বিজয়! বিজয়!! বিজয়!!! আমাদের এ বিজয় অতি আনন্দের, অহংকারের ও গৌরবের। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আত্মবিসর্জনের মধ্যদিয়ে আমরা অর্জন করেছিলাম এই মহান আনন্দ, অহংকার ও এ গৌরব। এ অর্জিত মহান বিজয়ে সেইদিন আকাশ-বাতাস বাংলার মাঠঘাট সবুজপ্রান্তর চিৎকার করে বলেছিল, আমাদের জয় হয়েছে, আমরা বিজয়ী হয়েছি, বাংলা বিজয় লাভ করেছে। বর্জকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল, জয়, বাংলার জয়। অগনিত মানুষের মনে-প্রাণে, ঘরে-ঘরে উচ্চারিত এ ধ্বনি শিহরণে আনন্দে নেচে ছিল দেশের প্রকৃত দেশপ্রেমিকের পবিত্রপ্রাণ।
দেশমাতৃকা ও জাতিস্বত্ব¡াকে টিকিয়ে রাখতে আমরা বাঙালিরা তখন জ্বলে উঠেছিলাম এতটাই তেজদীপ্ততায় যে, পৃথিবীর অন্যসব জাতির ইতিহাসকে হার মানিয়ে এক ব্যতিক্রর্মী দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। সেইদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়েছিল, আমাদের এ বীরত্ব দেখে। আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম, বাঙালি জাতি ধৈর্য্য আর সাহসীকতা দিয়ে অসাধ্যকেও জয় করতে পারে। ধর্ম-বর্ণ ভেদ করে কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে জানে বাংলার দামাল ছেলেরা। যতরকম কুচক্রিমহল-বিশ্বাসঘাতক-দুষ্ট লোকই আসুক না কেনো সামনে, এ জাতিকে কলঙ্কিত করতে কেউ পারেনা। পারে না নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লাগিয়ে আগুন জ্বালাতে, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে কেউ। সকল পৈশাচিকতার জাল ছিন্ন করে এ জাতি সেদিন এ বিজয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছিল সু-উজ্জ্বলভাবে আমাদের ’৭১-এর এ মহিমান্বিত বিজয়।
এ অনিভিপ্রেত যুদ্ধ চাপিয়ে পাকিস্থানী হায়েনারা ’৭১-এ দীর্ঘ নয় মাস আমাদেরকে ক্ষত-বিক্ষত করে পরাজয়ের কালিমা লেপন করে ঠিকই এক সময় পেছনে ফেরে। কিন্তু ইতিমধ্যে বাংলার নিরপরাধ ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ, অগনিত দামালের পবিত্র রক্ত ও সুকোমল মায়ের জাত নারীর সম্ভ্রম ধুলোয় খায় লুটোপুটি; সারি সারি স্বজনের লাশ আর লাশ সামনে রেখে এ বীরের জাতি-বাঙালি জাতি মা-মাটিকে ভালোবেসে জয় ছিনিয়ে আনে পাক হায়েনাদের বিরুদ্ধে। আর এটা সম্ভব হয়েছিল, সর্বঐক্য, বাঙালির খাঁটি দেশপ্রেম, নিজ মাটির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সঠিক নেতৃত্বের প্রতি অকুন্ঠ শ্রদ্ধাবোধ।
কিন্তু সেদিন যে আদর্শ ও চিন্তা নিয়ে আমরা আবালবৃদ্ধবনিতা যুদ্ধ করেছিলাম দেশের জন্য, অর্জন করেছিলাম এ মহান বিজয়, আমরা কি এ বিজয় ধরে রাখতে পেরেছি? এ বিজয়ের প্রতি কি আমরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শণ করতে পেরেছি? সকলে হাতে হাত রেখে দেশের স্বার্থ রক্ষায় এবং উন্নয়নে কি আমরা কাজ করতে কি পেরেছি পরবর্তীতে? এককথায় বললে না, আমরা পারিনি; আমরা ব্যর্থ হয়েছি। দেশের স্বার্থের চেয়ে আমরা ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছি। ক্ষমতার লোভে আমরা হেনহীন কাজ নেই যা আমরা করিনি! রাজনীতির নামে এদেশের কথিত উচ্চ শ্রেণীর ব্যক্তি-গ্ষ্ঠোীরা বরাবরই বাঙালি জাতির মহা সর্বনাশ করেছে, করছে। যে যেমন পারছে, তেমন খেলা তারা খেলছে জনগণকে নিয়ে। প্রতিনিয়তই রাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে জনগণ হয়েছে-হচ্ছে নিস্পেষিত। মূলতঃ শাসকগোষ্ঠী ও রাজনৈতিকদের চরম বৈরীতা-হীনতা, ক্ষমতা ও আদিপত্যের মোহ আমাদেরকে মূল অর্জন থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আমাদের মহান অর্জনকে করে দিয়েছে ম্লান। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আজ আমাদের মহান জাতীয় নেতাদেরকে সম্মান জানাতেও আমরা হয়ে যাই দ্বিধা বিভক্ত! আমাদেরকে ভুল ইতিহাস শিক্ষা দিয়ে করা হচ্ছে অন্ধ!
আর এর ধারাবাহিকতা চলছে বছরের পর বছর। যতই দিন যাচ্ছে ততই রাজনৈতিক ব্যক্তি-গোষ্ঠী’রা ‘রাজনীতি’র নাম করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলছে। দেশ এক ভয়াল পরিন্থিতির দিকে এগুচ্ছে। যারা ক্ষমতায় যায়, তারাই সন্ত্রাস ও অনৈকিতার পথ ধরে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চায়। আর যারা বিরোধী দলে থাকে, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসাত্মক সব পথ অবলম্বন করে। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যার যেমন ইচ্ছে বেপরোয়া হয়ে আমাদের মহান অর্জনগুলোকে করছে ভুলন্ঠিত। আমাদের পতাকাকে তারা অসম্মান করে অপরাজনীতির চর্চা শুরু করেছে দেশে। আমরা বলবো কি, এখনও সময় আছে, আর হানাহানি না করে, খুনখারাবি-রাহাজানি বন্ধ করুন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এক হয়ে কাজ শুরু করুন। ভেদাভেদ ভুলে একই পতাকা তলে সমবেত হয়ে নিজেরা বাঁচুন, আমাদেরকে বাচাঁন, বাঁচান দেশ-জাতি।
পরিশেষে আমরা বলবো, আসুন, আমরা এ বিজয় ও আমাদের সকল অর্জনকে সম্মান জানাতে একই সুরে গাই,‘ আমরা বাঙালি জাতি বীরের জাতি, শির নত করি না কারো তরে। আমরা সবাই ভাই ভাই, আমাদের কোনো ভেদাভেদ নাই। আমরা বাঙালি জাতি, এসো সবাই আমরা বাংলার গান গাই’।
লেখক: কবি, কলামিস্ট ও সংগঠক
গৌরীপুর, দাউদকান্দি, কুমিল্লা।
Check Also
মিনি ওয়াক-ইন-সেন্টারের মাধ্যমে রবি’র গ্রাহক সেবা সম্প্রসারণ
ঢাকা :– গ্রাহক সেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মোবাইলফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড সম্প্রতি মিনি ওয়াক ...