কুমিল্লা:–
নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কুমিল্লার বিদায়ী জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসানের বিদায়ী সংবর্ধনা শনিবার উপজেলা অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইদুল আরীফের সভাপতিত্বে বিদায়ী সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিদায়ী জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসান।
বিদায়ী কুমিল্লা জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসান বলেন, আপনারা আমাকে যে ভাবে বিশেষায়িত করেছেন আমি এত গুণের অধিকারী নই। জেলা প্রশাসক হিসেবে আমাকে সৎ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এটাই আমার কাজ। জেলা প্রশাসক বিশাল এক দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা সভা, সমন্বয় সভা, রাজস্ব সভা হতে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগের সব ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে সব কাজ করতে হয়। যে কোন বিভাগের সমস্যা হলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। কুমিল্লায় কাজী নজরুল ইসলাম, ধীরেন্দ্রনাথ, এস ডি বর্মণের মত লোকদের স্মৃতিগাঁথা এবং পদচারণা রয়েছে। আমি এখানে কাজ করে নিজেকে ধন্য মনে করছি। দেড়শ বছরের পুরনো কুমিল্লা পৌরসভা আমার হাত ধরে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে। আমাকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌর নির্বাচন করতে হয়েছে। কোন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। কুমিল্লায় তহশিলদার, সচিব, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সততার মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ প্রার্থীরা যাতে টাকা পয়সা দিয়ে মিথ্যা আশ্বাস, প্রতারিত এবং হয়রানির শিকার না হয় তাদের সাবধান করার চেষ্টা করেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত, ঝরে পড়া রোধ, মিড ডে মিল চালূ করেছি। কুমিল্লার সংস্কৃতি অঙ্গনে বন্ধ্যাত্ব ছিল। আমি নিজে শিল্প কলা একাডেমীর একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সংস্কৃতি অঙ্গনকে উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া জাতীয় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাট্য কর্মী, সংগীত শিল্পীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। কুমিল্লা জেলা শহরে ইজি বাহক চলাচল বন্ধ, বাস স্টেশন দুরবর্তী স্থানে নিয়ে কুমিল্লাকে স্ন্দুর নগরী করেছি। সব ধর্ম, পেশার মানুষকে একত্রিত করে শান্তি ও সম্প্রীতির র্যালি করেছি।
বিদায়ী জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসান শনিবার নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিদায়ী সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
এসময়, অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ ছাদেক হোসেন ভুঁইয়া, রাজনীতিবিদ এ কে এম মনিরুজ্জামান খাঁন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসহাক মিয়া, বক্সগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান গোলম রসুল, ঢালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান ভুঁইয়া বাছির, উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক, থানা অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার নাথ, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের আবু, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার শাহজাহান, উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার আফজাল-উর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জালাল আহমেদ ভুঁইয়া, প্রমুখ।
রেজাউল আহসান আরো বলেন, আমি যা কিছু করেছি, সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা নিয়ে করেছি। আমরা কোন দলের নই। আমরা সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যে ক্ষমতায় আসবে, আমরা সেবা দেবো। তিনি কুমিল্লা জেলা স্কুল ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রে কারো অনুরোধ রক্ষা করি নাই। তাদেরকে বিনয়ের সাথে বলেছি অন্যায় কাজ করা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ অঞ্চলের প্রবেশ দ্বার। ১৬টি উপজেলা, ২৮৪টি ইউনিয়ন, ১০৬ বর্গ কিলোমিটার বর্ডার এলাকা এবং ৫৩ লক্ষ লোকের বসবাস রয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড, সমস্যা, বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজ-খবর নেয়া সহ সবক্ষেত্রে সবাইকে নিয়ে একটি পরিবারের মত কাজ করতে চেয়েছি। কোন ফাইল পেন্ডিং ছিলনা।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জন আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। প্রত্যন্ত এলাকার নিরীহ লোকজন সমস্যা নিয়ে ফোন করলে তাদেরকে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করেছি। গত ২বছর ৭মাস দায়িত্বপালনকালে আমার ভালো ও বর্ণিল সময় কেটেছে। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইদুল আরীফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা তাকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করবেন।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক রেজাউল হাসানকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ ক্রেষ্ট প্রদান করেন। এছাড়া তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এদিকে, গত ২৪ এপ্রিল সাভারে ভবন ধ্বসে নিহত এবং আহতদের স্মরণে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।