খুনের মামলায় পলাতক সরাইলের চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ চালাচ্ছেন মুঠোফোনে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ৭ নভেম্বর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চালাচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় দুই নং আসামী পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর। তিনি উপজেলা পরিষদ সংশ্লিষ্টসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলেও পুলিশ বলছে তাঁকে খোঁজে পাচ্ছেন না তারা।
তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তিনিসহ অন্যান্য আসামীদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অচিরেই আসামীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে পুলিশের ওই সূত্রটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে আসামীরা ঘন ঘন এলাকা ত্যাগ করছেন।
পলাতক আসামী রফিক উদ্দিন ঠাকুর অবশ্য অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ’আমি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত নই। ইকবাল আজাদের সঙ্গে আমার ছিল আন্তরিক সম্পর্ক। আমি সাধারণ সম্পাদক ও তিনি সভাপতি হবেন বলে আমার সঙ্গে অলিখিত চুক্তিও হয়েছিল। ইউনিয়ন পর্যায়ের একটি কমিটি নিয়ে দ্বন্দের জের ধরে মাহফুজ আলীই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আমার জামিনের ব্যবস্থা হচ্ছে’। তিনি আরো বলেন, ’ঘটনার সময় আমি এম.পি মহোদয়ের সঙ্গে তাঁর গাড়িতে ছিলাম। আমি হত্যাকারিদের শাস্তি দাবি করছি’।
এদিকে একটি টি.আর প্রকল্পের তালিকায় পলাতক ওই চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিয়ে চলছে কানাঘুষা। এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে খোদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা পারভীন বলেন, ’বিষয়টি আমার অন্যরকম মনে হচ্ছে। ইকবাল আজাদ হত্যাকান্ডের দিন (২১ অক্টোবর) দুপুরে চেয়ারম্যান আমার কাছ থেকে চারটি প্রকল্পের নাম নেয়। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এখন বলছেন, ১৫ তারিখেই ওই তালিকা স্বাক্ষর হয়ে গেছে’। চেয়ারম্যানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
অপরদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুরের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ও একজন সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার পূর্বের একটি ঘটনার ফাইল আবার চালাচালি শুরু হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১- ১২ অর্থ বছরে সরাইল উপজেলায় টিআর (সাধারণ) বরাদ্দ ১৪৫ মেট্রিক টন চাল আসে। নীতিমালা অনুযায়ী মুল বরাদ্দের শতকরা ২০ ভাগ অর্থাৎ ২৯ মেট্রিক টন উপজেলা পরিষদের জন্য । বাকী চাল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে বন্টন হয়। উপজেলার সংশ্লিস্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের টি আর প্রকল্প তালিকা চ’ড়ান্ত হলেও উপজেলা পরিষদের ২৯ মেট্রিক টনের টিআর প্রকল্পের তালিকা চূড়ান্ত বাকী থাকে। গত ৩ তিন পূর্বে উপজেলা চেয়ারম্যান টিআর প্রকল্পের একটি তালিকা লোক মারফত সংশ্ল্স্টি অফিসে প্রেরণ করেছেন। এ তালিকার খবর মঙ্গলবার ফাঁস হলে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয় এবং মুঠোফোনে উপজেলা চেয়ারম্যান বিভিন্ন অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করছেন এখবর ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলার কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান ০১৯৬৫— সিরিয়ালের মুঠো ফোনে আমাদের সাথে কথা বলেছেন।
সরাইলে সদ্য নিযুক্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রহিছউদ্দিন মুকুল জানান, এই প্রকল্প তালিকা জেলায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে । আমি আসার পূর্বে উপজেলা চেয়ারম্যান তালিকা প্রস্তুত করেন এবং আমার পূর্বে দায়িত্বরত কর্মকর্তা এটিতে স্বাক্ষর করে জেলায় প্রেরণ করেছেন বলে আমি জানি। উপজেলা চেয়ারম্যান এর মুঠোফোনের যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে তিনি কোন উত্তর দেননি।
এদিকে সদ্য বিদায়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, আমার দায়িত্ব কালীন সময়ে এ টিআর প্রকল্পের বিভিন্ন ইউনিয়নের তালিকা করা হয়েছিল। কিন্তু উপজেলা পরিষদ তাদের তালিকা জমা দেননি। তিনি আরও জানান, গত ৫ নভেম্বর সোমবার সরাইল অফিসের কর্মরত পিওন আবেদ মিয়া তালিকাটি নিয়ে এসে বেকডেটে আমার সাক্ষর দিতে বলেন, আমি তাতে স্বাক্ষর দেইনি। পরে জানতে পেরেছি তালকাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার সাক্ষর ছাড়াই অনুমোদনের জন্য জেলায় জমা হয়েছে।
আবেদ মিয়া বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। বর্তমান পিআইও সাহেব আমাকে আগের পিআইও’র কাছে একটি কাগজ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন স্বাক্ষর করানোর জন্য। কিন্তু তিনি এতে স্বাক্ষর করেন নি।
এদিকে উপজেলা পরিষদের সিএ আবদুল হাফিজ বলেন, ০১৯৬৫—-সিরিয়ালের একটি মোবাইল নম্বর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব মাঝে মধ্যে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন খোঁজ খবর নেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান খান জানান, আমি শুনেছি টিআর প্রকল্পের তালিকা উপজেলা চেয়ারম্যান আগেই জমা দিয়েছিলেন। মুঠো ফোনের যোগাযোগের বিষয়টি তিনিও এরিয়ে যান।
তবে জেলা প্রশাসক নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দিয়ে পরিষদের কার্যক্রম চলছে। হজে থাকা পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ফিরলে তিনি দায়িত্ব নিবেন। তবে চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের বিষয়ে পূর্বের উল্লেখিত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবহিত নন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
প্রসঙ্গত, ২১ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যায় দলীয় কোন্দলের জের ধরে সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ খুন হন। পরদিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ২২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোটভাই এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজাদ। পুলিশ মোকারম হোসেন সোহেল, শরীফ, নাসির ও আলিফ নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

আরিফুল ইসলাম সুমন

Check Also

করোনাযুদ্ধে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিমকে বুড়িচংয়ে সমাহিত

বুড়িচং প্রতিনিধিঃ করোনাযুদ্ধে পুলিশে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে (৩৯) কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়েছে। ...

Leave a Reply