শামসুজ্জামান ডলারঃ—
আজ ও সারাদেশে ভাষা সৈনিকদের নামের তালিকা না হওয়া মতলব উত্তরের এই দুই ভাষা সৈনিকরাও ইতিহাসে ঠাই পায়নি । তবে বাঙ্গালী জাতি যতদিন থাকবে, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে মানুষের মনের ইতিহাসে তাদের নাম স্বরনী হয়ে থাকবে । ভাষা সৈনিক আবু নাছের মোঃ ওয়াহিদ।
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তরের নিজ ছেংগারচর গ্রামে ১৯২৬ সালে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুর রহিম। ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে আর্তমানবতার সেবায় দূর্ভিক্ষ পীড়িত জনতার মাঝে সাহায্য সামগ্রী বিতরনত অবস্থায় শিক্ষা জীবনের মূল্যবান ৩টি বছর ব্যয় করেন। ১৯৪৮সনে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতে অর্নাসে ভর্তি হন। ১৯৫১সালে অর্নাস পাশ করে এম .এ পাশ করেন ও পরে এল.এল.বি. সম্পন্ন করেন। তিনি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষকতা করেন। তিনি সিটি ল কলেজে ও মিরপুর ল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি কিছুকাল দৈনিক সংবাদে সাংবাদিকতা করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে স¦াধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে কুড়ে ঘর মার্কা নিয়ে সংসদ নিবার্চন করেন । ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহিদ বরকতের ঘনিষ্ট বন্ধু আবু নাছের মোঃ ওয়াহিদ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারী বাঙ্গালীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করলে ও সকল ভাষাসৈনিদের নাম সকলে জানেনা । ভাষাসৈনিক আবু নাছের মোঃ ওয়াহিদ ২০১২সালের শেষের দিকে বার্ধক্য জনিত কারনে ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃর্ত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা দেখে যেতে পারেননি। তিনি চেয়ে ছিলেন তার মৃত্যুর আগে যেন বাংলাদেশের প্রতিটি অফিস আদালতে শুধু বাংলা ভাষার প্রচলন থাকে। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের প্রায় অনেক অফিস আদালতেই ইংরেজী ভাষার প্রচলন দেখা যায়।
ভাষা সৈনিক জয়নুল আবেদীন চৌধুরীঃ
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে প্রায় ১৯২০সালে সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারেভাষা সৈনিক জয়নুল আবেদীন চৌধুরী জন্ম গ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকেই জয়নুল আবেদীন চৌধুরী ছিলেন মেধাবী ও চৌকস বুদ্ধিমত্তা । তার পিতা মরহুম ডাঃ সোলেমান আবেদীন চৌধুরী চট্রগ্রামে চাকরী করার সুবাদে জয়নুল আবেদীন চেীধুরী চট্রগ্রামে চট্রগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজে লেখা পড়া করতেন । চট্রগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ম্যাটিক ও ইন্টারামিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছিলেন। ততকালীন পাক-পাকিস্তানী মাধ্যমিক শিক্ষকসমিতির সাধারন সম্পাদক ছিলেন। শিক্ষকসমিতির মুখপত্র মাসিক এডুকেশন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। দৈনিক অবজারবার ও বাংলা পত্রিকার কলামিস্ট ছিলেন । ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। ১৯৭১সালে মুক্তিযোদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা দিতেন এবং ভারতে প্রশিক্ষনের জন্য সকল ব্যবস্থা ও আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন। তবু ও ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক জয়নুল আবেদীন চৌধুরী জীবনে পায়নি কোন পদক, সম্ভধনা বা সরকারী বেসরকারী কোন অনুদান । ১৯৭৮ সালের ২৩ জুন হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে এই মহান ভাষা সৈনিক জয়নুল আবেদীন চির বিদায় নেয়।