লাকসাম প্রতিনিধি:–
আনোয়ার হোসেন (৩০) দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি পাশের মুদি দোকানের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। ৮ বছর আগে আছমা আক্তার নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে। সংসারে সন্তান না হওয়ায় দুই বছর আগে চাঁদনী আক্তার ময়না নামের এক মেয়ে শিশুকে দত্তক আনে। এরই মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে তার সংসারে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় আমানত উল্লাহ বাদশা (৩ মাস)।
এই সন্তান জন্মের পর তাদের পরিবারে নেমে আসে আনন্দের বন্যা। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই তার দিন চলছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস- গত সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় একদল বখাটে যুবক পেট্রোল ঢেলে তার শরীরে আগুন দিলে পরদিন তার মৃত্যু হয়। সে চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছোটখিল গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ও সাংবাদিক এমরান হোসেন বাপ্পির বড় ভাই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ী আনোয়ারের চাচা সৌদি প্রবাসী আবদুল কাদেরের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেড়কোটা গ্রামের আবদুল মমিন তার স্ত্রীর জন্য ১০ হাজার টাকা পাঠায়। আবদুল কাদেরের ছেলে রাসেল ওই টাকা আবদুল মমিনের স্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে তার ভাতিজা আজাদকে দেয়। আজাদ টাকাগুলো চাচির হাতে না দিয়ে খরচ করে ফেলে।
এনিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাসেল তার চাচাতো ভাই ব্যবসায়ী আনোয়ারকে সাথে নিয়ে আজাদকে জিজ্ঞেস করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আজাদের নেতৃত্বে তার বখাটে বন্ধু দেড়কোটা গ্রামের জিয়া উল্লাহ, জুয়েল, লোকমান হোসেন, সুজন, সুমন, আবদুল কাদের, সবুজ, নয়ন ও ফেলনার সাদ্দাম হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আনোয়ারের দোকানে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তারা আনোয়ারকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে।
এক পর্যায়ে আনোয়ারের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। মুহুর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা তার শরীর জ্বলসে যায়। পরে তারা দোকান লুট করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা জুয়েলকে আটক শেষে থানায় সোপর্দ করে। আশংকাজনক অবস্থায় আনোয়ারকে উদ্ধার করে প্রথমে চৌদ্দগ্রাম ও কুমিল্ল¬া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় তার মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকেলে ব্যবসায়ী আনোয়ারের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসলে স্বজন ও আশ-পাশের শত শত নারী-পুরুষের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাদ মাগরিব জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী আছমা আক্তার বার বার মুর্ছা যেয়ে বলছেন, যারা আমার স্বামীকে পুড়িয়ে মেরেছে আল¬াহ তাদের বিচার করুক। তিন মাসের সন্তান বাদশা এখন বাবা ডাকবে কাকে। তার ভরণ পোষণ দিবে কে ?
গ্রামের অধিকাংশ নারী-পুরুষ কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, নিহত আনোয়ার ভদ্র ও নম্র মেজাজী ছিল। এলাকায় তার কোন শত্রু ছিল না। ছোট ও বড় সকলের সাথে তার সু-সম্পর্ক ছিল। তাদের প্রশ্ন : কি অপরাধ ছিল ব্যবসায়ী আনোয়ারের। কেন তাকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। তার স্ত্রী ও সন্তানদের কে ভরণ পোষনের দায়িত্ব নেবে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই ইকবাল হোসেন জানান, ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিহত ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উলে¬খ করে মামলা দায়ের করে। আনোয়ার মারা যাওয়ার কারণে পরবর্তীতে ওই মামলায় ৩০২ ধারা সংযোজিত হবে। এঘটনায় জুয়েলসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
