে সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নতুন ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকার জনগণ। তাদের কথা, যার অবদানেই হোক না কেনো, ব্রিজটি নির্মাণ অতি জরুরি ছিল। সেই কাজ বর্তমান সরকারের আমলে শুরু হওয়ায় আমরা সকলেই খুশি। এটি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।