লাকসাম / ১০ ডিসেম্বর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)——–
১১ই ডিসেম্বর লাকসাম মুক্ত দিবস। পাকবাহিনীর কবল থেকে স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধারা এদিন কুমিল্লার লাকসামকে শত্র“ মুক্ত করেন। ২৫শে মার্চ ঢাকা শহরে পাকবাহিনী বাঙ্গালী নিধন শুরু করলে সেদিন থেকে লাকসামের মুক্তি পাগল মানুষ পাক সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করা এবং সুষ্ঠুভাবে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য লাকসামকে ৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। চারিদিকের সীমানা নিয়ে গঠিত ৪টি জোনের কমান্ডের সঙ্গে একাধিক প¬াটুন গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে লাকসামের জংশন এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়। প্রথমে এর দায়িত্বে ছিলেন কুমিল¬া বুড়িচংয়ের সুবেদার আবদুল জলিল (লাল মিয়া)। পরবর্তী সময়ে যোগদান করেন ক্যাপ্টেন মাহবুব, দিদারুল আলম, মেজর এনাম আহম্মদ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ফ্লাইট সার্জন সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধের সময় এফ.এফ বাহিনীর প্রধান ছিলেন, আলহাজ আবুল বাশার, বিএলএফ কমান্ডার সায়েদুল ইসলাম। পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে অস্ত্রসমূহ লাকসাম জিআরপি থানা হতে ও কিছু লাইসেন্সধারী অস্ত্র বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৪ই এপ্রিল লাকসামের পেরুল এলাকায় পাকবাহিনীকে প্রথম প্রতিরোধ করে মুক্তিযোদ্ধারা। লাকসামের আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হাসনাবাদ ইউনিয়নে পাকবাহিনীর সাথে প্রচন্ড যুদ্ধে ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। গৈয়ারভাঙ্গায় শহীদ হন ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা। খিলা রেলওয়ে ষ্টেশনে ২ ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটিতে পূতে রাখে পাক সেনারা। এছাড়াও যুদ্ধকালীন লাকসাম অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
লাকসাম রেলওয়ে জংশনের অদূরে থ্রী-এ সিগারেট ফ্যাক্টরীতে এ অঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনীর মূল ঘাঁটি ছিলো। এ অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনা, অস্ত্র এবং যুদ্ধের যাবতীয় উপকরণ সরবরাহ করা হতো এখান থেকেই। এ ঘাঁটিতে বিভিন্ন স্থান হতে বাঙালি নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীদের ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে পাশেই বেলতলী নামক স্থানে মাটি চাপা দেয়া হতো। বর্তমানে এ স্থানটি ‘বেলতলি বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। লাকসামের উত্তরে বিজয়পুর (বর্তমান সদর দক্ষিণ উপজেলা), পশ্চিমে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে সোনাইমুড়ি এবং পূর্বে ভারত সীমান্ত ছিলো এ অঞ্চলে পাকবাবাহিনীর যুদ্ধ এলাকা।
লাকসামের মুক্তিসেনাদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে ৮ই ডিসেম্বর থেকে পাকবাহিনী পেছনে হটতে থাকে এবং ১১ই ডিসেম্বর লাকসাম অঞ্চল মুক্ত হয়।
মোঃ আবদুর রহিম
লাকসাম, কুমিল্লা