সরাইল / ৪ নভেম্বর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এ.কে.এম ইকবাল আজাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজ দলের লোকদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে নিহতের পরিবারসহ সরাইল উপজেলার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ করেছেন। এর জন্য পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করছেন অনেকে। তাদের দাবি, পুলিশ ইচ্ছে করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হত্যাকান্ডটিকে তারা বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখছেন। ইতিমধ্যে এ মামলার চার আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পুলিশ পেয়েছেন। এছাড়া আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম তৎপর রয়েছে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতার ছোট ভাই ও মামলার বাদী এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজাদ বলেন, মামলার প্রধান চার আসামি ঢাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকেই তাদেরকে দেখেছে। বিষয়টি পুলিশ এবং ডিবি পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা শুধু বলছে দেখতেছি-করবো ইত্যাদি। এ অবস্থা হলে এই হত্যাকান্ডের বিচার আমরা পাব বলে মনে হয় না। এর লক্ষণই আমরা দেখতেছিনা। ৭৪ সালে পিতার হত্যা বিচার পায়নি। তিনি আরো বলেন, গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমরা দেখা করেছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার হবে। এখন আমরা মহান আল্লাহতালার উপর ভরসা এবং প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস নিয়েই বসে আছি। জাহাঙ্গীর আজাদ বলেন, আসামিরা বিভিন্ন লোক পাঠাচ্ছে আমারদেরকে মারার জন্য। রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারি না। এখানে ওখানে রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে।
নিহতের পুত্র ইফাজ ইকবাল বলেন, পুলিশের প্রতি আমরা বিশ্বাস রাখতে পারছি না। কারণ আমার পিতাকে যখন ওরা রামদা, বল্লম দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে, তখন পাশেই ২/৩ জন পুলিশ সদস্য অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এটা উপস্থিত অনেকেই দেখেছে। তারা একটি ফায়ার করলেই হয়তো আমার পিতা বেঁচে যেতেন। কিন্তু তারা সেটি করেননি। ঘটনার বেশকয়েকদিন পেরিয়ে গেছে। আসামির প্রথম সারির কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
অবশেষে আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মাঠে নেমেছেন মহাজোট এমপি :
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাপার কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা অবশেষে ইকবাল আজাদের খুনীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার এবং বিচারের দাবিতে মাঠে নেমে এসেছেন। তিনি শনিবার বিকেলে উপজেলার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার চত্বরে ঢাকাস্থ সরাইল থানা সমিতির উদ্যোগে ইকবাল আজাদ সম্মরণে শোক সভায় আচমকা উপস্থিত হন। হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে শোকসভা একপর্যায়ে প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়। এসময় সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা বলেন, রাজনীতির নামে ইকবাল আজাদকে হত্যা করে সরাইলের শতবর্ষের ইতিহাসকে যারা কলঙ্কিত করেছে আমি তাদের ধিক্কার দেয়, আমি তাদের নিন্দা জানাই। আমি তাদের বিচারের দাবি নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে প্রতিহিসা থাকবে কেন ? প্রতিযোগিতা না থাকলে এর নাম রাজনীতি হয় না। এর নাম গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র থাকতে হলে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যাদের এই অভিজ্ঞতা নেই তারা কেন গণতান্ত্রিক এই রাজনীতি করতে আসে। যেভাবে ইকবাল আজাদকে হত্যা করা হয়েছে। বল্লমবিদ্ধ করা হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম একটি ফুটন্ত গোলাপ লাশ হয়ে পড়ে আছে। রক্ত ঝরছে। রাজনীতির নামে এ যদি কাম্য হয়, তাহলে এই রাজনীতি আমরা চাই না। এই রাজনীতির প্রতি আমরা ঘৃণা করি। আমি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বলতে চায়-এই যদি রাজনীতি হয়, এই যদি গণতন্ত্রের অবস্থা হয়। এই যদি সরাইলের পরিস্থিতি হয়, তাহলে আমরাও ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিব রাজনীতি করব কি না ? সরাইলে অধিকহারে সংঘর্ষের দিকে ইঙ্গিত করে এমপি বলেন, সারা বিশ্বের পৃথিবীর মানুষ যখন একটি লক্ষ্য নিয়ে গ্রহ-উপগ্রহে বিচরন করছে, সেই সময়ে মধ্যযুগীয় বল্লম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমরা সরাইলে মহড়া করি। এটা লজ্জার ব্যাপার। এটা কলঙ্কের ব্যাপার। সংসদ সদস্য হিসেবে এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকতাদের আমি বলতে চাই অনতিবিলম্বে ইকবাল আজাদের খুনিদের গ্রেফতার করে তাদেরকে বিচারের সম্মূখীন করুন। এদেশের মানুষ খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। এ হত্যাকান্ডের বিচার যদি না হয়, তাহলে দেখা যাবে একেরপর এক এ ধরণের হত্যাকান্ড চলতেই থাকবে। পরে যেস্থানে ইকবাল আজাদ খুন হয়েছেন, সেস্থানটিকে শহীদ ইকবাল আজাদ চত্বর ঘোষণা করেন মহাজোটের এই এমপি।
(আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার)