বাংলার পথে পথে ———– কাজী মোঃ মোস্তফা কামাল

ট্রেনে শিলাইদহ থেকে নৈহাটি রানাঘাট চূয়াডাঙ্গা হয়ে কলকাতা থেকে ১১১ মাইল দূর কুষ্টিয়া। সেখান থেকে ছয় মাইল পথ পালকিতে। ষোলো বেহারার পালকি। তার পরই বিরাহিমপুর পরগণার খোরশেদপুর গ্রাম। সেখানেই শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ও সদর কাছারি। শিলাইদহ নামের পিছনে একটু ইতিহাস আছে। পদ্মা ও গড়াই নদীর সঙ্গমে বুনাপাড়ার কাছে প্রাচীন নীলকর সাহেবদের কুঠিবাড়ি ছিল। দুটিই এখন পদ্মার বুকে বিলীন। কুঠিবাড়িটি কিনেছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ। তারই দোতলা-তিনতলায় থাকতেন ঠাকুরবাবুরা। পরে ১৮৯২ সালে তৈরী করা হয় নতুন কুঠিবাড়ি- এখনো যা স্মৃতিভারে পড়ে আছে পদ্মার তীরে। প্রায় তেরো বিঘা জমির উপর নতুন কুঠিবাড়ি। শিশু আম জাম নিয়ে মনোরম এই পল্লীভবন তৈরীর ভার ছিল দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্র নীতীন্দ্রনাথের উপর। পরে রথীন্দ্রনাথ আরো সংস্কার করেন। নীলকরদের একজন ছিলেন শেলী নামে সাহেব। তারই নামে হয় শেলী দহ এবং এই শেলীর দহ থেকেই পরে পাড়ার নাম হয়ে যায় শিলাইদহ। আদি নাম খোরশেদপুর তলিয়ে গেছে ঐ পাড়ার নামের আড়ালে। আসলে কুঠিবাড়ি কাছারি বাড়ি নিয়ে শিলাইদহ পল্লী খোরশেদপুর গ্রামেরই অংশ। এখানে খোরশেদ ফকিরের মাজার আছে। ফকির সম্বন্ধে জনশ্র“তি এইঃ খোরশেদ ফকির একদিন খেয়া নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দিতেছিলেন। মাঝি তাঁর কাছে খেয়ার কড়ি চাইল। ফকির বললেন, ‘বাবা আমি ফকির, আল্লাহতালার হুকুমে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই। আমার কাছে তো টাকাকড়ি নাই।’ খেয়ার মাঝি রেগে উঠে বলল, ‘ফকির হও আর যাই হও, পারানির পয়সা তোমাকে দিতেই হবে। যদি কড়ি নাই তবে নৌকায় চড়লে কেন ?’ খরস্রোতা পদ্মার উত্তাল তরঙ্গকে ভ্রুক্ষেপ না করে ফকির বললেন, ‘আচ্ছা বাবা, আমি নেমেই যাচিছ।’ হঠাৎ নাকি সেই ফেনিল স্রোতে ভেসে উঠল প্রকান্ড এক চর। ফকির হাসিমুখে সেই চরে নেমে পড়লেন; তখন থেকে এই চরই হল ফকিরের আস্তানা। ফকিরের অলৌকিক ক্ষমতার কথা চারদিকে জানাজানি হয়ে গেল। অনেক পরহেজগার লোক তাঁর মুরীদ হয়ে সেখানে বাস করতে লাগল; এমন করেই খোরশেদপুরের পত্তন হল।

কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালনশাহ মাজারের উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়কের চড়াইকোল আলাউদ্দিন বাজারে যাবার জন্য রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ির গেইট পেরিয়ে যখন সামনে আসি তখন রাস্তায় একটা সি.এন.জি পেয়ে যাই। চড়াইকোল-শিলাইদহ সংযোগ সড়কের দূরত্ব ৫.৪১১ কিলোমিটার। পুরোটাই গ্রাম এলাকা তবে পীচ ঢালা রাস্তা। রাস্তার পাশে ধানের জমি, ঘর-বাড়ি। সি.এন.জি কতটুকু যাবার পর বন্ধ হয়ে যায়। চালক চেষ্টা করছে গাড়ী চালু করতে। আমি বারবার মোবাইল ফোনে সময় দেখছি। কারন আমার আসরের নামাজ পড়া হয়নি, সূর্য ও পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ছে। গ্রামের রাস্তায় সি.এন.জি বন্ধ হওয়াতে ছোট-ছোট অনেক ছেলে-মেয়ের ভীড় বাড়ছে। তারা একেকজন একেক মন্তব্য করছে। এক পর্যায়ে বেশ খানিকক্ষণ পর সি.এন.জি চালু হয়। আমি চড়াইকোল আলাউদ্দিনের বাজারে নেমে একজনকে মসজিদ কোথায় জিজ্ঞাসা করলে, তিনি দেখিয়ে দেন। আমি আসরের নামাজ পড়ে আবার আরেকটা সি.এন.জি নিয়ে লালন শাহ মাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। কুষ্টিয়া থেকে ১০ কিঃ মিঃ দূরে চড়াইকোল আলাউদ্দিন বাজার। আলাউদ্দিনের বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার যাবার পর গড়াই নদীর উপরে একটি সড়ক সেতু দেখতে পাই। সড়ক সেতুর ডান পাশে রেল সেতু। এই রেল সেতুতে একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদ্মাবোটের মাস্তুল আটকে যায়।

মীর মশাররফ হোসেন সড়ক সেতু

রেল সেতু হওয়ার প্রায় দেড়শ বছর পর হয়েছে পাকা সড়ক সেতু। সেতুর বর্তমান নাম সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন সেতু, পূর্বের নাম মাছ-উদ-রুমী। সেতু পেরিয়ে লালন শাহের মাজারে আসার পথে মীর মশাররফ হোসেনের জন্মস্থান কুষ্টিয়ার লাহেনী পাড়ায় যাওয়ার চিহ্ন সম্বলিত সাইনবোর্ড দেখতে পাই। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বিশ্বের অন্যতম ট্র্যাজেডি গ্রন্থ বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা কালজয়ী অমর কথাশিল্পী যুগ শ্রেষ্ঠ মীর মশাররফ হোসেন-এর জন্ম ভিটা ও মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি জাদুঘর, লাহেনী পাড়া, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। কুষ্টিয়া শহর থেকে লাহেনী পাড়ার দূরত্ব ০৬ কিঃ মিঃ। মীর মশাররফ হোসেন জন্ম ১৮৪৭ ও মৃত্যু ১৯১১। পিতা-মাতা : মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ও দৌলত্ননেসা। মীর মশাররফ হোসেনের ‘আমার জীবনী’ গ্রন্থের অপ্রকাশিত খসড়া উপক্রমিকা অংশ অনুসরনে জানা গেছে তাঁর জন্মকাল, ১০ কার্তিক ১২৫৪ বঙ্গাব্দ (২৬ অক্টোবর ১৮৪৭ খ্রিঃ)। রূপকথাধর্মী রোমান্সমূলক উপন্যাস, নাটক,প্রহসন,ইতিহাসধর্মী উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, শিশুপাঠ্য, ধর্মীয়- কাহিনীকাব্য প্রভৃতি মিলিয়ে তিনি প্রায় ২৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়াও তাঁর ১০টিরও অধিক রচনার নাম পাওয়া যায় যেগুলো তাঁর জীবদ্দশায় গ্রন্থাগারে মুদ্রিত হয়নি। প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে বিষাদসিন্ধু, জমিদার দর্পন, গোজীবন, উদাসীন পথিকের মনের কথা, গাজী মিঁয়ার বস্তানী, আমার জীবনী উল্লেখযোগ্য। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ বিষাদ-সিন্দু (১২৯১-৯৭)। আজীজান্নাহার ও হিতকরী নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। আজীজান্নাহার বাঙালী মুসলমান পরিচালিত প্রথম বাংলা পত্রিকা। লাহেনী পাড়ায় তাঁর প্রথম স্ত্রী আজীজুন্নেছার কবর আর নিজের ব্যবহৃত কুপ ছাড়া তেমন কিছুই নেই। এখানে ০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ০১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছোট আকারের ০১টি লাইব্রেরী আছে। ১৭ অক্টোবর ২০০৮ সালে মীর মশাররফ হোসেনের নামে স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে ৫৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদ কুষ্টিয়া কর্তৃক ০১টি লাইব্রেরী ও অডিটরিয়াম নির্মাণ করা হয়। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দী নবাব বাড়ীতে তিনি ম্যানেজারের চাকুরী করতেন। বর্তমানে এই নবাব বাড়ী মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্স। এই নবাব বাড়িতে বসেই তিনি ‘‘বিষাদসিন্ধু’’ রচনা করেছিলেন। নবাব বাড়ীর আঙ্গিনায় তিনি শায়িত আছেন। এছাড়া সঙ্গে আছেন তাঁর দুই স্ত্রী বিবি কুলসুম ও বিবি খোদেজা ছাড়াও ভাই মীর মোকাররম হোসেন।

লালন শাহ মাজারের ফটক


হাতে সময় কম থাকায় আর লাহেনী পাড়ায় যাওয়া হয়নি। মাগরিবের নামাজের পূর্ব মুহুর্তে লালন শাহ মাজারে এসে সি.এন.জি থেকে নেমে খুব দ্রুত প্রধান ফটক সহ মাজারের কয়েকটা ছবি তুলে ফটকের পশ্চিমপার্শ্বে মাঠে চলে আসি। মাঠের পাশেই লালন দিঘী ও লেক। লেকের পাশ দিয়ে শহরের আসার মূল রাস্তায় উঠে স্থানীয় একটা মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে বড় বাজার এসে ইজি বাইকে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ গোপালগঞ্জ বা টুঙ্গীপাড়ায় যাওয়ার জন্য মজমপুর নেমে স্থানীয় বাস কাউন্টারে যাই। সেখানে গিয়ে আমাকে হতাশ হতে হলো। কারণ কুষ্টিয়া থেকে সরাসরি গোপালগঞ্জ বা টুঙ্গীপাড়ায় যাবার গাড়ী নেই। পরবর্তীতে হোটেলে ফিরে আসলে হোটেল ম্যানেজার জনাব ইউনূছ সাহেব বলল আপনি আগামীকাল কুষ্টিয়া পৌর বাসষ্ট্যান্ড থেকে ফরিদপুর গিয়ে সেখান থেকে গোপালগঞ্জ যেতে পারবেন। সন্ধ্যার পর থেকেই বেশ কয়েকবার ফজলুল রহমান স্যার ও ভাবী ফোন করে কোথায় আছি, জানতে চেয়েছে এবং কিভাবে বাসায় আসব দিক নির্দেশনা দিয়েছে। সারাদিনের ভ্রমনের ক্লান্তির জন্য হোটেলে কতক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার কুষ্টিয়া মিল পাড়ায় অবস্থিত ফজলুল হক স্যারের বাসায় চলে আসি।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাস ভবন


বাসাটা একসময় সাবেক পৌর চেয়ারম্যান (১৯৪৩-৪৭) রায়বাহাদুর রমাপ্রসন্ন চক্রবর্তী (১০ নং ওয়ার্ড মিলপাড়া টেগোর এভিনিউ) বসবাস করত। বর্তমানে ঐটি সরকারী সম্পত্তি হিসেবে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বিশাল বাড়িতে অনেকগুলো কক্ষ আছে। গেইট পেরিয়ে সামনে খোলা জায়গা। গেইট পেরোতেই দেখলাম স্যার ও ভাবী নিলিমা পারভেজ ও দুই পুত্র সন্তান কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল আরাফ এবং ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নাহিয়ানকে নিয়ে স্যারের পরিবার। স্যারের আম্মা এখনো জীবিত আছেন এবং স্যারের সাথে কুষ্টিয়াতে থাকেন। বর্তমানে শিক্ষিত, অশিক্ষিত অধিকাংশ মহিলারাই যেখানে শ্বাশুড়ীর সহিত থাকতে চান না বা নিজেদের সাথে রাখতে চান না, সেখানে নিলীমা পারভেজ ভাবী ব্যতিক্রম। শুধু ব্যতিক্রম নয় সব মহিলাদের অনুকরণীয়। স্যার যখন কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তখন স্যার ও ভাবির উদ্যোগে দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ স্কুলের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সকল অফিসারা ও তাদের পরিবার নিয়ে পালন করতেন ১লা বৈশাখ। স্যার সব অফিসারদের কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি ভবনের ফতুয়া এবং ভাবী অফিসারদের স্ত্রীদের সো’পিছ উপহার দেন। আমার স্ত্রীর পাওয়া সো’পিছটা এখনো আমার বাসার সোকেছে ভাবীর স্মৃতি হিসেবে আছে। আমরা যারা চাকুরী করি তাদের অনেকেই ঘুষের সাথে যুক্ত। একদিকে নামাজ পড়ে, দাড়ি রাখে, হাতে তসবিহ গুনে, কিন্তু অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন ফাইলে স্বাক্ষর করে না। আর যারা ধর্মের বিধানগুলো পালন করে না তারাতো করেই না। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলাপ করলে বলে, বাজারে জিনিস পত্রের দাম বেশী, যে বেতন পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না, কি করব ? কিন্তু চেষ্টা করলে ঘুষ ছাড়া চলা যায় এটা অনেকে বুঝতে চেষ্টা করে না। পরকালে অন্যায়ভাবে উর্পাজিত অর্থের পাপের দায়ভার স্ত্রী, সন্তান সহ পরিবারের কেউ নিবে না। হারাম উর্পাজনে অর্জিত অর্থে ইবাদত কবুল হয় না। ঘুষ তো ঘুষ, যে নামেই ডাকা হোক, ইহা হারাম। আল্লাহ পবিত্র এবং পবিত্র জিনিসকে আল্লাহ -পছন্দ করেন। আমার জানামতে ফজলুর রহমান স্যার ঘুষ থেকে মুক্ত আছেন, সেই সাথে মুক্ত আছেন ভবিষ্যৎ তহবিলের প্রদত্ত সুদ নেয়া থেকে।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুঃ ফজলুর রহমান


স্যারের বাসায় ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই চোখ চলে যায় সোকেছের দিকে, যেখানে দেবিদ্বার অফিসার্স ক্লাবের স্মারক উপহার সহ অনেক ক্রেষ্ট রয়েছে, আছে বিভিন্ন বই। আলাপে জানতে পারি স্যার গত বছর পবিত্র হজ্জ পালন করে এসেছেন এবং বর্তমানে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ভাবী বলল, আমার বাসা থাকতে কেন হোটেলে উঠলেন ? আপনি বাসায় চলে আসুন। আমি আবার আসলে বাসায় উঠব বলে এই প্রসঙ্গ শেষ করি। আমার প্রকাশিত লেখাগুলো সকালেই স্যারকে অফিসে দেই। আলাপের এক পর্যায়ে আমার লেখালেখির জন্য স্যার আমাকে লালন একাডেমীর ‘‘মেঘ-নিহারী’’, ‘‘চরণ-তরী’’, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ ও শিলাইদহ যুগলবন্দী প্রেক্ষণ এবং কাঙাল হরিণাথ মজুমদার স্মারক গ্রন্থ প্রদান করে বলেন, রবীন্দ্র জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রকাশিত স্মরনিকার কপির জন্য সকালে আবার অফিসে আসবেন। কাঙাল হরিণাথ মজুমদারের জন্ম ১৮৩৩ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ও মৃত্যু ১৮৯৬ খ্রিঃ। পিতা হলধর, মাতা কমলিনী দেবী। প্রধানত সমাজ বিপ্লবী-সাময়িক পত্র শিবির হিসেবে পরিচিত। কাঙাল হরিণাথ ছিলেন লালনের ভাব-শিষ্য। তিনি নিজেও গান লিখতেন। তিনি আধ্যাত্মবাদ প্রচারের জন্য ১৮৮০ সালে গঠন করেন ‘‘কাঙাল ফিকির চাঁদের দল’’ হরিণাথ মজুমদার কাঙাল হরিনাথ হয়েছিলেন মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে। কালের নিয়মে তিনি চিরকাঙালই থেকে গেছেন। মানুষকে সচেতন করতেই তিনি এখান থেকে লিখতেন সংবাদ প্রভাকরে। পরে তিনি নিজেই ১৮৬৩ সালে প্রকাশ করেছিলেন ‘‘গ্রামবার্তা’’ প্রকাশিকা। কাঙ্গালের বাড়িতে সেই মুদ্রনযন্ত্রটি এখনো আছে। তাঁর রচিত বিজয়-বসন্ত (ডিসেম্বর,২৪ ১৮৫৯), বাংলাভাষা- সাহিত্যের একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ। কুষ্টিয়ার আরেকজন ব্যক্তি গগন হরকরা। কৌলিন নাম গগন চন্দ্র দাম। তাঁর জন্ম-মৃত্যুকাল এখনো সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। শিলাইদহের পাশে গোবরাখালী মৌজার কসবা গ্রামে তিনি বাস করতেন। গগন ছিলেন শিলাইদহের ডাকঘরের ডাক হরকরা ও পিয়ন। তাঁর ‘‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে’’ গানটির আংগিক ও সুরের অনুসরনে রবীন্দ্রনাথ ‘‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’’ রচনা করেন। গগনের এই গানটি রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহ করে প্রবাসী পত্রে ১৩২২ সালের বৈশাখে প্রথম প্রকাশ করেন এবং পরে সংশোধন আকারে প্রকাশ করেন জৈষ্ঠ্য সংখ্যায়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটি প্রবন্ধ ‘‘ অহ ওহফরধ ঋড়ষশ জবষরমরড়হ ’’ সহ বিভিন্ন বক্তৃতা, অভিভাষণ ও গ্রন্থের ভূমিকায় গগনের নাম কিংবা তাঁর গানের কথা উল্লেখ করেছেন।

আলাপে আলাপে অনেক সময় চলে গেছে। একসময় খাবার টেবিলে যেতে হল। সেখানেও ভাবীর আন্তরিকতা আবার লক্ষ্য করলাম। স্যার বলল, আপনি সকালে অফিস থেকে বের হতেই আমি বাসায় আপনার কথা জানালাম। এর মধ্যে স্থানীয় গড়াই নদী থেকে তাজা চিতল মাছ আনা হলো। আমি শুধু চিতল মাছের বিভিন্ন তরকারী দিয়ে তৃপ্তি সহকারে খেলাম। গোশত সহ অন্যান্য তরকারী শুধু চোখে দেখলাম, মুখে নেবার সুযোগ পেলাম না। খাবারের শেষ পর্যায়ে ভাবী সকালের নাস্তার জন্য আবার আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলল, ‘‘নাস্তা খেয়ে আপনার স্যারের সাথে অফিসে গিয়ে স্মরনিকাগুলো নিয়ে যাবেন।’’ রাত ১০ টার পরে স্যারের গাড়ী আমাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে আসে। হোটেলে আসতেই ফোন করে কটিয়াদী পৌরসভার কর নির্ধারক আব্দুল কুদ্দছ, কার্য-সহকারী দেলোয়ার। তাদেরকে সারাদিনের ভ্রমনের বর্ণনা দেই। অবশেষে এশার নামাজ পড়ে ঘুমের রাজ্যে চলে যাই। চলবে —–

(৭ম পর্ব)

লেখকঃ—–সচিব, কটিয়াদী পৌরসভা, কিশোরগঞ্জ।
quazikamal2012@gmail.com

Check Also

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট : বাঙালির অশ্রু ঝরার দিন

  কুমিল্লাওয়েব ডেস্ক:– আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির অশ্রু ঝরার দিন। ১৯৭৫ ...

Leave a Reply