সরাইলের আ’লীগ নেতা আজাদ হত্যা :: প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ও বাস্তব চিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ১৩ নভেম্বর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার প্রধান আসামীরা ধরা পড়েনি। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত ৩১ অক্টোবর ইকবাল আজাদের মা জোবেদা খাতুন, ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আজাদ, স্ত্রী শিউলী আজাদসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আসামীদের গ্রেপ্তার ও খুনীদের বিচারে আশ্বাস দেন।
এদিকে পুলিশের দাবি, মোবাইল ফোনের ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। আসামীরা ঘন ঘন সিম নম্বর ও অবস্থান পরিবর্তন করে বলে তাদেরকে গ্রেপ্তারে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাকির হোসেন।
এ যখন পুলিশের বক্তব্য তখন মামলার দুই নম্বর আসামী সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের একটি প্রকল্প ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন বলেও এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
মোবাইল ফোনে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি স্বীকার করে রফিক উদ্দিন ঠাকুর সাংবাদিকদের জানান, ’শীঘ্রই জামিনের ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ঘটনার সময় তিনি স্থানীয় এম.পি’র সঙ্গে তাঁর গাড়িতেই ছিলেন’।
গত ৭ নবেম্বর বুধবার বাংলালিক অপারেটরের একটি নম্বরে দুপুর ২টা ৪৬ মিনিট থেকে ২টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত ১২ মিনিট ৮ সেকেন্ড সাংবাদিকদের সাথে কথা হয় তার। তবে সম্প্রতি ফাইলে স্বাক্ষর করার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ২৯ টন টি.আর প্রজেক্টের তালিকা হত্যাকান্ডের ঘটনার আগেই স্বাক্ষর করা হয়েছিল।
এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মূল আসামীরা দীর্ঘ তিন সপ্তাহেও ধরা না পড়ায় সরাইল উপজেলার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন সংগঠনের অন্যান্য কর্মসূচীর পাশাপাশি ইকবাল আজাদের শুভাকাংঙ্খীরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় সরাইল সদরে বিক্ষোভ মিছিল করছে। তাঁরা বলেছেন, ’সরাইলবাসী খুনীদেরকে জামিন দিবে না। আসামীদের গ্রেপ্তারে কোনো গাফিলতি হলে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে’। আজ মঙ্গলবার ট্রাক্টর মালিক, শ্রমিকদের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
মামলার বাদী ইকবাল আজাদের ভাই আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন পুলিশের গাফিলতির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে আসামীদের সখ্যতা রয়েছে। এ অবস্থায় জনগন ও তাঁর দাবির প্রেক্ষিতে সরাইল থানার তৎকালীন ওসি মো. গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এদিকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া এনায়েত সম্পর্কে জাহাঙ্গীর আজাদ বলেন, ’সে মামলার আসামী নয়। আমি তাকে চিনিও না। এনায়েতকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি পুলিশ আমাকে জানিয়েছে। পুলিশ বলেছে ঘটনার পর আসামী মাহফুজসহ দু’জন খোকনের চট্টগ্রামের বাসায় ছিল’।
প্রসঙ্গত, ২১ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যায় দলীয় কোন্দলের জের ধরে সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ খুন হন। পরদিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ২২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোটভাই এ কে এম জাহাঙ্গীর আজাদ। পুলিশ মোকারম হোসেন সোহেল, শরীফ, নাসির ও আলিফ নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Check Also

করোনাযুদ্ধে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিমকে বুড়িচংয়ে সমাহিত

বুড়িচং প্রতিনিধিঃ করোনাযুদ্ধে পুলিশে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে (৩৯) কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়েছে। ...

Leave a Reply