ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ৩০ নভেম্বর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———
সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের “আখিঁতারা মনিরুল হকের বাড়ি হইতে দেওজুরির খাল পর্যন্ত রাস্তা মেরামত” প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করছেন এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য মনজুরিবালা সরকার। কর্মসূচীর নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দৈনিক মজুরি পাবেন ১শ’ ৭৫ টাকা। কিন্তু মনজুরিবালার দৈনিক মজুরি মাত্র ১শত টাকা। কারণ হিসেবে এ হতদরিদ্র বিধবা নারী জানান, এই কর্মসূচীর তালিকায় তার নাম নেই। এ প্রকল্পের (তালিকা ভূক্ত) শ্রমিক মো. রবিউল্লা মিয়ার পরিবর্তে তাকে দৈনিক ১শ’ টাকা মজুরির চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ কে দিয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসহায় এ নারী মুখ খুলতে নারাজ। গত ২৭ অক্টোবর সরেজমিন প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রকল্পে ৪৫ শ্রমিক কাজ করার কথা। কিন্ত কাজ করছেন মাত্র ৩৭ শ্রমিক। বাকি ৮ শ্রমিককে প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকেরা চিনেনই না। কোনদিন তাদের কাজে আসতেও দেখেননি তারা। নিয়মিত কর্মরত শ্রমিক ফারুক মিয়া, মমিন মৃধা, জিতেন্দ্র সরকার, কনা রাণী সরকার, চাঁনবানু বেগম, দিপালী রাণী সহ অনেকে জানান, কাজ শুরু থেকেই এ প্রকল্পে ৩৭ শ্রমিক কাজ করছেন। মাঝে মধ্যে ৪/৫ জন শ্রমিক অনুপস্থিতও ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, এই প্রকল্পে অন্তত ৮ থেকে ১২ শ্রমিক ১শ’ টাকা মজুরি চুক্তিতে কাজ করছেন। বাকি ৭৫ টাকা পাবেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিউল্লা মিয়া ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামের ইদন খাঁ’র ছেলে। তিনি পেশায় একজন বাউল শিল্পী এবং ভালো বংশীবাদক। রবিউল্লার ঘনিষ্ট লোকেরাসহ এলাকার অনেকের দাবি, অনেকেই জানেন না, কিন্তু শ্রমিক তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। ১০০ টাকা দিয়ে কাজ করান, আর ৭৫ টাকা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও মেম্বাররা ভাগবাটোয়ারা করছেন। এই কর্মসূচীতে অনিয়ম শুধু নোয়াগাঁও ইউনিয়নে নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলমান অনেক প্রকল্পকাজেও হেরফের চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চরম অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্প” কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, এ কর্মসূচীর অনেক প্রকল্পকাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় স্থানে। যা স্থানীয় জনসাধারণের কোনো উপকারেই আসবে না। প্রকল্পকাজে উপকারভোগী (শ্রমিক) বাচাইয়ে ব্যাপক স্বজনপ্রীতি হয়েছে। উপকারভোগীর তালিকায় স্বচ্ছল পরিবারের অনেকের নাম অন্তভূক্ত করা হয়েছে। বঞ্চিত রাখা হয়েছে অস্বচ্ছল পরিবারের অনেক সদস্যকে। আর এতে আর্থিক ফায়দা লুটে যাচ্ছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পে শ্রমিক হাজিরা খাতা থাকার নিয়ম থাকলেও কোথাও তা মানা হচ্ছে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পি.আই.ও) মো. রইস উদ্দিন মুকুল জানান, চলতি অর্থ বছরে ১ম পর্যায় কর্মসংস্থান কর্মসূচীর কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলবে ৪০ দিন। উপজেলায় মোট বরাদ্দ ৮১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। প্রকল্প ৩৯টি। উপকার ভোগীর (শ্রমিক) সংখ্যা ১১শ’ ৬৩ জন। কাজ শুরু হয়েছে ১৭ নভেম্বর থেকে। প্রত্যেক শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ১শ’ ৭৫ টাকা। প্রতি সপ্তাহে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মজুরীর টাকা প্রদান করা হয়। তিনি জানান, কিছু প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (প্যানেল চেয়ারম্যান-২) মাহমুদা পারভীন জানান, তিনি গত ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার সরেজমিন পানিশ্বর ইউনিয়নের “শাখাইতি আজিজ সর্দারের বাড়ি হইতে দেওবাড়িয়া চকবাজার ভায়া ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ” প্রকল্প পরিদর্শনে যান। সেই প্রকল্পে ৩৬ শ্রমিকের স্থলে মাত্র ১৩ শ্রমিককে তিনি কাজে উপস্থিত পেয়েছেন। একই দিন ইউনিয়নের “বিটঘর সোনা মিয়ার বাড়ি হইতে ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ” প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান দেখতে পান সেখানেও ৩৬ শ্রমিকের স্থলে ২১ শ্রমিক কাজ করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, এতো বড় অনিয়ম হলেও সংশ্লিষ্টরা রহস্যজনক কারণে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিক ও প্রকল্প বাচাইয়ে ওয়ার্ড কমিটির কোনো মতামত নেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
আরিফুল ইসলাম সুমন