আরিফুল ইসলাম সুমন,ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :–
সাভারে রানা কমপ্লেক্সের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বজন হারাদের কান্না থামছেই না। এ ট্রাজেডীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার একজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলার রফিক ইসলাম নামে এক গার্মেন্ট কর্মী নিখোঁজ রয়েছে।
এলাকাবাসী ও শোকাহত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের উড়িয়াউন (বড়বাড়ি) গ্রামের মৃত নুরুল হোসেনের পুত্র রফিকুল ইসলাম (৪০)। সাভার রানা প্লাজায় প্যাটেন মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুধবার সকালে পরিবারের সাথে মোবাইলে শেষ বারের মত কথা বলে ফাঁটল ধরা রানা প্লাজায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগ দিয়ে এখন পর্যন্ত বাসায় ফিরে আসেন নি তিনি। বেঁচে আছেন, না নেই তাও জানতে পারছে না স্ত্রী, সন্তান, মা আত্মীয় স্বজন। তাদের কান্না আহাজারিতে তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
রফিকের স্ত্রী জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি একাই সাভারে বসবাস করছেন। প্রায় ৫ বছর যাবত তার স্বামী সাভার রানা প্লাজায় প্যাটেন মাস্টার হিসেবে ৫ তলায় কাজ করতো ।
স্থানীয়রা জানান, রফিকের গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী, সন্তান-মা আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে এখন শোকের ছায়া। একমাত্র পুত্র রফিক কি অবস্থায় আছে তা জনতে ব্যাকুল তার মা। কান্না বিলাপে কাটছে তাদের সময়। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে সহ অন্যান্যদের অবস্থা একই রকম।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের আসাদনগরের সন্তান মো. সাদেক জাফর মিয়ার মৃত্যু হয়েছে সাভার ট্রাজেডীতে। এখানকার বড়বাড়ির সন্তান মো. টিটু মিয়ার পুত্র সাদেক জাফর এলাকায় মিন্টু মিয়া নামে পরিচিত। তিনি লেখাপড়া শেষ করে খাদ্যপন্যের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান নেসলে কোম্পানীতে চাকুরী পান। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ছিলেন প্রিয়ভাজন। সাভারের রানা কমপ্লেক্স ট্রাজেডীতে অকালে মিন্টু মিয়া প্রাণ হারিয়েছে এ খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। লাশবাহী গাড়িতে গ্রামে আসে সবসময় হাস্যোজ্জ্বল মিন্টুর নিথর ক্ষত বিক্ষত দেহ। শবদেহ দেখে আত্মীয় স্বজন এর শোক মাতম আর এলাকাবাসীর কান্না, ব্যাথায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। আসাদ নগরে গ্রামের বাড়িতে চির নিদ্রায় শায়িত এখন মিন্টু মিয়া। গত দুই দিন ধরে আসাদ নগর এলাকায় মিন্টু মিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু আর সাভার ট্রাজেডীর কথাই হচ্ছে লোকের মুখে মুখে।
দেশে নানা অনিয়ম, অসচেতনতা , অবহেলা, উদ্ধার কাজে সরঞ্জামের অভাব, সরকারী ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতাই নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মিন্টু মিয়া সহ শত শত মানুষের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না এলাকার মানুষ। অব্যক্ত কস্ট আর বিক্ষুব্ধ মন সকলের । আর কত প্রাণ এভাবে অকালে অবহেলায় নিঃশেষ হবে এবং একের পর এক ঘটনার দোষীদের বিচার হবে কি এই প্রশ্নই ছিল সবার।
বাঞ্ছারামপুর আসাদ নগরের ইউপি সদস্য সুমন আহমেদ ও মিন্টু মিয়ার আত্মীয় মিঠু জানান, মিন্টু মিয়া নেস্লে বাংলাদেশ এর সাভার কার্যালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আসাদনগর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান মিন্টু মিয়া বিয়ে করেন ৫ বছর পূর্বে। এক ছেলে, এক মেয়ে, শিক্ষিকা মা, স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন সাভারে ভাড়ায় নেয়া বাড়ীতে। সাভার ট্রেজেডির দিন রানা কমপ্লেক্সের ৪ তালায় নেসলের অফিস এ যান তিনি। কার্যক্রম বন্ধসহ মালামাল সবকিছু ঠিকমতো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে কি-না সে পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে ঘটনার শিকার হন। ভবন ধসে পড়লে বিল্ডিং ছাদ ভেঙ্গে মিন্টু মিয়ার উপর পড়ে। গুরুতর আহত হন তিনি হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের পর লাশবাহী গাড়ীতে করে বাঞ্ছারামপুরের আসাদনগর গ্রামে আনা হয় লাশ । বুধবার রাতে জানাজা শেষে তার দাফন হয় এ গ্রামে। মিন্টু মিয়ার সন্তান, স্ত্রী, মা শোকে হতবিহবল। কি হবে মিন্টুর পরিবারের সদস্যদের, কিভাবে স্ত্রী সন্তানের আগামী দিন কাটবে এ প্রশ্নই এখন এলাকাবাসীর।