তিতাস / ৭ নভেম্বর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-
কুমিল্লা-১ দাউদকান্দি-মেঘনা ও কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) আসন নিয়ে গঠিত বর্তমান নির্বাচনী সীমানা নতুন করে পুনঃনির্ধারনের দাবিতে তিতাস উপজেলাকে কুমিল্লা-১ দাউদকান্দি আসনের সাথে অন্তর্ভূক্ত করতে একটি কুচক্রী মহল আবারো গত এক মাস ধরে অতিগোপনে এলাকায় পোষ্টার লাগানো এবং নির্বাচন কমিশন বরাবরে আবেদন নিবেদন করায় তিতাসের রাজনৈতিক মহল-সহ সর্বমহলে তোলপাড়ারের সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লা-২ আসনের তিতাস উপজেলার সরকার দলীয় নেতাকর্মী, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ডাক্তার, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের না জানিয়ে ওই ষড়যন্ত্রকারী কুচক্রী মহলের গোপন তৎপরতা দেখে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের দানা বেধে উঠেছে।
এদিকে ষড়যন্ত্রকারীদের তাবেদারী কূট তৎপরতার দাতভাঙ্গা জবাব দিতে এবং কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের বর্তমান সীমানা বহাল রাখার দাবিতে ‘তিতাস উপজেলা সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ গঠন করা হয়েছে”। এ পরিষদে তিতাসের শাসকদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ডাক্তার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। সংগঠনটি ইতিমধ্যে এখানকার দুইটি আসনের বর্তমান সীমানা বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনে লিখিত আবেদন দায়ের জন্য এলাকায় গণস্বাক্ষর অভিযানসহ নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলছেন, ভৌগলিক দিক দিয়ে কুমিল্লা-২ আসন হোমনা উপজেলার সাথে তিতাস উপজেলার অবস্থান খুবই ভাল। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের ভাষা তারা আর সাবেক আসনে ফিরে যেতে চান না।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, তিতাস উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধি ও সচেতন জনগোষ্ঠী কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) নির্বাচনী এলাকা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। ভাইস চেয়ারম্যান মুন্সি মজিবুর রহমানও বলেন, যে কোন মূল্যে আমরা বর্তমান নির্বাচনী এলাকা বহাল রাখব। কুমিল্লা (উত্তর) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বলেন, হোমনার সাথে তিতাসের ভৌগলিক, সামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো ও শান্তিপ্রিয়। দাউদকান্দি আসনের সাথে তিতাস উপজেলাকে অন্তর্ভূক্ত করলে আবারো তিতাসের রাজনৈতিকদের উপর নেমে আসবে অদৃশ্য চাপ। সাপ্তাহিক কালপুরুষ পত্রিকার সম্পাদক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাষ্টার বলেন, বৃহত্তর দাউদকান্দির অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের ৯টি ইউনিয়নকে নিয়ে তিতাস উপজেলা প্রতিষ্ঠা আন্দোলন এবং তিতাস-হোমনা উপজেলা সমন্বয়ে কুমিল্লা-২ নির্বাচনী এলাকা পুনবিন্যাস আন্দোলনে তিতাসের সুশীল সমাজ দলমত নির্বিশেষে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল আজকের প্রেক্ষাপটেও অর্জিত সাফল্য ধরে রাখার মানসে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর কোন বিকল্প নেই। তিতাসে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে এবং নেতৃত্ব বিকাশের পথ উম্মুক্ত করতে সকলকে একই প্লাটফর্মে এসে স্বস্ব ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে কুমিল্লা-২ নির্বাচনী এলাকা রক্ষা কমিটি গঠন পূর্বক দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই সাধারণ জনগণের নিকট তথাকথিত সচেতন জনগোষ্ঠীর আসল চেহারা উম্মোচিত হবে। তিতাস উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সচিব মহসিন ভূঁইয়া বলেন, কুমিল্লা-২ তিতাস-হোমনা ভৌগলিক দিক দিয়ে আমরা তিতাসবাসী খুবই ভালো অবস্থানে আছি। তবে বিশেষ করে বিগত দিনে আমরা দাউদকান্দির সাথে রাজনীতি করে সবসময় অবহেলিত ছিলাম। বর্তমানে আমরা হোমনার সাথে ভালো আছি। আর যারা দাউদকান্দির সাথে যেতে চায় তারা তিতাসের রাজনীতিকে কুলষিত করার পায়তারা করছে এবং তিতাসের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দাউদকান্দিবাসীর নিকট জিন্মি রেখে যেতে চায়। আমরা যে কোন মূল্যে তা প্রতিহত করবো। উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুল হক তপন ভূঁইয়া বলেন, আমরা হোমনার সাথে আছি খুব ভালো আছি। এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে আমরা দাউদকান্দির সাথে যেতে হবে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে আমরা দাউদকান্দির সাথে রাজনীতি করে তিতাসের কোন রাজনীতিক নেতা নেতৃত্ব নিয়ে বের হয়ে আসতে পারেনি। বর্তমানে তিতাসবাসী হোমনার সাথে থাকলে তিতাসের যে কোন দলের নেতা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে স্থান করে নিতে পারবে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক সীমানা পুনঃনির্ধারনের পর ২০০৮ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড.এ.টি.এম. সামছুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার জনাব সহুল হোসেন এবং নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন (অব.), নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবির, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপি এক গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে দাউদকান্দি, মেঘনা, হোমনা ও তিতাস উপজেলা সর্বদলীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বেশ কিছু সাধারন জনগণ উপস্থিত ছিলেন। এক/দুইজন সুবিধাবাদী লোক ব্যতিত উপস্থিত তিতাস উপজেলার দলমত নির্বিশেষে সকল নেতৃস্থানীয় ও সাধারন জনগণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাউদকান্দির পরিবর্তে হোমনা উপজেলার সাথে একীভূত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এ বিষয়ে তারা বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে। তদপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কমিশন সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন যে, দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে ২৪৯ কুমিল্লা-১ এবং হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে ২৫০ কুমিল্লা-২ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
নাজমুল করিম ফারুক
তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি