ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ২৫ অক্টোবর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ.কে.এম ইকবাল আজাদের খুনের ঘটনায় আরো ৪জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ১জন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং অপর ৩জনকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো সরাইল সদরের সৈয়দটুলা গ্রামের হিরন মিয়ার পুত্র শরীফ-(২৭), একই গ্রামের আমির উদ্দিনের পুত্র নাসির উদ্দিন-(২৬), বড় দেওয়ানপাড়া গ্রামের মোঃ শাহআলমের পুত্র আলিফ-(২৩) ও যশোর জেলার বাবু মিয়া-(২৩)। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত বুধবার গভীর রাতে বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রাম থেকে শরীফ এবং নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে সরাইলের অরুয়াইল থেকে আলিফকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া গত বুধবার দুপুরে ঢাকার কমলাপুর এলাকা থেকে বাবু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত ৪জনকে আদালতে প্রেরন করা হয়। এনিয়ে এই মামলায় ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন ঘটনার রাতে গ্রেফতারকৃত মোকারম আলী সোহেলসহ ৪জনের ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য উপজেলা সদরে টহল দেয়। উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিল। নিহত ইকবাল আজাদের ছোট ভাই ও হত্যা মামলার বাদী এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজাদ বলেন, আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। কারণ যারা আমার বাবাকে খুন করেছিল তারা আমার ভাইয়ের খুনের সাথেও জড়িত। তারা যে কোন সময় আবারও কিছু করতে পারে। তবে পুলিশ জানায়, প্রয়াত এ.কে.এম ইকবাল আজাদের বাড়িতে একজন এস.আইসহ ৬ জন পুলিশ মোতায়েন আছে। পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ বলেন, আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তাদেরকে গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছি। আসামীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশ সহ পুলিশের কয়েকটি দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
পিতা হত্যার বিচার হয়নি বলেই ছেলে খুন : ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সরাইল সদর ইউপির জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং নিহত ইকবাল আজাদের পিতা আবদুল খালেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত আবদুল খালেকের বড় মেয়ে নুরজাহান বেগম বলেন, আমার পিতার হত্যাকারীদের যদি বিচার হতো, তাহলে ছোট ভাই আজাদ এমন নৃশংসভাবে খুন হতো না। তিনি বলেন, সেই সময়ে পিতা হত্যার বিচার আমরা ভালোভাবে চাইতে পারিনি।
এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড : আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদের হত্যাকান্ডকে পরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ। তিনি বলেন, ইকবালের ওপর হামলা ও আঘাতের ধরন দেখে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমরা আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের কয়েকটি খন্ড খন্ড টিমকে মাঠে নামিয়েছি।
মামলা নেয়া হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে : ইকবাল আজাদের হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার কথা জানালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, এটি একটি ‘চাঞ্চল্যকর’ হত্যাকান্ড।
পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ : ঘটনার শুরু থেকেই থানাপুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এলাকাবাসীর। উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বেলায়েত হোসেন মিল্লাত ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শের আলম বলেন, ওইদিন উপজেলা সদরে সকাল থেকেই মাহফুজ আলীসহ অন্যরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। থানার ওসি গিয়াস উদ্দিনকে এ বিষয়টি বারবার জানালেও তিনি তাদের নিবৃত্ত করেননি। তারা আগাম ঘোষণা দিয়ে থানা কম্পাউন্ডের ১০০ গজের মধ্যে প্রকাশ্যে ইকবাল আজাদকে খুন করলেও অজানা কারণে পুলিশ এগিয়ে আসেনি।
আরিফুল ইসলাম সুমন