আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ—
‘মা আমার জন্য দোয়া করো। তিন মাসের ছুটি পেয়েছি। আগামী ৫ এপ্রিল বাড়ি আসছি। এসে নতুন ঘর করবো।’ মায়ের সাথে সর্ব শেষ এমন কথাই হয়েছিল মামুন রহমানের (২৮)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের পূর্ব কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোখলেছুর রহমানের দুই ছেলে আর দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় মামুন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে স্থানীয় বাজারে ছোটখাট ব্যবসা করতেন। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য পাঁচ বছর আগে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যে। নিষ্ঠাবান মামুনের পরিবারে ফিরে আসে স্বচ্ছলতা।
বাবার করা টিনের ঘর ভেঙ্গে গড়তে চান নতুন পাকা ঘর। তাইতো মাত্র এক সপ্তাহ আগে মুঠোফোনে মাকে মনের এমন ইচ্ছাটিই জানিয়েছিলেন মামুন। ছেলের ইচ্ছার কথা শুনে হেসে মাও তার নতুন ইচ্ছার কথা জানালেন ছেলেকে। মা বললেন ‘শুধু নতুন ঘর করলেই হবেনা। এবার নতুন একটা মানুষও আনতে হবে।’ তাই ছয় মাসের ছুটি নিয়ে আসতে মা তার ছেলেকে আকুতি জানালেন।
এমন অনেক কথাই জানা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে মামুনদের বাড়িতে গিয়ে। সব কিছুই এখন অতীত। মামুনের বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। মা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। ছোট ভাই বোন আর বাবা নির্বাক। ভিড় করেছেন নারী শিশু ও সহপাঠীরা। আহাজারি চলছে গোটা বাড়িতে। সহপাঠী মো. ফারুক মিয়া শোক সংবাদ পেয়ে চট্রগ্রাম থেকে কুট্টাপড়া গ্রামে এসেছেন। তিনি জানালেন মামুন ছিল শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের। আত্বীয় স্বজনদের মধ্যে চলছে লাশ দেশে আনা নিয়ে নানা কথা। মামুন ৫ এপ্রিল হয়তো দেশে আসবে তবে তা হবে নিষ্প্রান দেহে।
গত রোববার রাতে খবর আসে সৌদি আরবের জেদ্দায় মামুন মারা গেছেন। ওই দেশের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় মামুন তার শয়ন কক্ষে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ভেঙ্গে গেছে মামুনের পরিবারের স্বপ্ন। সেই সাথে নতুন ঘর করা হলো না মামুনের।
Check Also
নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ালেন রেড ক্রিসেন্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :– সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তার পর এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে ...