কামরুল হাসান:–
কুমিল্লাবাসীর প্রাণের দাবী ছিল কুমিল্লায় একটি পূর্নাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী পাকিস্তান শাসনামলের প্রথম থেকেই শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। তারপর রাজপথের আন্দোলন। প্রাচীন সমতট ভূমির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল কুমিল্লায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কুমিল্লার আপামর জনতাকে বিভিন্ন সময় মাঠে নামতে হয়েছে। ১৯৬২ সালে কুমিল্লায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেলেও চরম আঞ্চলিকতার রোষানলে তা হারিয়ে যায়। যেটা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা ছিল কুমিল্লায় তা বর্তমানে সুপ্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর আবারো আন্দোলন। আবারো অপেক্ষা। দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে কাঙ্খিত সেই বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য। দেশ স্বাধীনের পর অনেক সরকার পরিবর্তন হলেও কেউই কুমিল্লাবাসীর এই দাবীটি গুরুত্ব দেয়নি। অবশেষে ২০০৩ সালে কুমিল্লার প্রাণের দাবীর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কুমিল্লার টাউন হলের এক জনভায় তৎকালীর চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কুমিল্লায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দেন। কুমিল্লার ১২ জন এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৬ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়। একই বছর ৭ ফেবরুয়ারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঐতিহাসিক লালমাই ময়নামতির পাদদেশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অতি দ্রুত নির্মান কাজ সম্পন্ন করে ৩০০ জন ছাত্র ভর্তি, ৩০ জন শিক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে ২০০৭ সালের ২৮ মে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। শুরু হয় পথচলা।
শুরু থেকেই বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্র আর সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটা কাটতে না কাটতেই শুরু হয় আরেকটা। ২০১০ সালের এপ্রিলে কুমিল্লার সদর আসনের এমপি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে সংকোচন করে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও ভিক্টোরিয়া কলেজকে পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাব করেন। চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রতিষ্ঠা হওয়ায় সেই প্রস্তাব অনুযায়ী এবং বর্তমান ভিসি ড. আমির হোসেন খানের যোগসাজেসে একই বছর ১০জুন শিক্ষমন্ত্রণালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে রূপান্তরের জন্য সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে প্রস্তাব পাঠাতে কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠায়। যার স্মারক নং শিম/ শা:/১৭/১০এম-৪/২০০১(অংশ-১)/৩৩ । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সিন্ডিকেট সদস্যদের বরাত দিয়ে সিন্ডিকেটের অনুমোদন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ফুঁসে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কুমিল্লার আপামর জনগন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লাবাসীর তীব্র আন্দোলনের ফলে মুখ থুবরে যায় সরকারের এই হীন প্রচেষ্টা। একই ষরযন্ত্রে আবারো লিপ্ত একটি মহল। আগামী ২০ এপ্রিল শনিবার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করতে কুমিল্লা আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কুমিল্লার সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। কুমিল্লাবাসীর বিভিন্ন দাবীতে দেয়ালে দেয়ালে সাটানো হয়েছে পোষ্টার। ঠিক তেমনি একটি পোষ্টার সাটানো হয়েছে দোকান মালিক সমিতির নামে। স্থানীয় এমপি হাজী বাহারের নাম সম্বলিত বিভিন্ন দাবী পোষ্টারটিতে করা হয়েছে। অন্যতম দাবীটি হল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে রূপান্তর এবং ভিক্টোরিয়া কলেজকে পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। দোকান মালিক সমিতির এমন দাবীতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষর্থীসহ কুমিল্লার সচেতন মহল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন দাবীকে রাজনৈতিক হিংসা পরায়নতা ছাড়া আর কিছুই ভাবছেন না। এ ব্যাপারে কুমিল্লার উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতারও প্রশ্ন তোলেন তারা। একাধকি শিক্ষার্থী বলেন, জানিনা কুমিল্লার প্রতি কতটুকু ভালবাসা, কতটুকু মমত্ব নিয়ে তাদের এ দাবী, তবে কুমিল্লার জনগন তাদেরকে নিশ্চই স্বপ্ন ভঙ্গ করতে নয়, বরং স্বপ্ন পূরন করতেই সংসদে পাঠিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেন,-যদি কুমিল্লার জন্য কিছু করতে না পারেন তাহলে যেটা আছে সেটা কেড়ে নিতে আপনারা এত তৎপর কেন?
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আহসান উল্যাহ বলেন, ভিক্টোরিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর করবে ভাল কথা, তাই বলে অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে ছোট করে কেন? এধরনের দাবী সম্পূর্ন অযৌক্তিক। আমরা শিক্ষক সমিতি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে তাদেরকে এমন অযৌক্তিক দাবী প্রত্যাহারেরও দাবী জানাই।
সাদা দলের শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠা হওয়ার কারনেই বার-বার ষরযন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। এমন কোন অপতৎপরতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা বাতিল করা হবে।
