মোঃ কামরুজ্জামান জনি, স্টাফ রিপোর্টার:–
কুয়াশার চাদর ভেদ করে উকি দিয়েছে সকালের সোনার রোদ। মদ্য গ্রীষ্মর মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠের সোনালি ফসল। লেজ ঝোলা ফিঙ্গে আর শালিক অনবরত ঝগরা করে,তারপর উড়ে যায়। এসব কিছু দেখার ফুরসত নেই কৃষকের। মাঠের পাঁকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল হাতচুড়া বিলে চলছে এখন ধান কাটার উৎসব। মুরাদনগরের ‘শস্য ভান্ডার’ খ্যাত বৃহত্তম এই বিলের ফসলের ক্ষেতে ধান কাটার ধুম পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের হিসেবে এবার মুরাদনগরে এই বিলসহ আঠারো হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরোর চাষ হয়েছে। মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন রঞ্জন মজুমদার বলেন, ‘পোকার আক্রমন ছিল না। নিয়মিত বিরতিতে বৃষ্টিও হয়েছে। প্রতি হেক্টরে এবার ধান হয়েছে গড়ে ৬ মেট্রিক টন করে। এই হিসেবে এই বিলসহ মুরাদনগরে ধান হবে একলাখ ৯ হাজার ২৬০ টন।
বুধবার সকালে মুরাদনগরের হাতচুড়া বিল, নিশ্চিন্তাপুর, দোলার পাড়, লাইট্টার বিলের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, পূরোধমে চলছে ধান কাটার কাজ।
কাজিয়াতল এলাকার কৃষক ধনু মিয়া ভূইয়া (৫০) নিশ্চিন্তাপুর বিলে দুই কানি (৮০ শতক) জমি বর্গা নিয়ে উচ্চ ফলনশীল বিআর-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। বর্গা বাবদ জমির মালিককে প্রতি কানিতে দিতে হয়েছে আড়াই হাজার টাকা করে। সঙ্গে বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম মিলিয়ে কানি প্রতি প্রায় ছয় হাজার টাকা পড়েছে তাঁর।
ধনু মিয়া ভূইয়ার কাছে ফলনের কথা জিজ্ঞেস করা মাত্রই একটু হাসেন। তারপর বলেন, ‘খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে এবার মোটামোটি লাভ হবে। ধান উঠলে অল্প নগদ টাকা হাতে আসবে। কিছু ধান রাখতে পারলে কয়েক মাসের খোরাকির চিন্তাও থাকবে না। ’
বিলের মাঝামাঝি থেকে কাটা দানের আটিঁ মাথায় নিয়ে ফিরছিলেন কৃষি শ্রমিক আমির হোসেন (৩৪)। তিনি বলেন, ‘বিলের শেষ অংশ থেকে দিনে তিনবার এপার-ওপার করে গেরস্তের বাড়ি ধান পৌঁছে দিলে আর রত (শরীর) চলে না।’
ফেরার সময় কৃষি শ্রমিক আমীর হোসেনের মাদ্রাসা পড়–য়া ছেলে রাসেল সরকারের সঙ্গে দেখা। তার কাধেঁ ধানের আঁটি। তার মুখেও হাসি।
