মতলব উত্তর / ১৩ নভেম্বর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-
মতলব উত্তর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোচিং বা অতিরিক্ত ক্লাসসহ নানা খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকারী নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি নূন্যতম ৩ হাজার ৫০টাকা নির্ধারন করেছে। কোচিং ফি নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য বোর্ড নির্ধারিত ফি হচ্ছে প্রতিপত্র ৬৫ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি (প্রতিপত্র) ৩০ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি- ৩৫টাকা, সনদ ফি-১০০ টাকা, স্কাউটস/গালস্ ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ৫ টাকা। সব মিলিয়ে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ৯০০-১০০০ হাজার, বিজ্ঞান বিভাগে ১ হাজার-১১০০ টাকা। কিন্তু মতলব উত্তর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তিন/চার গুণ হারে ফি নিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নদী সিকস্তি নাওভাঙ্গা এলাকার এক অভিভাবক বলেন, ‘ছোট একটি দোকান দিয়া কোনো রকমে টাইনা-টুইনা সংসার চালাই। এইবার আমার এক ছেলে পরীক্ষা দিবো। কয়েক দিন ধইরা টাকার লইগা পীড়াপীড়ি করতাছে। কিন্তু এত টাকা জোগার করতে পারতাছি না।’ সানকিভাঙ্গা এলাকা আরেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্কুলে পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হয়। পরে স্কুলের ভেতরেই আবার এক ঘণ্টা কোচিং করান শিক্ষকেরা। তাহলে তাঁরা (শিক্ষক) আগের পাঁচ ঘণ্টা ক্লাসে কী পড়ান এটাই ভেবে পাই না। আসলে এটা টাকা নেওয়ার একটা ধান্দা।’
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে বদরপুর আকবর আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোচিং ফির জন্য এই টাকা নেওয়া হচ্ছে।’ বোর্ডের ফি কত জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি। জীবগাঁও জেনারেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তিন মাসের অতিরিক্ত ক্লাস (কোচিং), জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, যাতায়াত ফি ইত্যাদি বাবদ বাড়তি টাকা নেওযা হচ্ছে।’
ওটারচর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে তিন-সাড়ে হাজার হাজার টাকা ফরম পূরণ বাবদ আদায় করা হয়েছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের পকেট কেটে নিচ্ছে।’
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শহিদ উল¬াহ প্রধান অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কী কী খাতে অর্থ নেওয়া হয়েছে আমি আপনাকে তা বলে দিতে পারব।’
ছেংগারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বোরহান উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের অঙ্ক, ইংরেজি, ভূগোল, বিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ যতেœর (কোচিং)জন্য, বিদ্যালয় উন্নয়ন ফি ও ফরম পূরণ বাবদ টাকা নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ মোঃ ওয়াহিদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ডের নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারবে না। অভিযোগ পেলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে বিষয়টি যাচাই করে দেখব। আর কেন্দ্র ফি আলাদা দিতে হয়।’
শামসুজ্জামান ডলার
মতলব উত্তর(চাঁদপুর)