নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি :–
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে নিভৃত পল্লীতে মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রত্যেক বছরের মত এবছরও অসাধারণ ফলাফল অর্জন করে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুন্ন রেখেছে মাহিনী উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, পাঠ্যক্রম ও সহ পাঠক্রম শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র/ছাত্রীদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে গত ৩বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হবার গৌরব অর্জন করেছে। এ বছর উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষ স্থান দখল করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দাশ নিরলস প্ররিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার যোগ্য নেতৃত্ব এবং অন্যান্য শিক্ষকদের নিরলস প্ররিশ্রম প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছে বলে এলাকার শিক্ষানুরাগী এবং অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়। এদিকে, ভালো ফলাফলের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাতিষ্ঠানিক স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ২০১২ সালে উপজেলা পর্যায়ে একমাত্র এ গ্রেডধারী প্রতিষ্ঠানের মর্যদাও লাভ করেছে।
চলতি এস এস সি পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ৬৯ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে জি পি এ-৫ অর্জন করেছে ১৭ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগে- ১০জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭জন। এছাড়া, বিজ্ঞান বিভাগে এ গ্রেড ৪জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এ গ্রেড ১৯জন, মানবিক বিভাগে এ গ্রেড ২০জন এবং এ মাইনাস গ্রেড পেয়েছে ৯জন।
২০১২ সালে এস এস সি পরীক্ষায় ৫৯জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জি পি এ-৫ পেয়েছে ৮জন। বিজ্ঞান বিভাগে ৭জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১জন। ২০১১ সালে ৬৬জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জি পি এ- ৫ পেয়েছে-৫জন। বিজ্ঞান বিভাগে ১জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪জন।
বিদ্যালয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়মিত উপস্থিতি, দৈনন্দিন পাঠগ্রহণ, ক্লাশ ডায়েরী বজায় রাখা, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী অনুযায়ী মাসিক মডেল টেষ্ট এবং প্রতি সপ্তাহে ক্লাশ টেষ্ট পরীক্ষা নেয়া হয়। এছাড়া, অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ এবং ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত ও স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও যতœ নেয়া হয়। এস এস সি পরীক্ষার্থীদের শতভাগ পাস নিশ্চিত ও ভালো ফলাফলের জন্য নবম শ্রেণীতে সিলেবাসের অধিকাংশ শেষ করা সহ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের নিয়ে প্রত্যেক বিষয়ের উপর পরীক্ষার কৌশল অনুসরণ করা হয়।
বিদ্যালয়টি শুধুমাত্র লেখাপড়ায় নয়। সহপাঠ্যক্রমেও পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। শিক্ষকদের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা বিকাশের প্রচেষ্টা চালানো হয়। উপজেলা পর্যায়ে বিতর্ক, রচনা ও বই পড়া প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুন্ন রয়েছে । ২০১২ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ান হয়। একই বছর বেসরকারি এনজিও ব্রাকের শিক্ষা কর্মসূচী পেইসের বিতর্ক প্রতিযোগিতায়ও চ্যাম্পিয়ান হয়। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বহ পড়া প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ান হয়। এছাড়া ২০১০ সালে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ভলিবল প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে রানার্স আপ হয়।
১৯৭২ সালে এলাকার শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক আলহাজ্ব ছিদ্দিকুর রহমান বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৪ সালের ২২ জুলাই থেকে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দাস প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তার দেশের বাড়ি চট্রগ্রামের বাঁশখালি উপজেলা জলদি গ্রামে।
প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দাস জানান, বিদ্যালযের শিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি শানিত করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। এছাড়া, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণলদ্ধ জ্ঞান শ্রেণী কক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ সাধন করা হয়।
