আলোচিত সেই ওসি প্রত্যাহার : সরাইলে মিষ্টি বিতরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ২৮ অক্টোবর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার আলোচিত সেই ওসি গিয়াস উদ্দিনকে অবশেষে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, কর্তব্য অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, আওয়ামী লীগ নেতা খুনের ঘটনায় রহস্যজনক ভূমিকা, নানা অপকর্ম ও ব্যর্থতার ঘানি নিয়ে গিয়াস উদ্দিন শনিবার গভীর রাতে সরাইল ত্যাগ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ওসি গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এদিকে নানা কর্মকান্ডে বির্তকিত ওসি গিয়াস উদ্দিন প্রত্যাহারের খবরে রোববার সরাইলে বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয়রা।
ওসির বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ : উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাজী ইকবাল হোসেন বলেন, সরাইল থানায় যোগদানের প্রথমদিকে ওসি গিয়াস উদ্দিনকে সবাই একজন ভালো মানুষ হিসেবেই জানতেন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। একটি বিশেষ মহলের হয়ে তিনি কাজ করতেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিকসহ অনেক সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করেছে ওসি গিয়াস উদ্দিন। তাছাড়া মামলা রেকর্ড, চার্জশীট ও ফাইনাল রিপোর্টের নামে ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে টাকা-পয়সা। এলাকার জুয়া ও মাদক আস্তানা থেকে মাসোহারা নিয়েছে প্রতিনিয়ত। পুলিশ বিভাগ থেকে তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত হয়েছে সরেজমিনে। এই ওসির অনুসারী কিছু লোক তার পক্ষে সাফাই দিয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় প্রতিরাতে ৫-৭ জন সশস্ত্র পুলিশ সদস্যের পাহারার ব্যবস্থাও করেছিল ওসি গিয়াস উদ্দিন। সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি একেএম ইকবাল আজাদ খুনের ঘটনায় এই ওসির রহস্যজনক ভূমিকায় সরাইলবাসী তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। তার প্রত্যাহারের খবর জেনে অনেকে মিষ্টি বিতরণ করেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা নৃশংসভাবে খুন, ওসি ছিল নীরব : উপজেলা যুবলীগের প্রথম যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু বলেন, আগাম ঘোষণা দিয়ে জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদকে গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। সেদিন তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সারাদিন উপজেলা সদরে মহড়া দিয়েছে। ওসি গিয়াস উদ্দিনকে বিষয়টি একাধিবার জানানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। থানা ভবনের দেড়শ’ গজের মধ্যে এ নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটলেও ওসি গিয়াস ছিল নীরব। এই খুনের ঘটনায় প্রধান আসামিরা এ ওসির সহযোগিতা নিয়েই সরাইল এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। কুলাঙ্গার এই ওসিকে দায়িত্ব থেকে শুধু প্রত্যাহার নয়, তার বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন এটাই এখন সরাইলবাসীর দাবি। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন মিল্লাত বলেন, সেদিন প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রের মহড়ার বিষয়টি ওসি গিয়াসকে জানিয়েও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তারা থানা ভবনের সংলগ্ন এলাকায় নৃশংসভাবে ইকবাল আজাদকে খুন করে। সুর-চিৎকারে একজন পুলিশ সদস্যও থানা থেকে বেরিয়ে আসেনি। এ ঘটনায় ওসির চরম গাফিলতি ছিল, এটি এখন সবার কাছে পরিস্কার। এ মামলার এফআইআর কপিতে ওসি গিয়াস উদ্দিন উল্লেখ করেন ‘ঘটনাস্থল থানা থেকে ৬শ’ গজ দূরে।’ তার এহেন ভূমিকায় অনেকে পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শের আলম বলেন, সেদিন প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং ইকবাল আজাদ উপজেলা সদরে আসলেই তাকে হত্যা করবে-তাদের এই ঘোষণার বিষয়টি আমি নিজে থানায় গিয়ে ওসি গিয়াস উদ্দিনকে জানিয়ে এসেছি। তবুও তিনি এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপই নেয়নি। এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি আগে থেকেই সবকিছু জানতেন। এজন্যই তিনি ওইদিন নীরব থেকেছেন। মামলার বাদী ও নিহত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদের ছোট ভাই এবং সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একেএম জাহাঙ্গীর আজাদ রোববার মহাসড়কে মানববন্ধন কর্মসূচিতে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাইয়ের খুন হওয়ার পেছনে ওসি গিয়াস উদ্দিনের যোগসূত্র রয়েছে।

আরিফুল ইসলাম সুমন

Check Also

করোনাযুদ্ধে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিমকে বুড়িচংয়ে সমাহিত

বুড়িচং প্রতিনিধিঃ করোনাযুদ্ধে পুলিশে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে (৩৯) কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়েছে। ...

Leave a Reply